সম্পাদকীয় ২

এবং ভয়

অভিভাবকরা শুনিলেন, কেবল অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটি মিটিং এবং একটি পরীক্ষা যাহাতে পিছাইয়া যায়, সেই জন্য একটি ছাত্রকে হত্যা করিয়া ফেলিয়াছে তাহার সিনিয়র দাদা!

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৬
Share:

স্কুলের শিশুটির হত্যার সংবাদ পাইয়া সমগ্র দেশের লোক ভয়ে হিম হইয়া গিয়াছিলেন। নিজের সন্তানকে কেমন করিয়া স্কুলে পাঠাইবেন, ভাবিতে যাইলে তীব্র ভয় আসিয়া তাঁহাদের কণ্ঠ টিপিয়া ধরিতেছিল। স্কুলবাসে তুলিয়া দিয়া তাঁহারা যে নিশ্চিন্ত থাকেন, তাহা কিসের ভরসায়? স্কুলের বাথরুমে শিশু যখন যাইতেছে বা মাঠে খেলিতেছে, তাহারা যে নিরাপদে রহিয়াছে, সে বিশ্বাস তাঁহারা রাখিতেছেন কিসের ভিত্তিতে? ছাত্র বা ছাত্রী যখন স্কুলের দায়িত্বে, তাহাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ করিবে, এই নির্ভর প্রতিটি অভিভাবকের থাকে। যদি ছাত্র স্কুলের বাথরুমে যাইলে তাহাকে কেহ বাহির হইতে আসিয়া হত্যা করিয়া চলিয়া যাইতে পারে, তবে সেই স্কুল কেমন করিয়া নিজ দায়িত্ব পালন করিতেছে? ভয় চাপিয়া ধরে: ইহা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নহে, হয়তো অধিকাংশ স্কুল এমনই অযত্ন ও অমনোযোগেই পরিচালিত। অব্যবস্থাকে চুনকাম করিয়া অভিভাবকদের চোখে ধুলা দেওয়া হইতেছে। তাহার পর ভয় করে ওই কন্ডাক্টরের কথা ভাবিয়া, যে একটি সাত বৎসরের শিশুকে যৌন নিগ্রহ করিতে চাহিতে পারে ও বাধা পাওয়ামাত্র গলা কাটিয়া দিতে পারে। যদি বা ধরিয়া লওয়া হয়, এই নির্দিষ্ট মানুষটি অস্বাভাবিক, অপরাধপ্রবণ, তবে ভদ্রলোকের ছদ্মবেশে কত অপরাধপ্রবণ অমানুষ ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, এবং তাহাদের কত জনের হাতে প্রতি দিন নিজেকে বা সন্তানকে তুলিয়া দিতে হইতেছে, তাহাও ভয়াবহ।

Advertisement

কিন্তু তাহার পর যখন সিবিআই তদন্ত করিয়া জানায়, ওই বিদ্যালয়েরই একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র কাজটি করিয়াছে, ভয় বহু গুণ বাড়িয়া যায়। অভিভাবকরা শুনিলেন, কেবল অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটি মিটিং এবং একটি পরীক্ষা যাহাতে পিছাইয়া যায়, সেই জন্য একটি ছাত্রকে হত্যা করিয়া ফেলিয়াছে তাহার সিনিয়র দাদা! পূর্বে তাঁহারা যে আখ্যানটি শুনিয়াছিলেন, তাহাতে তবু কন্ডাক্টরটির এক উদ্দেশ্য ছিল, হত্যা না করিলে শিশুটি তাহার নাম কর্তৃপক্ষকে জানাইয়া দিতে পারিত। কিন্তু নূতন ঘটনা-নির্মাণে, সিনিয়র ছাত্রটি তো প্ররোচনা ব্যতীত শিশুটিকে খুন করিল! পরীক্ষায় ভয় অনেকেই পায়, যুগে যুগে ছাত্রছাত্রীরা এই ভয়ে বিনিদ্র রজনী যাপন করিয়াছে। কিন্তু তাহা বলিয়া স্কুল ছুটি করাইবার জন্য একটি প্রাণ হরণ করাকে কেহ সম্ভাব্য উপায় বলিয়া ভাবিতে পারে! ইহাও শুনা যাইল, এই ছাত্রটি নাকি বন্ধুদের পূর্বেই বলিয়াছিল, পরীক্ষা হইবে না। অর্থাৎ এই পরিকল্পনা সে সময় ধরিয়া করিয়াছিল, ইহা হয়তো মুহূর্তের উত্তেজনাবশে ঘটিয়া যাওয়া কাণ্ড নহে। তাহার পরে যে ভয় আসিয়া ঘিরিয়া ধরে: ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতার নামে এমন এক নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার জন্ম দেয় নাই তো, যাহার থাবা হইতে নিষ্কৃতি লাভের জন্য এক কিশোর এমনকী হত্যার কথা অবধি কল্পনা করিতে পারে! তবে কি উচ্চকাঙ্ক্ষী ভারতীয়রা (যাহাদের মধ্যে অভিভাবক নিজেকেও দেখিতে পাইতে পারেন মুহূর্তের জন্য) তাঁহাদের সন্তানদের প্রতি প্রত্যাশা ও তজ্জনিত বকুনি বা আবেগি অত্যাচারের চাপ এমন বাড়াইয়া দিয়াছেন যে এক ছাত্র পরোয়াহীন হইয়া তাহার ভ্রাতৃপ্রতিমের গলায় ছুরি চালাইতে দ্বিধা বোধ করিল না! তদন্তের হয়তো শেষ হইবে, কিন্তু এই ঘটনা কেন্দ্র করিয়া ভারতবাসীর ভয় শেষ হওয়া কঠিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন