এটিএম প্রতারণ কাণ্ডে ধৃত দুই রোমানীয়কে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
এটিএম জালিয়াতি কাণ্ডে নাম জড়াল এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেলের। তিনি এখন তিহাড় জেলে বন্দি। পুলিশি জেরায় ধৃত দুই রোমানীয় দিমিত্রু ক্যালিন এবং ওপরিয়া ওভিদিউ সিমিয়ন এমনই দাবি করেছে। তারা জানিয়েছে, এই কর্নেল তাদের দলে ছিলেন। দু’জনেই পর্যটন ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। শুধু ভারতেই নয়, তারা ঘনঘন বিভিন্ন দেশে সফর করত। গত জুন ও জুলাই মাসে তারা গিয়েছিল নেপালে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, সেখানেও একটি রোমানীয় গ্যাং সক্রিয় রয়েছে।
ক্যালিন রোমানিয়ায় একটি অটো মোবাইল সংস্থায় কাজ করত। সিমিয়নের তেমন কোনও কাজ ছিল না। পর্যটন ভিসার নিয়ে বিভিন্ন দেশে ঢুকে তারা এভাবেই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির জাল বিস্তার করত। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা, পটনা, ভুবনেশ্বর, রাজস্থানের ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের ক্লোন করা কার্ড।
পার্ক স্ট্রিট থানার পিএনবি ব্যাঙ্কের অভিযোগের ভিত্তিতে দিল্লি থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। শনিবার ধৃতদের দিল্লি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত দেন বিচারক। সরকারি আইনজীবী বিচারকের কাছে আবেদন করেন, ধৃতেরা ব্যাঙ্ক প্রতারণা ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তাদের হেফাজতে পেলে এ ব্যাপারে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) দিল্লিতে গিয়ে নজরদারি চালাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির মুনিরকা এলাকায় একটি মিষ্টির দোকানের পাশে ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার এটিএম কাউন্টারে ঢোকার সময় ওই দু’জনকে আটক করেসিট।দিল্লির যে বাড়িতে ওই দুই যুবক উঠেছিল সেখান থেকে জাল পাসপোর্ট, প্রচুর ক্লোনিং করা কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ। শুধু এই দু’জন নয়, এই জালিয়াতির শিকড় যে অনেক গভীরে তা আঁচ করতে পারছে তদন্তকারী দলটি।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটিএম জালিয়াতির মতো সাইবার অপরাধগুলির সঙ্গে নাইজেরিয়ান গ্যাং জড়িত থাকার ঘটনা আগে সামনে এসেছে। দেশে জুড়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে রাখত তারা। বিশেষ করে দেশের বড় শহরগুলোতে এদের কারবার চলত। কলকাতায় বিভিন্ন ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণায় এই প্রথম রোমানীয় গ্যাঙের হদিশ পেল পুলিশ।
আরও পড়ুন: এটিএম জালিয়াতির তদন্তে আটক রোমানিয়ার দুই যুবক
পুলিশ জানিয়েছে, দিল্লি, কেরল, বেঙ্গালুরু, মু্ম্বইয়ে স্কিমার বসিয়ে এটিএমগুলি থেকে টাকা আত্মসাৎ আগেই করেছিল এই দলটি। এ বার টার্গেট ছিল কলকাতা। তিন মাস আগে থেকে এ শহরে ঘাঁটি গেড়েছিলতারা। কসবায় একটি হোটেল ভাড়া করে থাকছিল তারা। মাঠে নামার আগে শহরের বিভিন্ন এটিএমে রেইকি করে তারা। মূলত নিরাপত্তাহীন এটিএমগুলিকেই টার্গেট করেছিল এই দলটি।সেই এটিএমগুলিতে স্কিমার লাগিয়ে গত তিন মাস ধরে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করেছিল তারা। তারপর দিল্লিতে চলে যায় ওই দুই যুবক। হাতিয়ে নেওয়া তথ্যগুলো থেকে ক্লোন এটিএম কার্ড তৈরি করে। তার পর ওই কার্ডের সাহায্যে দিল্লি থেকেই কলকাতার গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করছিল।
আরও পড়ুন: লুকিয়ে ভয়ঙ্কর বিপদ, এটিএমে টাকা তোলার আগে এগুলি খেয়াল রাখুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy