Yogi Adityanath

পাঁচ দিন যদি পাঁচ বছরের প্রতীক হয়, সাধুবাদই পাবেন সাধু

পাঁচ বছর সময় রয়েছে তাঁর হাতে। কিন্তু পাঁচ দিনেই একটা স্পষ্ট ছবি তুলে ধরার পথ নিলেন। গৌরচন্দ্রিকা বা আলাপ নয়, নিজের শাসনকালের সারকথাটা খুব সংক্ষেপে এবং ততোধিক সংক্ষিপ্ত সময়ে সপাটে ও মুখের উপর বলে দেওয়ার চেষ্টা করলেন যেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০৪:৩১
Share:

পাঁচ বছর সময় রয়েছে তাঁর হাতে। কিন্তু পাঁচ দিনেই একটা স্পষ্ট ছবি তুলে ধরার পথ নিলেন। গৌরচন্দ্রিকা বা আলাপ নয়, নিজের শাসনকালের সারকথাটা খুব সংক্ষেপে এবং ততোধিক সংক্ষিপ্ত সময়ে সপাটে ও মুখের উপর বলে দেওয়ার চেষ্টা করলেন যেন।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রথম পাঁচ দিনে মূলত পাঁচটা কথা বলেছেন যোগী আদিত্যনাথ।

প্রথমত, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনও আপোস নয়, রাজ্যের সর্বত্র আইনের শাসন সুনিশ্চিত হবে।

Advertisement

দ্বিতীয়ত, উত্তরপ্রদেশের কোথাও অবৈধ কসাইখানা চলতে দেওয়া হবে না।

তৃতীয়ত, গরু পাচার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে।

চতুর্থত, পরিচ্ছন্নতা তথা পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে প্রত্যেক নাগরিককে ভাবতে হবে।

পঞ্চমত, নারীর সম্মান রক্ষায় পুলিশ-প্রশাসনের সক্রিয়তা বাড়বে।

অর্থাৎ, উত্তরপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত এমন কোনও পদক্ষেপ করেননি, যাকে কট্টরবাদী বা ধর্মনিরপেক্ষতার বিপ্রতীপ বা বিদ্বেষভাবাপন্ন আখ্যা দেওয়া চলে। সরকারি দফতর পরিদর্শনে গিয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে পানের পিক দেখেছেন, বরদাস্ত করবেন না বলে জানিয়েছেন, প্লাস্টিক থলে ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছেন। বিএসপি নেতার খুনের খবর পেয়েই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য পুলিশকে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন। রাস্তাঘাটে মেয়েদের হেনস্থা রুখতে অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াডকে পথে নামিয়ে দিয়েছেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানে গতি আনতে প্রত্যেক মন্ত্রীকে আলাদা করে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন। এক মন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঝাড়ু হাতে নিজের দফতর সাফ করতে নেমে সাড়া ফেলে দিয়েছেন।

টুকরো টুকরো ছবিগুলো জুড়ে যদি কোলাজ বানানো যায়, তা হলে এক যুদ্ধ শুরুর দৃশ্যপট তৈরি হয়— যাবতীয় অপরিচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু, যাবতীয় আবর্জনা নিঃশেষে ঝেড়ে ফেলার অভিযান শুরু।

সঙ্ঘীয় এজেন্ডার রূপায়ণেও তৎপরতা রয়েছে— ক্ষমতায় এসেই সর্বাগ্রে গরু পাচার বন্ধ করা বা অবৈধ কসাইখানা বন্ধ করার মতো গো-রক্ষা সংক্রান্ত পদক্ষেপ থেকে তা স্পষ্ট। কিন্তু এই দুই পদক্ষেপের বিরোধিতা করাও কারও পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ গরু পাচার বা অবৈধ কসাইখানা আইনের চোখেও অপরাধমূলক।

যাবতীয় আবর্জনা দূরে সরাতে ঝাড়ু হাতে তুলে নিয়েছেন আদিত্যনাথরা— এই ছবিটা যদি আগামী দিনগুলোতেও উত্তরপ্রদেশে সরকারি ক্রিয়াকলাপের সমার্থক হয়েই থেকে যায়, তা হলে গৈরিক-বসন সাধুর জন্য আগাম সাধুবাদ রইল। কিন্তু গো-রক্ষার নামে আইন হাতে তুলে নেওয়া, গোমাংস বিক্রেতার বৈধ ব্যবসাকেও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া, এমনও কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ঘটেছে গত কয়েক দিনে। এই অতি উৎসাহ এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা কিন্তু ভয়ঙ্কর, এ চেষ্টা ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ভারতের ধারণার সঙ্গে মানানসই নয়। যোগী কি পারবেন অঙ্কুরেই এই প্রবণতার বিনাশ ঘটাতে? আসল পরীক্ষাটা কিন্তু সেখানেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন