পর্বতপ্রমাণ

অপ্রতুল প্রশিক্ষণ লইয়াও মূলত শেরপাদের ভরসায় আগে হইতে বাঁধিয়া রাখা দড়ির কল্যাণে পর্বতশীর্ষে আরোহণ দস্তুর হইয়া উঠিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০০:৪৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

জর্জ ম্যালোরিকে একদা প্রশ্ন করা হইয়াছিল, মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে উঠিতে চাহেন কেন? ম্যালোরি এক বাক্যে উত্তর দিয়াছিলেন: বিকজ় ইট ইজ় দেয়ার। পর্বতশৃঙ্গটি আছে বলিয়াই। সর্বকালের সব পর্বতারোহীর মনের কথাটি বলিয়া দিয়াছিলেন ম্যালোরি। আকাশ ফুঁড়িয়া সুগম্ভীর দম্ভে দাঁড়াইয়া আছে পর্বতশৃঙ্গ, তাহার শীর্ষে আরোহণ করিবার বাসনা ঠিক সেই কারণেই। গত শতকেই মানুষের জেদের নিকট হার স্বীকার করিয়াছে পর্বতরাজি। মানিয়া লইয়াছে, মাউন্ট এভারেস্ট হউক বা কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাউন্ট গডউইন অস্টিন, ধৌলগিরি— মানুষের কিছুই অজেয় থাকিবে না। তবে, পাহাড় হারিয়াছে বটে, সহজ হয় নাই। পাহাড় এখনও গাফিলতি মার্জনা করে না। তাহার শাস্তি সুকঠিন। সম্প্রতি কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানে জোড়া প্রাণহানির দুঃখজনক সংবাদ ফের এক বার কথাটি স্মরণ করাইয়া দিল। সাড়ে আট হাজার মিটার উচ্চতায় ঠিক কী ঘটিয়াছে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকাই স্বাভাবিক। বাঁচিয়া ফেরা দুই অভিযাত্রী আর সেই অভিযানের সংগঠক সংস্থার বয়ানেও বিস্তর ফারাক। কিন্তু, অতীতের একাধিক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বর্তমান ঘটনাক্রমকে দেখিলে সংশয় হয়, ঘোর গাফিলতি ছিল। পাহাড়ে এ হেন গাফিলতির ক্ষমা নাই। প্রাণের মূল্যে মাসুল দিলেন বিপ্লব বৈদ্য ও কুন্তল কাঁড়ার।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই গাফিলতির চরিত্র বুঝিতে গেলে অন্তত তিন দশক পিছাইয়া যাইতে হইবে। গ্যারি বল ও রব হল নামক দুই পর্বতারোহীর কথা উল্লেখ করিতে হইবে। মূলত তাঁহাদের হাত ধরিয়াই পর্বতারোহণ ক্রমে কনডাক্টেড টুরে পরিণত হইয়াছে। অপ্রতুল প্রশিক্ষণ লইয়াও মূলত শেরপাদের ভরসায় আগে হইতে বাঁধিয়া রাখা দড়ির কল্যাণে পর্বতশীর্ষে আরোহণ দস্তুর হইয়া উঠিয়াছে। তাহার ফল কতখানি বিপজ্জনক হইতে পারে, ১৯৯৬ সালের এভারেস্ট দুর্ঘটনা সেই কথা জানাইয়া দিয়াছিল। কিন্তু, মানুষ কান দেয় নাই। পর্বতারোহণের চরিত্র বদলাইয়া গিয়াছে। এখন আর শৃঙ্গজয় ততখানি গুরুত্ব পায় না, যত ক্ষণ না কোনও দুরূহ পথে বা কঠিন পন্থায় অভিযানটি সমাপ্ত হইতেছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা বা নাঙ্গা পর্বতের মাহাত্ম্য সেখানেই— এই পর্বতগুলি দুর্গম। সেই অভিযানে যাইবার পূর্বে বিপুল প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, মহার্ঘ সরঞ্জাম জরুরি, অতি দক্ষ শেরপা নিয়োগ করা বিধেয়। প্রতিটি কাজই ব্যয়বহুল। এখানেই ভারতীয় পর্বতারোহীরা সমস্যায় পড়েন। পশ্চিমবঙ্গের পর্বতারোহী মহলে কান পাতিলেই শোনা যাইবে, কী ভাবে অভিযানের জন্য ঋণ করিয়া, ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেচিয়া টাকার জোগাড় করিতে হয়। যেখানে টাকার এমনই অকুলান, সেখানে প্রতিটি ধাপেই খরচ বাঁচাইবার বাধ্যবাধকতা আসিয়া পড়ে। যথেষ্ট প্রশিক্ষণ লইবার উপায় থাকে না। আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াইতে তৃতীয় ও চতুর্থ ক্যাম্পে যত সময় কাটানোর প্রয়োজন, তাহার অংশমাত্র সময় থাকা সম্ভব হয়। অভিজ্ঞ শেরপাও পাওয়া কঠিন হয়। অভিজ্ঞজনেরা বলিয়া থাকেন, ইউরোপ-আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়া-নিউজ়িল্যান্ডের অভিযাত্রীরা যে এজেন্সির নিকট যান, তাহা অধিকাংশ ভারতীয়র নাগালের বাহিরে। পর্বতে এই খামতিগুলি মারাত্মক হইয়া দাঁড়ায়। একের পর এক আট হাজারি শৃঙ্গ জয়ের এই উন্মাদনা ভুলিয়া ভারতীয় আরোহীরা কি পাহাড়কে সম্মান করিবার প্রাচীন অভ্যাসটিকে

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement