শিক্ষা হয়েছে কিয়ৎ, পুরোপুরি হয়নি

এশিয়ার ‘হৃদয়’কে নিয়ে চর্চাই ছিল এ সম্মেলনের মূল উপজীব্য। আচরণগত ভারসাম্যের প্রশ্নে আয়োজক ভারতের ছবি এ বার অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল অবশ্যই। কিন্তু ব্রিকস সম্মেলনে পাওয়া শিক্ষা পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম হয়েছে কি না বোঝা গেল না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০১
Share:

অমৃতসরে ‘হার্ট অব এশিয়া’ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

এশিয়ার ‘হৃদয়’কে নিয়ে চর্চাই ছিল এ সম্মেলনের মূল উপজীব্য। আচরণগত ভারসাম্যের প্রশ্নে আয়োজক ভারতের ছবি এ বার অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল অবশ্যই। কিন্তু ব্রিকস সম্মেলনে পাওয়া শিক্ষা পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম হয়েছে কি না বোঝা গেল না।

Advertisement

সন্ত্রাস অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এশিয়ার বৃহৎ বিস্তারে ছড়িয়ে পড়েছে তার জাল, বুনট আরও নিবিড় হতে চাইছে রোজ। এই জাল কাটতে অস্ত্র যে শানিয়ে নিতে হবে দ্রুত, সে নিয়ে সংশয় অল্পই। কিন্তু উপযুক্ত অস্ত্র হিসেবে কোনটিকে বেছে নেওয়া উচিত, তা নিয়ে বিভ্রান্তি বিস্তর।

বিভ্রান্তি ছিল বলেই গোয়ায় আয়োজিত ব্রিকস শিখর সম্মেলনে মুখ পুড়েছিল ভারতের। পাঁচ দেশের মধ্যে মূলত বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত সংগঠনের মঞ্চে যে ভাবে প্রধান ইস্যু করে তোলা হয়েছিল সন্ত্রাসকে এবং যে ভাবে পাকিস্তান বিরোধী সুর তুঙ্গে তুলেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তা ভাল চোখে দেখেননি অন্য রাষ্ট্রপ্রধানরা। ফলে সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের সুরে সুর মেলাতে সে সম্মেলনে প্রায় কেউই রাজি হননি। অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে দাঁড়াতে হয়েছিল নয়াদিল্লিকে।

Advertisement

আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনে ভারতের ভূমিকা কিন্তু আর সে রকম নয়। সন্ত্রাস প্রশ্নে মন্তব্য রইল, কিন্তু তাকে ঘিরে রইল ভারসাম্যের মোড়ক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্ঘোষ রইল, তবে পাকিস্তানের নাম সরাসরি জড়ানোর পথে আর হাঁটলেন না তিনি অমৃতসরে।

প্রতীত হল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ব্রিকসের ভুল থেকে কিয়ৎ শিক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্নও রয়ে গেল— শিক্ষা কতটা নিয়েছেন? পুরোপুরি নিতে পেরেছেন কি?

অমৃতসরে আয়োজিত এই সম্মেলন শুধুমাত্র আফগানিস্তান-কেন্দ্রিক। দীর্ঘ যুদ্ধে দীর্ণ হয়ে পড়া রাষ্ট্রটির পুনর্গঠনে প্রতিবেশী, হিতাকাঙ্খী ও মিত্র দেশগুলির ভূমিকা নির্ধারণের মঞ্চ এটি। সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানকে নিশানায় রাখার চেষ্টা করা কি এ মঞ্চেও ভারতের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত? সম্ভবত উচিত নয়। কিন্তু তাই হল। প্রচ্ছন্ন ভাবে হলেও, এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও নরেন্দ্র মোদীদের অংশগ্রহণের মূল অভিমুখ পাক-বিরোধিতায় নিবদ্ধ রইল।

আবার বলছি, সন্ত্রাস সমসাময়িক কালের খুব বড় এক বিপদ। তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। কিন্তু রুখে দাঁড়ানোর উপযুক্ত কৌশলটাও রচনা করতে হবে। যে অস্ত্র সামনে মিলবে, তা-ই তুলে নিয়ে সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া হবে— মোকাবিলার উপযুক্ত নীতি কিছুতেই তা হতে পারে না। ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ এক শক্তির যাবতীয় আন্তর্জাতিক বক্তব্য শুধু সন্ত্রাস-কেন্দ্রিক আর পাকিস্তান-কেন্দ্রিক হতে পারে না। সন্ত্রাস ব্যতিরেকে অন্যান্য বৃহৎ আন্তর্জাতিক বিষয়েও ভারতের মতামত আজকের পৃথিবীতে তাৎপর্যের। সে সব ভুলে সব মঞ্চেই আলোচনার কেন্দ্রে সন্ত্রাসকে তুলে আনার চেষ্টা করলে ভারতের অবস্থান তো লঘু হয়ই। উপরন্তু অতি ব্যবহারে পাক-বিরোধী অস্ত্রটিও ধার হারায়।

তা হলে কী করণীয়? ভারত কি আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাস প্রসঙ্গ উত্থাপন করবে না? নিশ্চয়ই করবে, করতেই হবে। কিন্তু উপযুক্ত মঞ্চে, যে কোনও মঞ্চে নয়। উপযুক্ত মঞ্চের অভাব অনুভূত হয় যদি, মঞ্চ গড়ে নিতে হবে। পথ বানিয়েই পথ হাঁটতে হবে। সফল কূটনীতির পরিচয় সে দিনই মিলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন