Internet

একই অস্ত্রে

আপন জ্ঞানজগতের উন্মোচন ও অগ্রগমনের নিমিত্ত বিজ্ঞান চলিবে, ইহা স্বাভাবিক। সেই স্থানে নৈতিকতার প্রশ্নটি অপ্রাসঙ্গিক। তবে তাহার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্নকে অস্বীকার করিবার উপায় নাই। যাহার জন্য নূতন সৃষ্টি, তাহাকেই যদি ধ্বংস করিয়া দেওয়া হয়, তবে সেই সৃষ্টি অর্থহীন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০৪
Share:

সমানাধিকারের চ্যালেঞ্জ। ছবি: এএফপি।

আপন সৃষ্টি লইয়া ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ন্যায় হতাশ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর সৃষ্টিকর্তা স্যর টিম বার্নার্স-লি। ইন্টারনেটে উপস্থিত যাবতীয় সম্পদ ও ব্যবহারকারীর সমাহার এই বিশ্বজোড়া জাল। ১৯৮৯ সালে জাল প্রতিষ্ঠার কালে সমানাধিকারের ধারণাটিই টিমের নিকট প্রাধান্য পাইয়াছিল— তথ্যভাণ্ডার যদি সমগ্রের ভিতর পরিবেশিত হয়, তবে তাহা মানবসভ্যতার কল্যাণসাধন করিতে সক্ষম। যে কোনও বস্তুই সমগ্রের ভিতর ছড়াইয়া পড়িলে তাহার অসাধু ব্যবহার হইতে থাকে। বজ্র আঁটুনি থাকিলেও ফস্কা গেরো অন্বেষণ করিয়া লওয়া অসম্ভব নহে। এই রন্ধ্রপথেই যখন বহু মানুষের তথ্য হরণের বৃত্তান্তগুলি বারংবার শিরোনামে উঠিয়া আসিতে লাগিল, তখনই মানবকে দানব বলিয়া আখ্যায়িত করিলেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের সহিত উহার পার্থক্য হইল, ব্যবহার কিংবা ক্ষতিসাধন, ইন্টারনেটের ক্ষেত্র সর্বজনীন। কল্পবিজ্ঞান কাহিনিতে সাম্য-মৈত্রীর ন্যায় আদর্শ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা উপস্থিত ছিল না। সুতরাং টিমের সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠিবে, বিজ্ঞানকে ব্যবহারের অভিমুখটি কী হইতে পারে?

Advertisement

আপন জ্ঞানজগতের উন্মোচন ও অগ্রগমনের নিমিত্ত বিজ্ঞান চলিবে, ইহা স্বাভাবিক। সেই স্থানে নৈতিকতার প্রশ্নটি অপ্রাসঙ্গিক। তবে তাহার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্নকে অস্বীকার করিবার উপায় নাই। যাহার জন্য নূতন সৃষ্টি, তাহাকেই যদি ধ্বংস করিয়া দেওয়া হয়, তবে সেই সৃষ্টি অর্থহীন। জোরালো উদাহরণ হইতে পারে জার্মান রসায়নবিদ তথা পারমাণবিক রসায়নের জনক অটো হানের ক্রন্দন। নিউক্লিয়ার ফিশন আবিষ্কার করিয়া ১৯৪৪ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হইয়াছিলেন। সেই প্রযুক্তির সহায়তায় যখন বোমা বানাইয়া ধ্বংস করিয়া দেওয়া হইল জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহর, তখন গবেষণাগারে বসিয়া ক্রন্দনরত অটো হান বলিয়াছিলেন, জাপানের লক্ষ মৃত মানুষের রক্তে রঞ্জিত হইয়াছে তাঁহার দুই বাহু। তিনি রুখিতে পারেন নাই। তবে, শক্তিমানেরা যাহাতে জনসাধারণের অধিকার কাড়িয়া লইতে না পারে, তাই নূতন অ্যাপ বানাইয়া প্রতিরোধের পথ প্রস্তুত করিতেছেন টিম।

বস্তুত, অন্যায়কে বধ করিতে হইবে তাহার অস্ত্রেই। যে বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে কাজে লাগাইয়া তথ্যের অপব্যবহার করা হইতেছে, তাহাকে আরও অগ্রসর করিয়া তুলিয়া উহাকে রোধ করিতে হইবে। তথ্যহরণ হইতেছে বলিয়া ইন্টারনেটের ন্যায় ব্যবস্থাকে অস্বীকার করা চলে না। বিকল্প এবং ত্রুটিমুক্ত প্রক্রিয়া গড়িয়া লওয়াই উপযুক্ত উপায়। ইহাও স্মরণে রাখা আবশ্যক যে সাম্যের কল্পনাটি অলীক— শক্তির অপব্যবহার মানুষের ধর্ম। পরমাণু বোমার ন্যায় যে বস্তু সাধারণের নিকট লভ্য নহে, তাহাই ক্ষতিকর কার্য সমাধা করিয়াছে, এবং সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রতিনিয়ত ক্ষতি করিতেছে। এই বিশ্বে সাম্য প্রতিষ্ঠার বৃহৎ প্রথম পরীক্ষাটি ব্যর্থ হইয়াছিল সোভিয়েত দেশে। সর্বশেষ পরীক্ষাটি ব্যর্থ হইল বিশ্বজনীন ভার্চুয়াল জগতে। তবে, আপন সৃষ্টির পতন দেখিবার সৌভাগ্য হইয়াছে টিমের। শূন্য হইতে পরিকল্পনা শুরু করিবার উৎসাহ পাইয়াছেন তিনি, যাহা বৃহত্তর অর্থে বিজ্ঞানেরই লাভ। সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা যখন অসম্ভব, তখন বিজ্ঞানের জোরেই প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে সকলের অধিকার।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন