কাবুলকণ্টক

ভারতের প্রভাব তত ক্ষীণ হইতে থাকিবে। ইদানীং ভারতের বিদেশনীতি বহুলাংশে তমসাচ্ছন্ন। আফগানিস্তানের সরকারের সহিত দিল্লির সম্পর্ক এ অবধি ভাল। তালিবান পুনর্জাগরণে তাহার উপরেও ছায়া ঘনঘোর। আপাতত জল মাপিবার তাড়নায় আফগানিস্তানের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক কর্তাদের সহিত নিয়মিত যোগাযোগ রাখিতেছে ভারত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

—ছবি রয়টার্স।

বিগত বৎসরের উপান্তে আফগানিস্তান হইতে আংশিক সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখনই আশঙ্কা হইয়াছিল, জমি পোক্ত করিতে পারে তালিবান জঙ্গিরা। এবং সেই পথ মসৃণতর করিয়া তালিবানদের সহিত শান্তিচুক্তির খসড়া তৈয়ারিতে সম্মত হইয়াছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। ইহাতে ভারতের আশঙ্কার বিলক্ষণ কারণ আছে। আফগান জমিতে তালিবানদের ক্ষমতা যত বাড়িবে,

Advertisement

ভারতের প্রভাব তত ক্ষীণ হইতে থাকিবে। ইদানীং ভারতের বিদেশনীতি বহুলাংশে তমসাচ্ছন্ন। আফগানিস্তানের সরকারের সহিত দিল্লির সম্পর্ক এ অবধি ভাল। তালিবান পুনর্জাগরণে তাহার উপরেও ছায়া ঘনঘোর। আপাতত জল মাপিবার তাড়নায় আফগানিস্তানের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক কর্তাদের সহিত নিয়মিত যোগাযোগ রাখিতেছে ভারত। যে আঞ্চলিক শক্তিগুলি আফগানিস্তানের সুস্থিতির পক্ষে, সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চলিতেছে তাহাদের সহিতও। এবং আপন দেশের ভবিষ্যৎ লইয়া ভারতের পরামর্শ প্রার্থনা করিয়াছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজ়াইয়ের ন্যায় ‘ভারতবন্ধু’রা।

কিন্তু এই শান্তিচুক্তিতে ভারতের স্থান কার্যত শূন্য। অতএব, আমেরিকার সেনা প্রত্যর্পণ ও তালিবানদের গুরুত্ববৃদ্ধিতেও তাহাদের নীরব দর্শক ব্যতীত ভূমিকা নাই। তালিবান কিংবা আমেরিকা, কেহই আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের নিমিত্ত ভারতকে গুরুত্ব দেয় না। ট্রাম্প স্বকীয় ভঙ্গিতে ব্যঙ্গোক্তি করিয়াছেন: গ্রন্থাগার নির্মাণ ব্যতীত আফগানদের জন্য কী করিয়াছে ভারত! সুতরাং, এই মুহূর্তে কেবল বৈঠক নহে, কাবুলে সক্রিয় ভূমিকা লইতে না পারিলে ভারতের বিদেশ নীতিতে একাধিক নূতন ক্ষত দেখা দিবে। প্রথমত, আল কায়দা-সহ অপর জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি আফগানিস্তানকে ব্যবহার করিয়া অন্যত্র সক্রিয় হইবার চেষ্টা করিবে। দ্বিতীয়ত, জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে দখল লইতে তৎপর হইতে পারে রাশিয়া। সিরিয়ায় সদ্য আইএস নিধন করা রুশ সেনারা এই দায়িত্বে অভিজ্ঞও বটে। তৃতীয়ত, আফগান সীমান্ত (যাহা ‘ডুরান্ড লাইন’ নামে পরিচিত) বরাবর জঙ্গিদের পুনর্বাসন দিবার ব্যাপারে সচেষ্ট হইতে পারে পাকিস্তান।

Advertisement

তৃতীয় বিষয়টিই ভারতের পক্ষে সর্বাধিক চিন্তার। দীর্ঘ দিন ধরিয়া পাকিস্তানের দাবি, আফগানিস্তানে রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা থাকিবে না। তবু, পরিকাঠামো পুনর্গঠনে কাবুলকে নিরন্তর সাহায্য করিয়াছে ভারত। ভবিষ্যতে সেই পথ মসৃণ করিতে হইলে পাকিস্তানের গতিবিধি সম্পর্কে অধিক সজাগ থাকিতে হইবে নয়াদিল্লিকে। মার্কিন বাহিনী সরিয়া যাইবার পরে যদি ভারতের ভূমিকা খর্ব করিবার চেষ্টা করে ইসলামাবাদ, তবে যেন সঙ্কটে না পড়িতে হয়— ইহাই প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। মলদ্বীপ কিংবা শ্রীলঙ্কায় চিন যখন ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ, তখন আফগানিস্তানে আপন অবস্থান ধরিয়া রাখা জরুরি। কারণ যে কোনও বৃহৎ শক্তি দক্ষিণ এশিয়ার পুরাতন রণাঙ্গনটিকে আপন পেশিশক্তি প্রদর্শনের আখড়ায় পরিণত করিবার চেষ্টা করিতেই পারে। অতএব, সতেরো বৎসর গঠনমূলক মিত্রের দায়িত্ব পালনের পর ভারতের সামনে নূতন আফগান চ্যালেঞ্জ উপস্থিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন