সম্পাদকীয় ১

অমৃতস্য কন্যাঃ

নাবালিকা বিবাহের প্রতিরোধ নাবালিকা বাহিনীরই মিত্রতা আকাঙ্ক্ষা করিয়াছে। এই মেয়েদের বয়ঃক্রম চৌদ্দ হইতে আঠারো বৎসর, যে কোনও সভ্য দেশে যে সময়টিকে কৈশোর বলিয়া যত্ন করিবার কথা। আইনমতে ভারতেও তাহাই প্রত্যাশিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০০:০৪
Share:

হতভাগ্য সেই দেশ যেখানে শিশুরাও জানিয়া গিয়াছে, শৈশবকে বাঁচাইতে হইলে তাহাদের নিজেদেরই সংগ্রামে নামিতে হইবে। সদ্যশ্রুত ‘বিশ্বশ্রী’ প্রকল্প যতই স্বাগত হউক, এই অতি দুঃখজনক সত্যটিই তাহাতে স্পষ্ট হইল। এ রাজ্যের মালদহ প্রশাসন ছোট মেয়েদের লইয়া এই বিশ্বশ্রী বাহিনী গঠন করিয়াছে। নাবালিকা বিবাহের প্রতিরোধ নাবালিকা বাহিনীরই মিত্রতা আকাঙ্ক্ষা করিয়াছে। এই মেয়েদের বয়ঃক্রম চৌদ্দ হইতে আঠারো বৎসর, যে কোনও সভ্য দেশে যে সময়টিকে কৈশোর বলিয়া যত্ন করিবার কথা। আইনমতে ভারতেও তাহাই প্রত্যাশিত। কিন্তু আইন ও সমাজের মধ্যে এ দেশে অসীম দূরত্ব, তাই আইন বলবৎ করিতে ছোট মেয়েদের নিজেদেরই আগাইয়া আসিতে হয়। প্রশাসন তাহাদের কাজে লাগাইতেছে উপায়ান্তরবিহীন ভাবে, কেননা পরিবারের মধ্যে নিভৃতে কন্যাসন্তানটিকে লইয়া কী করা হইতেছে, বেশির ভাগ সময়ই তাহা প্রশাসনের কর্ণগোচর হয় না। বহু ক্ষেত্রে পুলিশ বা প্রশাসন খবর পাইবার আগেই বিবাহ সমাপ্ত হইয়া যায়, এমনকী নামমাত্র বিবাহের মাধ্যমে কন্যাপাচারের বন্দোবস্তও পাকা হইয়া যায়। নানা জেলায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সক্রিয় হইলেও তাহাদের কাছেও খবর আসা একটি দুরূহ বিষয়। নিষ্করুণ, নির্দয় সমাজের হাত হইতে কন্যাসন্তানদের রক্ষা করিবার কাজটি আজ প্রায় দুই শতক ধরিয়া চলিতেছে, আরও কত দিন চালাইতে হইবে তাহার ইয়ত্তা নাই। অতএব সমানে নূতন নূতন প্রক্রিয়া প্রকরণের উদ্ভব।

Advertisement

হয়তো পুরা ‘নূতন’ বলা যায় না। সম ধরনের উদ্যোগ আগেও দেখা গিয়াছে। জেলার বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রীদের সচেতন করা হইয়াছে, যাহাতে সহপাঠিনীদের অনুপস্থিতি দেখিলেই তাহারা খবর সংগ্রহ করে, বিবাহ নামক উদ্যোগের গন্ধ পাইলে চটপট পুলিশকে জানায়। মালদহে সেই পূর্বপরিচিত পদ্ধতিটিকেই স্পষ্ট আকার দেওয়া হইল। সুসংবাদ, কেননা উদ্যোগটি যে প্রশাসনের দিক হইতে আসিতেছে, ইহা প্রতিষ্ঠিত হইলে মেয়েগুলিও নিরাপদ হইবে। অনেক ক্ষেত্রেই নাবালিকা-সংক্রান্ত বিষয়ে অপরাধচক্রগুলি অতিমাত্রায় সক্রিয় বলিয়া বিপদের আশঙ্কা বেশি। সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে বিপদ অনেক বেশি। এই সব ক্ষেত্রে প্রশাসন ও অপরাধচক্র মুখোমখি যুযুধান দাঁড়ানো দরকার, তবেই মাঝখানের সাহায্যকারী মানুষগুলি নিরাপদ বোধ করিবে।

সচেতনতা প্রসারেও কিন্তু প্রশাসনের অনেক কিছু করিবার আছে। যেমন, কন্যাশ্রী প্রকল্পের জয়জয়কার হইলেও কন্যাশ্রীর মূল উদ্দেশ্যটি কিন্তু তত প্রচারিত হয় নাই। আইনমতে বয়ঃপ্রাপ্তির আগে মেয়েদের বিবাহ দেওয়া যে গুরু অপরাধের পর্যায়ে পড়ে, জেলায় কি সেই সচেতনতা অনেক বাড়ানো উচিত ছিল না? ইহা কি কেবলই টাকা পাইবার একটি অতিরিক্ত প্রকল্প মাত্র, না ইহাতে একটি বড় সামাজিক অঙ্গীকার আছে? কন্যাশ্রীর সাফল্যধন্য পশ্চিমবঙ্গ জানিতে চায়, নাবালিকা বিবাহ আদৌ কমিয়াছে কি না, নাবালিকাদের স্কুলছুট হইবার প্রবণতা কমিয়াছে কি না, তাহাদের স্কুলশিক্ষা সমাপনের হার বাড়িয়াছে কি না। বিশ্বশ্রী প্রকল্পটির ক্ষেত্রেও জানিবার আগ্রহ থাকিবে, জেলার প্রতিটি ব্লকে এই বাহিনী সক্রিয় হইতেছে কি না, কন্যাপাচারে প্রতিরোধ সম্ভব হইতেছে কি না, ইত্যাদি। রাজ্যের সমগ্র কন্যাসমাজের মুখ চাহিয়া কেবল প্রকল্প ঘোষণা নয়, প্রকল্প-সংক্রান্ত বিশদ তথ্য চাই।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন