Editorial News

উপত্যকা আবার গুরুতর সন্ধিক্ষণে

সাড়ে তিন বছর জম্মু-কাশ্মীরে জোট সরকার চালিয়েছে পিডিপি-বিজেপি। এই সাড়ে তিন বছরে উপত্যকায় অখণ্ড শান্তি বহাল ছিল, এমন দাবি সদ্য প্রাক্তন সরকারটির মন্ত্রীরাও আশা করা যায় করবেন না।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০০:৩৬
Share:

জম্মু-কাশ্মীরে সাড়ে তিন বছরেই ভেঙে গেল পিডিপি-বিজেপি জোট। ফাইল চিত্র

সঙ্কট গভীর হওয়ার ইঙ্গিত এল উপত্যকা থেকে। এমনিতেই পরিস্থিতি সমস্যাসঙ্কুল ছিল। কিন্তু শাসক জোটের দুই শরিক সেই সমস্যার সমাধান খোঁজার ব্যাপারে সহমত হতে পারল না। ভেঙে গেল জোট, জম্মু-কাশ্মীরে পতন ঘটল মেহবুবা মুফতির নেতৃত্বাধীন পিডিপি-বিজেপি সরকারের।

Advertisement

সাড়ে তিন বছর জম্মু-কাশ্মীরে জোট সরকার চালিয়েছে পিডিপি-বিজেপি। এই সাড়ে তিন বছরে উপত্যকায় অখণ্ড শান্তি বহাল ছিল, এমন দাবি সদ্য প্রাক্তন সরকারটির মন্ত্রীরাও আশা করা যায় করবেন না। বিজেপি মনে করছে, সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগই উপত্যকায় শান্তি ফেরানোর একমাত্র পথ। কিন্তু পিডিপি বলপ্রয়োগের বিরোধী, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে। মতানৈক্যের জেরে বিবাদ বাড়ছিল সরকারের অন্দরে, অবশেষে অন্তর্দ্বন্দ্বেই ভেঙে গেল সরকার।

জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব শুধুমাত্র সে রাজ্যের সরকারের উপর ন্যস্ত নেই। সন্ত্রাস তথা বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ মূলত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া নীতির ভিত্তিতে। মেহবুবা মুফতির নেতৃত্বাধীন সরকার মোদী সরকারের দ্বারা নির্দিষ্ট নীতি মেনে চলতে আর রাজি হচ্ছিল না। অতএব অচলাবস্থা। অতএব উপত্যকা আপাতত রাজ্যপালের শাসনে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে উপত্যকায় শান্তি ফেরানোর যে নীতিতে মেহবুবা বিশ্বাসী, কেন্দ্রও যে সে নীতিতে বিশ্বাস রাখেনি, তা নয়। গত কয়েক বছরে কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনে উপত্যকায় বলপ্রয়োগ বেড়েছিল, সে কথা ঠিকই। সন্ত্রাসবাদী এবং নিরাপত্তাবাহিনী, দু’তরফেই হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে গত কয়েক বছরে। তবে কেন্দ্র শান্তিপূর্ণ সামাধানের বার্তাও দিয়েছে। রমজানের সময় উপত্যকায় সেনা অভিযান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই সুযোগ নিয়ে পাক-মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি উপত্যকায় প্রবল ভাবে বাড়ায় তত্পরতা। বাড়তে থাকে নাশকতা। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক হয়ে পড়ে যে, নয়াদিল্লিকে প্রায় মাঝপথেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়, ইদ মিটলেই ফের সেনা অভিযান শুরু হবে কাশ্মীরে। এই রকম এক সন্ধিক্ষণে জম্মু-কাশ্মীরে দুই শাসকদলের মধ্যে ঐক্যমত্য থাকা জরুরি ছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তা হল না।

আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে সরকার ছাড়ল বিজেপি, মেহবুবার ইস্তফা

রমজানে রক্তপাত বন্ধ রাখার যে নীতি কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করেছিল, তাতে মনে হয়েছিল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে এগতে পারে উপত্যকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রত্যাশিত পথে এগলো না ঘটনাপ্রবাহ। উপত্যকা আপাতত রাজ্যপালের শাসনে। কেন্দ্রের নির্দিষ্ট করে দেওয়া নীতি অনুসারেই জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন এ বার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে। বলপ্রয়োগ আরও বাড়বে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে ঘটনাক্রম। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার দুই বৃহত্তম দলের মতপার্থক্য অত্যন্ত প্রকট ভাবে সামনে চলে আসছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠার আশঙ্কা ঘনাচ্ছে সেই কারণে। ফের এক গুরুতর সন্ধিক্ষণে জম্মু-কাশ্মীর, গুরুতর সন্ধিক্ষণে ভারতও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন