প্রতীকী ছবি।
রাষ্ট্র এবং নাগরিকের সম্পর্কে কিছু লিখিত ও কিছু অলিখিত বিষয় থেকে থাকে যার উপরে দাঁড়িয়ে থাকে সার্বিক সুষ্ঠু ব্যবস্থা। এতই সুবিন্যস্ত সেই সম্পর্ক, ন্যূনতম স্বধর্মচ্যুতি, তা যে কোনও পক্ষেই হোক না কেন, সামগ্রিক স্তম্ভকে বিনাশ করার ক্ষমতা রাখে। এবং মনে রাখা দরকার গোটা এই ব্যবস্থাটাই ব্যক্তি নাগরিকের সুষ্ঠু জীবনযাপনের স্বার্থে।
পারস্পরিক আস্থার এই ভিত যদি এক বার টলে যায় গণতন্ত্রের জন্য তা স্বস্তিদায়ক নয়। ধরে নেওয়া যাক না কেন কলকাতার সাম্প্রতিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কেলেঙ্কারির কথাই। নাগরিক বহু শ্রম এবং ঘামের বিনিময়ে যা কিছু উপার্জন করেন, মনে রাখতে হবে তার একটা অংশ তিনি রাষ্ট্রের তহবিলে জমা দেন রাষ্ট্র নির্মাণেই, চূড়ান্ত ভাবে যা ব্যক্তির জীবনকেই আরও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করে তুলতে পারে। এ হেন পরিস্থিতিতে আমার গচ্ছিত টাকা রাষ্ট্রের নির্ধারিত সিন্দুকে আমি রাখি, ক্রমাগত কমতে থাকা সুদের হার সত্ত্বেও, শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সুবন্দোবস্তের কথা মাথায় রেখেই। আচমকা এক সকালে উঠে যদি জানতে পারি, সেই রাজকোষে চুরি হয়ে গিয়েছে, সর্বস্বান্ত হয়েছি আমি, তার দায় নেবে কে? এ কথা ঠিক, কলকাতার সাম্প্রতিক ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারিতে টাকা ফেরত দিচ্ছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ত্রুটির দায়ভার নিয়ে প্রাথমিক এই পরিমার্জনার চেষ্টা নিন্দার্হ, এ কথা দুর্জনেও বলবে না। কিন্তু আস্থা এবং বিশ্বাসের ভিত্তিটা যে ভাবে টলে গেল তার মেরামতি সম্ভব কী ভাবে? রাষ্ট্রের সিন্দুকে আমার অর্থ সুরক্ষিত, রাষ্ট্রের হেফাজতে আমি নিরাপদ, এই বোধ যদি এক বার টলে যায়, তা সামগ্রিক ভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক, এ কথা কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি?
গভীর ভাবে ভাবার সময় এসে দাঁড়িয়েছে। নাইজিরীয় অথবা রোমানীয় কোনও চক্র দিল্লিতে বসে কলকাতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে পারলে, হলিউড-বলিউডের চিত্রনাট্যকে লজ্জা দিয়ে আর কোন সিন্দুকে হাত বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে সেটা আমাদের বোঝা দরকার।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
রাষ্ট্রের বোঝা দরকার, সন্ত্রস্ত নাগরিককে আশ্বস্ত করার দায় তার। আমরা আশা করব, রাষ্ট্র তার কর্তব্যচ্যুত হবে না।
আরও পড়ুন: এটিএম কাণ্ডে নাম জড়াল প্রাক্তন কর্নেলের! রোমানীয়দের নেপাল সফর নিয়ে তদন্ত