Gurmehar Kaur

প্রশ্নগুলো তুলেই দিলেন শহিদকন্যা গুরমেহের

দেশপ্রেমের উচ্চকিত নিনাদ এবং জাতীয়তাবাদের জিগির যাদের অস্তিত্বঘোষণার প্রধান স্তম্ভ, তারা যে হঠাত্ অপ্রত্যাশিত প্রান্ত থেকে এই ভাবে আক্রমণের মুখে পড়বে, তা বোধহয় কেউই কল্পনা করে উঠতে পারেননি।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৬
Share:

দেশপ্রেমের উচ্চকিত নিনাদ এবং জাতীয়তাবাদের জিগির যাদের অস্তিত্বঘোষণার প্রধান স্তম্ভ, তারা যে হঠাত্ অপ্রত্যাশিত প্রান্ত থেকে এই ভাবে আক্রমণের মুখে পড়বে, তা বোধহয় কেউই কল্পনা করে উঠতে পারেননি। কার্গিল শহিদের কন্যার এক ফেসবুক পোস্ট সপাটে এসে পড়েছে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের উপরে। ‘আই অ্যাম নট অ্যাফ্রেড অব এবিভিপি’!

Advertisement

কোনও এক নাগরিকের কোনও এক পোস্ট হিসাবেই যাকে দেখা যেতে পারত, তাকে এত গুরুত্ব দেওয়া কেন? কেন ভাইরাল হয়ে গেল এই পোস্ট? তার এক ও একমাত্র কারণ, দেশ বা দেশ সংক্রান্ত ভাবনা অথবা দেশপ্রেমের সংজ্ঞার ঠিকা এবিভিপি অথবা গৈরিক শিবিরের অনেকেই নিজেরাই নিতে শুরু করেছে। সেই ভাবনাও মূলত একরৈখিক, সেই সংজ্ঞার অভিমুখও তীক্ষ্ণ ও নির্দিষ্ট। দেশপ্রেমের অর্থ প্রতিবেশী মুসলিম দেশটির প্রতি যথাসম্ভব বিদ্বেষপ্রকাশ অথবা ঘৃণার সদম্ভ ঘোষণা। সূক্ষ্ম বিভাজনের কাজটি সুচারু ভাবে সম্পন্ন করার এই প্রস্তুতির বহিরঙ্গে যে হেতু জাতীয়তাবাদের ছটা লাগিয়ে দেওয়া হয়, তাই প্রশ্ন তোলা কঠিন হয় নাগরিকের পক্ষে। সেনাবাহিনীর কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন হয়, কঠিন হয় দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলাও। প্রশ্ন তুললেই তিনি দেশদ্রোহী। দেশপ্রেমের নামে স্বাধীন চিন্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর নির্লজ্জ হামলা চলে যখন তখন, যেখানে সেখানে এবং সদম্ভে।

ঠিক এই প্রশ্নগুলোই সূর্যের তলায় এনে দিলেন গুরমেহের কৌর। দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজের ছাত্রী। আরও পরিচয়, কার্গিল যুদ্ধের শহিদ ক্যাপ্টেন মনদীপ সিংহের কন্যা। পিতৃহারা যে মেয়ে তাঁর মায়ের কাছে শিখেছিল একেবারে শৈশবেই, পাকিস্তান নয়, শত্রু হচ্ছে যুদ্ধ— যার কারণে তার বাবাকে হারিয়েছে সে। এই মেয়ে সটান দাঁড়িয়ে গেলেন এবিভিপি-র বিরুদ্ধে! এবং বললেন, স্বাধীন চিন্তা, নৈতিকতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর হামলা চালাচ্ছে এই ছাত্র সংগঠন!

Advertisement

কী উত্তর আসবে এ বার? উমর খলিদকে দেশদ্রোহী তকমা দিয়ে যে তাণ্ডব চালানো যায় রামজস কলেজে, সেই তকমা শহিদকন্যাকে দেওয়া যাবে? বিদ্বেষ ও বিভাজনের আপাতসহজ পথে এগোতে গিয়ে বুঝতে সক্ষম হবে কি তারা, পথটি আপাতদৃষ্টিতে সহজ লাগলেও বস্তুত নয়? এই দেশ বহু ধর্ম, বহু মত, বহু স্বরের যে সংস্কৃতিকে লালন করে এসেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সেখানে এই বিভাজনপথের শেষে ফুল অপেক্ষা করবে না। শহিদকন্যার এই পোস্ট হিমশৈলের চূড়া মাত্র। গণতন্ত্রের ঘাঁটিটিও দুর্ভেদ্য ও দুর্জয়। দুর্বৃত্তেরা সাবধান!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন