India

সিন্ধু সৌজন্যে তিক্ত অভিজ্ঞতার পথ পেরিয়ে মরূদ্যানে পৌঁছনোর চেষ্টা

ছিল ধু ধু প্রান্তর, শুধুই মরুবালুরাশি। তার উত্তাপ কখনও বেড়ে যায়, কখনও একটু কমে। কিন্তু জলের দেখা মেলে না, স্বস্তিও আসে না। দীর্ঘ সাত মাস পর একটু স্বস্তির আশা জাগিয়ে আকাশে জলভরা মেঘ জমছে যেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ছিল ধু ধু প্রান্তর, শুধুই মরুবালুরাশি। তার উত্তাপ কখনও বেড়ে যায়, কখনও একটু কমে। কিন্তু জলের দেখা মেলে না, স্বস্তিও আসে না। দীর্ঘ সাত মাস পর একটু স্বস্তির আশা জাগিয়ে আকাশে জলভরা মেঘ জমছে যেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মরুভূমি একটু হলেও ভিজতে পারে আসন্ন সে বর্ষণে। এই জলভরা মেঘের সৌজন্যে কিন্তু সিন্ধু নদ।

Advertisement

উত্তাল কাশ্মীর, পাকিস্তানের দিক থেকে প্ররোচনা আসার অভিযোগ, উরির সেনা ছাউনিতে জঙ্গি হামলা, পাল্টা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক— ভারত-পাক সম্পর্ক খাদে চলে গিয়েছিল এ সবের জেরে। ন্যূনতম রুটিন কূটনৈতিক সংযোগের বাইরে যাবতীয় কথোকথন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায়। দুই প্রতিবেশীই জানে, আলোচনা বন্ধ থাকলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। কিন্তু আলোচনা বা কথোপকথনের পরিস্থিতি অনেকাংশেই ছিল না। অবশেষে সিন্ধু চুক্তি তথা জলবণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য ফের কথোপকথন শুরু হতে চলেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পাক প্রতিনিধিরা ভারতে আসছেন। তাই সিন্ধুর বাষ্পায়িত জল মেঘ হয়ে উঠে সম্পর্কের মরুভূমিকে সামান্য হলেও ভেজাতে চলেছে, এমন বললে অত্যুক্তি হয় না মোটেই।

তিক্ততা ছিল, তিক্ততার কারণও যথেষ্টই ছিল। অকপট হতে হলে মেনে নিতে হয় যে তিক্ততা এখনও রয়েছে। কিন্ত নেতি কখনও চূড়ান্ত হতে পারে না, নেতিকে চূড়ান্ত হিসেবে মেনে নেওয়াও যায় না। তাই তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই পথ খুঁজে নিয়ে মরূদ্যানে পৌঁছনোর চেষ্টা করতে হবে ভারত-পাকিস্তানকে।

Advertisement

কথা যে শুরু হবে অচিরেই, সে ইঙ্গিত সম্প্রতি মিলছিল। ইসলামাবাদের কিছু পদক্ষেপ এবং দিল্লির কিছু সংযম বুঝিয়ে দিচ্ছিল বেলাইন ট্রেনটাকে আবার ট্র্যাকে ফেরানোর তোড়জোড় হচ্ছে। ট্র্যাকে ফেরার পর ট্রেন কোন দিকে ছুটবে, দ্রুত ছুটবে না ঝিমিয়ে থাকবে, সে প্রশ্ন থাকছেই। কিন্তু ভারত-পাক সম্পর্কের রেলগাড়িটিকে ফের সচল করতে হলে তাকে বেলাইন দশা থেকে ফের ট্র্যাকে ফেরানোই যে প্রথম ও প্রধান শর্ত, তা সকলেই বোঝেন।

দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সাম্প্রতিক অতীতে তিক্ততা এত বেড়েছিল যে শুধু দুই রাষ্ট্রযন্ত্রের বাগ্‌যুদ্ধের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ ছিল না। গোলা-বারুদে উত্তপ্ত ছিল সীমান্ত। উত্তপ্ত ছিল সাধারণ নাগরিকের ভাবাবেগও। কিন্তু দুই রাষ্ট্রের নেতারা যে দায়িত্বশীলতার পাঠটা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হননি, তা আবার স্পষ্ট হয়ে গেল। নির্বাচনী রাজনীতির ময়দানে যখন থাকেন এই নেতৃবর্গ, তখন তাঁদের কণ্ঠ থেকে বিদ্বেষ ঝরে ঠিকই। ভারতে পাকিস্তান-বিরোধিতা এবং পাকিস্তানে ভারত-বিরোধিতা যে অনেক রাজনীতিকের কাছেই তুরুপের তাস হয়ে ওঠে, সে কথাও অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু রাষ্ট্রের হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সেই নেতারা যে ধরনের দায়িত্বশীলতার ছাপ রাখলেন, তার প্রশংসা করতেই হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন