Paris Agreement

প্রত্যাবর্তন?

আমেরিকার ইতিহাস বলিতেছে, রিচার্ড নিক্সন ব্যতীত অন্য প্রেসিডেন্টরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশ্নে খুব বেশি সক্রিয় ভূমিকা লন নাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

—ছবি রয়টার্স।

হোয়াইট হাউস হইতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায় পাকা হইবার দিনকয়েক পূর্বেই জানা গেল, আমেরিকার প্যারিস চুক্তি ছাড়িবার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হইয়াছে। ট্রাম্পের মতে, চুক্তির শর্তগুলি একপেশে, শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী এবং আমেরিকার অর্থনীতিকে ধ্বংস করিবার পরিকল্পনামাত্র। সুতরাং, অবিলম্বে আমেরিকার সরিয়া আসা প্রয়োজন। আমেরিকাই একমাত্র দেশ, যাহা প্যারিস চুক্তি হইতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় লইয়াছে। দিনকয়েকের মধ্যেই পট পরিবর্তন— প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন জানাইলেন, তিনি প্যারিস চুক্তিতে পুনরায় যোগদানে বদ্ধপরিকর। চুক্তির শর্ত মানিয়া ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামাইয়া আনিবার পরিকল্পনাও জানাইয়াছেন। ইতিমধ্যেই পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব কর্ম সৃষ্টিতে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি রদ সংক্রান্ত নানাবিধ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে। তিনি নিজ দলে বিশেষ জলবায়ু-দূত হিসাবে জন কেরিকে লইতে ইচ্ছুক। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির রূপদানে কেরির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আশা জাগে, ট্রাম্প-জমানার পরিবেশ-ঔদ্ধত্যের দিন ফুরাইল।

Advertisement

তবে, ট্রাম্প একা নহেন— আমেরিকার ইতিহাস বলিতেছে, রিচার্ড নিক্সন ব্যতীত অন্য প্রেসিডেন্টরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশ্নে খুব বেশি সক্রিয় ভূমিকা লন নাই। ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কিয়োটো প্রোটোকল হইতে সরিয়া আসেন— উন্নত দেশগুলির উপর অত্যধিক বোঝা চাপানো হইতেছে, এই অভিযোগে। ব্যতিক্রম বারাক ওবামা। কিন্তু তাঁহার নেতৃত্বে প্যারিস চুক্তিতে আমেরিকা স্বাক্ষর করিয়াছিল তাঁহার মেয়াদকালের শেষের দিকে। এবং কার্বন নিঃসরণকারী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করিয়া ৩০ শতাংশ কার্বন দূষণ হ্রাস করিবার ওবামা প্রশাসনের পরিকল্পনাটি বহু বৃহৎ কোম্পানির সমর্থন লাভ করে নাই। এই কোম্পানিগুলির নীরবতা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি ও রিপাবলিকানদের যুগপৎ তীব্র আক্রমণের মুখে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল পলিসি অ্যাক্ট অনুযায়ী কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা কষ্টসাধ্য হইয়া পড়িয়াছিল। অর্থাৎ, ট্রাম্প-বর্ণিত শ্রমিক স্বার্থ নহে, প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ শিল্পপতিদের স্বার্থ বিঘ্নিত করিয়া জলবায়ু প্রশ্নে সদর্থক ভূমিকা পালন করা কোনও প্রেসিডেন্টের পক্ষে সম্ভব কি না, প্রশ্ন থাকিয়া যায়। বাইডেনকে আবার ইহার সঙ্গে কংগ্রেস ও সেনেটের বাধাও সামলাইতে হইবে।

জলবায়ু প্রশ্নে আমেরিকার আচরণ চিরকালই বখিয়া যাওয়া সন্তানের ন্যায়। কিয়োটো প্রোটোকল-নির্দিষ্ট ‘ঐতিহাসিক দায়িত্ব’ সে কখনও মানিতে চাহে নাই। অথচ, মাথা পিছু কার্বন নিঃসরণে বিশ্বে এক নম্বর স্থানটি ধরিয়া রাখিয়াছে, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যতে নামাইয়া আনিবার কোনও সুস্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে নাই। উপরন্তু ট্রাম্প জমানায় একগুচ্ছ পরিবেশ এবং কার্বন নিঃসরণ সংক্রান্ত নীতির উপর বুলডোজ়ার চালাইয়া অন্য দেশগুলির অনাস্থা অর্জন করিয়াছে। সুতরাং, পুনরায় চুক্তিতে প্রবেশ করিতে হইলে এবং জলবায়ু প্রশ্নে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হইলে আমেরিকাকে শূন্য হইতে শুরু করিতে হইবে। পূর্বের ন্যায় চুক্তির শর্তগুলিকে অনুকূলে নিয়ন্ত্রণ করা চলিবে না। এই পরিস্থিতিতে বাইডেন কতখানি ব্যতিক্রমী হইবেন, সময়ই বলিবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন