সম্পাদকীয় ২

রিপ ভ্যান উইঙ্ক্‌ল

আন্তর্জাতিক লগ্নির পরিসরটি কী ভাবে পাল্টাইয়া যাইতেছে, তাহা যদি ফ্লিপকার্ট-ওয়ালমার্ট পর্বের একটি দিক হয়, অন্য দিক তবে ফ্লিপকার্ট নামক সংস্থাটির উত্থান।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ০০:২৪
Share:

স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের কর্তারা কি রিপ ভ্যান উইঙ্ক্‌ল-এর গল্পটি পড়িয়াছেন? বিদেশি গল্প, কাজেই প্রশ্নটিকে সন্তর্পণে পেশ করাই শ্রেয়। বিশ বৎসর দীর্ঘ ঘুমের চোটে ভ্যান উইঙ্ক্‌ল আমেরিকার বিপ্লবটাই ফস্কাইয়াছিল। ঘুম ভাঙিবার পর গাঁয়ে ফিরিয়া বৃদ্ধ দেখিলেন, সকলই বেবাক অচেনা, এমনকী রাজা তৃতীয় জর্জের ছবিটি অবধি নাই, তাহার বদলে শোভা পাইতেছেন জনৈক জর্জ ওয়াশিংটন। জাগরণ মঞ্চের কর্তারা প্রশ্ন করিতে পারেন, হঠাৎ এই দুই শতাব্দীপ্রাচীন গল্পটি উত্থাপনের হেতু কী? হেতু তাঁহারাই জোগাইয়াছেন। ‘খিড়কির দরজা দিয়া’ ওয়ালমার্টের ভারতে প্রবেশের বিরুদ্ধে তাঁহারা প্রধানমন্ত্রীর নিকট যে নালিশ ঠুকিয়াছেন, তাহাতে সন্দেহ হয়, জাগরণ মঞ্চ সদ্য নিদ্রোত্থিত। একবিংশ শতকের দুনিয়াটি তাঁহাদের বিলকুল অপরিচিত। বিদেশি লগ্নির নাম শুনিলেই তাঁহারা, অথবা এ কে গোপালন ভবনের জায়গিরদাররা, যে ভঙ্গিতে ‘চলিতেছে না, চলিবে না’ রবে ঝাঁপাইয়া পড়িতেন, তাহা এই পৃথিবীতে অবান্তর। তাহার সর্বাপেক্ষা বড় কারণ, এই দুনিয়ায় পুঁজির উপস্থিতি আর শারীরিক নহে। ভারতের বাজারে ঢুকিতে ওয়ালমার্টের আর ইট-পাথরের দোকানের প্রয়োজন নাই, অনলাইনের অ-বাস্তব দুনিয়াতেই দেড় হাজার কোটি ডলারের লগ্নি সম্ভব। ধরনা দিতে চাহিলেও দিবেন কোথায়? এবং, এই বিভ্রান্তিতেই তাঁহারা খেয়াল করিলেন না, একটি ইতিহাস রচিত হইল। এক দশকে একটি ভারতীয় স্টার্ট-আপের মূল্য দুই হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাইয়াছে, এমন ঘটনা প্রতি দিন ঘটে না। নরেন্দ্র মোদী স-ছাতি ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’র গুণগান করিলেও নহে।

Advertisement

আন্তর্জাতিক লগ্নির পরিসরটি কী ভাবে পাল্টাইয়া যাইতেছে, তাহা যদি ফ্লিপকার্ট-ওয়ালমার্ট পর্বের একটি দিক হয়, অন্য দিক তবে ফ্লিপকার্ট নামক সংস্থাটির উত্থান। বেঙ্গালুরুর দুইটি ঘর হইতে যাত্রা শুরু করিয়া এক দশকে যে বিপুল ব্যবসার অধিকারী হইয়াছে সংস্থাটি, তাহাতে কয়েকটি কথা স্পষ্ট। এক, যথেষ্ট উদ্ভাবনী শক্তি থাকিলে কোনও ভারতীয় সংস্থার পক্ষেও একেবারে শূন্য হইতে শুরু করিয়াও আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্র হইয়া উঠা সম্ভব। দুই, প্রযুক্তির আরও বিস্তার হইলে ও তাহার ব্যয় কমিয়া আসিলে ভারতীয় ই-বাণিজ্যের বাজারের বৃদ্ধির সম্ভাবনা এখনও বিপুল। এবং তিন, কোনও স্টার্ট-আপের সাফল্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সাহায্য’ অত্যাবশ্যকীয় নহে। বস্তুত, সরকারি সাহায্যের ধারণাটিই বিগত শতাব্দীর। ফ্লিপকার্টের উদাহরণটি দেখাইয়াছে, কোনও স্টার্ট-আপের যদি সম্ভাবনা থাকে, তবে তাহা বাজার হইতেই লগ্নি জোগাড় করিতে পারে। ওয়ালমার্টের লগ্নির পূর্বেও ইয়েস ব্যাঙ্ক-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার লগ্নি টানিতে সফল হইয়াছিল ফ্লিপকার্ট। উদাহরণটি হইতে শিক্ষণীয়, নূতন সংস্থাগুলি যাহাতে সরকারি লাল ফিতার ফাঁসে জড়াইয়া না যায়, পুঁজির ব্যবস্থা করিবার পথে যাহাতে অনর্থক বাধা তৈরি না হয়, সরকার শুধু সেটুকু নিশ্চিত করিলেই যথেষ্ট হয়। এবং, রাজনীতিকরা যদি আরও একটি কথা বুঝিয়া লন, তাহা হইলে মঙ্গল— পুঁজির পথে বাধা হইয়া দাঁড়ানো কার্যত অসম্ভব। ওয়ালমার্ট মাল্টি-ব্র্যান্ড রিটেলে ঢুকিতে পারে নাই, ই-বাণিজ্যে লগ্নি করিয়াছে। প্রথম রাস্তাটি খুলিয়া দিলে দীর্ঘমেয়াদে ভারতীয় অর্থনীতির অধিকতর লাভ হইত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement