Great Recession

অতিমন্দা?

বর্ণনাটি আশঙ্কাজনক ভাবে ভারতের সঙ্গে মিলিয়া যায়। নোট বাতিল এবং জিএসটির জোড়া ধাক্কায় ভারত আর্থিক মন্দার মুখে দাঁড়াইয়াই ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০১:৩৪
Share:

রিসেশন বা অর্থনৈতিক মন্দা নহে, এখন চোখ রাঙাইতেছে ডিপ্রেশন বা অতিমন্দার আশঙ্কা। দুই পরিস্থিতিতে ফারাক কোথায়? মন্দা যদি খাদ হয়, অতিমন্দা তবে সমুদ্রের অতল। তাহার শেষ কোথায়, কত দিনে, তাহা অজানা থাকাই অতিমন্দার ভয়ঙ্করতম দিক। অতিমন্দার কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নাই— কিন্তু, জাতীয় আয়ের পরিমাণ অন্তত দশ শতাংশ হ্রাস পাইলে তবেই পরিস্থিতিকে অতিমন্দা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। বিপুল বেকারত্ব, ব্যয়যোগ্য আয় হ্রাস, সবই অতিমন্দার অংশ। কোভিড-১৯’এর ধাক্কায় অতিমন্দার পরিস্থিতি সৃষ্টি হইতে পারে কি? এখনই নিশ্চিত করিয়া বলা মুশকিল। কারণ, কোভিড-১৯ কত ক্ষতিসাধনের পর থামিবে, তাহা অজ্ঞাত। কিন্তু আশঙ্কা, কিছু দেশের অর্থনীতি অতিমন্দার গহ্বরে পড়িতে পারে। যে দেশে আর্থিক পরিস্থিতি পূর্ব হইতেই টলমল; যে অর্থব্যবস্থার সিংহভাগ জুড়িয়া আছে অসংগঠিত ক্ষেত্র; যে দেশের নীতিনির্ধারকেরা অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত করিতেই অভ্যস্ত।

Advertisement

বর্ণনাটি আশঙ্কাজনক ভাবে ভারতের সঙ্গে মিলিয়া যায়। নোট বাতিল এবং জিএসটির জোড়া ধাক্কায় ভারত আর্থিক মন্দার মুখে দাঁড়াইয়াই ছিল। বাজারে চাহিদা তলানিতে ঠেকিয়াছিল, কর্মসংস্থানহীনতার হার অর্ধশতকের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাইয়াছিল। কোভিড-১৯’এর আক্রমণ ঘটিয়াছে এই অসুস্থ শরীরেই। তাহার উপর, ভারতীয় অর্থনীতির সিংহভাগই অসংগঠিত। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্বরক্ষাই হউক অথবা লকডাউন, প্রতিটি সিদ্ধান্তই অসংগঠিত ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলে। প্রভাবটি আরও মারাত্মক হইয়া উঠে অর্থনৈতিক অসাম্যের পরিপ্রেক্ষিতে। ভারতে আর্থিক অসাম্য ক্রমবর্ধমান। ফলে, জনসংখ্যার সিংহভাগের ক্রয়ক্ষমতা অতি সীমিত। কোভিড-১৯’এর কারণে যদি তাঁহাদের আয় আরও কমে, বা সাময়িক ভাবে বন্ধ হইয়া যায়, তবে সেই ক্রয়ক্ষমতা আরও কমিবে। প্রভাব পড়িবে তাঁহাদের পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের উপরও, ফলে ভবিষ্যতেও আয়-সম্ভাবনা হ্রাস পাইবে। জনসংখ্যার সিংহভাগের চাহিদা যদি তলানিতে ঠেকে, তবে বাজারের উপর তাহার প্রভাব ভয়ঙ্কর। করোনাভাইরাস বিদায় হইলেও বাজারের স্বাস্থ্য ফিরিবে না। বস্তুত, সেই বিপদের ইঙ্গিত মিলিতে আরম্ভ করিয়াছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিজ় ভারতের সম্ভাব্য আয়বৃদ্ধির হারকে ছাঁটিয়া ২.৫ শতাংশে নামাইয়াছে।

এই মন্দা শেষ অবধি অতিমন্দায় ঠেকিবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর বহুলাংশে নির্ভর করিতেছে দেশের নীতিনির্ধারকদের কুশলতার উপর। নির্মলা সীতারামন যে প্যাকেজ ঘোষণা করিয়াছেন, তাহা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, এবং বহুলাংশে অতিরঞ্জিত। আরও দুশ্চিন্তার বিষয়, ভারতীয় অর্থব্যবস্থার সিংহভাগ জুড়িয়া যে অসংগঠিত ক্ষেত্র এবং অদক্ষ শ্রমিকরা রহিয়াছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এবং তাঁহাদের কথা ভাবিয়া উঠিতে পারে নাই। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোনও ব্যবস্থা হয় নাই। লকডাউনের ফলে যাঁহারা রুজিরুটি হারাইতেছেন, তাঁহাদের ভবিতব্য কী, সে বিষয়েও কোনও স্পষ্ট চিন্তা নাই। ফলে, করোনাভাইরাসের সুতীব্র কিন্তু সাময়িক বিপদটি বেশ কয়েকটি পথে ভারতীয় অর্থব্যববস্থার দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পরিণত হইতে পারে। এক, চাহিদার সমস্যা— কারণ, জনসংখ্যার সিংহভাগের আয় যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে চাহিদা মার খাইতে বাধ্য; দুই, শ্রমের সমস্যা— বর্তমান বিপন্নতায় আশঙ্কিত হইয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা যদি গ্রাম ছাড়িতে ভয় পান, তবে শিল্পক্ষেত্রে শ্রমের অভাব ঘটিবে, ফলে জোগানের সমস্যা হইবে; তিন, মূল্যস্ফীতি— বিশেষত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাইবার পর, অত্যাবশ্যক সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না করিতে পারিলে দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি ঘটিতে পারে। কোনওটিই সুসংবাদ নহে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন