সম্পাদকীয় ২

অতঃপর

সাম্প্রতিক কালে আধারের তথ্য ফাঁস হওয়া বিষয়ে যতগুলি অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহার সহিত এই ভিআইডি চালু করিবার সিদ্ধান্তটিকে মিলাইয়া দেখিলে স্পষ্ট, আধার কর্তৃপক্ষের তরফে ইহা ভুল স্বীকার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৭
Share:

স‌ংবাদমাধ্যমে যে দিন ফাঁস হইল যে মাত্র পাঁচ শত টাকা খরচ করিলেই আধার-এর দরজা চিচিং ফাঁক হইতে পারে, এবং বহু কোটি মানুষের যাবতীয় তথ্যের নাগাল পাওয়া যায়, তাহার অব্যবহিত পরেই জানা গেল, আধার তথ্যের নিরাপত্তা বাড়িতেছে। পয়লা মার্চ হইতে ভার্চুয়াল আইডেন্টিফিকেশনের (ভিআইডি) ব্যবস্থা চালু হইবে। সমাপতন? আপাতত সেই উত্তর খুঁজিবার প্রয়োজন নাই। ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি-র ন্যায় ভিআইডি ব্যবস্থা তথ্যের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অতি জরুরি পদক্ষেপ। কোনও সংস্থার নিকট আত্মপরিচয় প্রমাণ করিতে হইলেই তাহার হাতে নিজের আধার নম্বরের সহিত যুক্ত যাবতীয় তথ্য তুলিয়া দিতেই হইবে— এমন বিচিত্র ও মারাত্মক ব্যবস্থা হইতে নিস্তার পাওয়া প্রয়োজন ছিল। অতঃপর, ভিআইডি-র মাধ্যমে পরিচয় প্রমাণের কাজটি হইবে। যে সংস্থার নিকট লিমিটেড বা সীমাবদ্ধ কেওয়াইসি জমা করিলেই চলিবে, তাহার নিকট যাবতীয় তথ্য উজা়ড় করিয়া দেওয়ার আর প্রয়োজন নাই। ভিআইডি কী ভাবে কাজ করিবে, এক বার সৃষ্টি করা হইলে তাহার মেয়াদ কত দিনের, এই প্রশ্নগুলির এখনও কোনও স্পষ্ট উত্তর নাই। যে দেশে শহরের সীমা ছাড়াইলেই ইন্টারনেট সংযোগ কার্যত মুখ থুবড়াইয়া পড়ে, যেখানে ডিজিটাল সাক্ষরতার হার অত্যল্প, সেখানে এই নূতন পদ্ধতি মানুষকে নূতনতর সমস্যায় ফেলিবে কি না, এই প্রশ্নগুলিও থাকিতেছে। কিন্তু, আধারের জট হইতে হইতে নিস্তারের জন্য ভিন্নতর উপায়ও আর নাই।

Advertisement

সাম্প্রতিক কালে আধারের তথ্য ফাঁস হওয়া বিষয়ে যতগুলি অভিযোগ উঠিয়াছে, তাহার সহিত এই ভিআইডি চালু করিবার সিদ্ধান্তটিকে মিলাইয়া দেখিলে স্পষ্ট, আধার কর্তৃপক্ষের তরফে ইহা ভুল স্বীকার। বলিয়া দেওয়া যে সত্যই আধারের তথ্যভাণ্ডারটি নিরাপদ নহে। প্রশ্ন উঠিবেই, কেন্দ্রীয় সরকার এবং আধার কর্তৃপক্ষ কি জানে না যে এই তথ্য কতখানি মূল্যবান? বস্তুত, আধারে কোনও এক জন মানুষ বিষয়ে যতখানি তথ্য জমা থাকে, তাহার মাধ্যমে সেই ব্যক্তিটির পুনর্গঠন সম্ভব। অর্থাৎ, কেহ চাহিলে এই তথ্যের মাধ্যমে অন্য কোনও মানুষের অস্তিত্বটি হাতাইয়া লইতে পারেন— রামা কৈবর্ত চাহিলে রহিম শেখের পরিচয় ভাঁড়াইয়া যাবতীয় দুষ্কর্ম করিয়া তাহার দায়টি রহিমের ঘাড়ে চাপাইয়া দিতে পারেন। কোন অধিকারে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের একশত কোটিরও বেশি মানুষের পরিচয় লইয়া এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন হইতে পারে যাহাতে কার্যত যে কেহ এই তথ্য চুরি করিতে সক্ষম? আরও প্রস্তুত হইয়া, সম্ভাব্য বিপদগুলি ঠেকাইবার ব্যবস্থা করিয়া তবেই কি এই তথ্য সংগ্রহের ও ব্যবহারের কাজে হাত দেওয়া উচিত ছিল না? প্রশ্ন আরও থাকিতেছে। ভিআইডি চালু হইলে না হয় আর প্রতিটি সংস্থাকে নিজের যাবতীয় তথ্য জানাইতে হইবে না। কিন্তু, এত দিন মোবাইল ফোন হইতে বেসরকারি ব্যাঙ্ক অবধি যে অসংখ্য সংস্থার হাতে মানুষ বাধ্য হইয়া নিজেদের যাবতীয় তথ্য তুলিয়া দিয়াছে— বস্তুত, এই মুহূর্তে এলপিজি-র জন্য ডিলারের অফিসে আধার জমা করিতে হইতেছে, নচেৎ গ্যাস বুকিং বন্ধ— সেই তথ্যের কী হইবে? কোন মন্ত্রে সরকার তাহার সম্ভাব্য অপব্যবহার বন্ধ করিবে? কর্তাদের নিকট উত্তর থাকিবে না। অবিবেচনাকে যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা দুষ্কর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন