State news

বিস্ময়কর অসংবেদনশীলতা!

সাধারণ বোধবুদ্ধিই যথেষ্ট। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষের আচরণ তাই দুর্বোধ্য ঠেকছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০০:৩৫
Share:

আমরণ অনশনে অনড় মেডিক্যালের ছাত্র-ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।

সরল, সাধারণ সত্যকে জটিল এবং অসাধারণ করে তুলে বোঝার চেষ্টা করা কোনও কাজের কথা নয়। এটুকু বোঝার জন্য মহান শাস্ত্রজ্ঞ বা বিশিষ্ট দার্শনিক বা সুদক্ষ প্রশাসক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ বোধবুদ্ধিই যথেষ্ট। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষের আচরণ তাই দুর্বোধ্য ঠেকছে।

Advertisement

একটানা অনশনে পড়ুয়ারা। দাবি ছাত্রাবাসের। আদৌ কোনও অযৌক্তিক বা অবান্তর দাবি কি? ছাত্ররা ছাত্রাবাসে জায়গা পেয়েছেন, এ এক ভয়ঙ্কর অদ্ভুত বিষয়, এমন চাহিদার কথা পৃথিবীতে কেউ কখনও শোনেননি— বিষয়টাতো আদৌ এরকম নয়। নানা প্রান্ত থেকে পড়তে আসেন ছেলেমেয়েরা, ছাত্রাবাস তো তাঁদের দিতেই হবে। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক কথা। এই স্বাভাবিক চাহিদাটি পূরণের জন্য মেডিক্যাল পড়ুয়াদের অনশনে বসতে হল এবং সে অনশন প্রায় দু’সপ্তাহ গড়িয়ে গেল, অস্বাভাবিক তো এটাই। একে একে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন অনশনরত পড়ুয়ারা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ এর পরে জবাব খুঁজে পাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে থাকবেন তো?

ডাক্তারি পড়ুয়াদের জন্য যে পুরনো ছাত্রাবাস রয়েছে, সেখানকার সার্বিক অব্যবস্থার যে সব খবর আসছে, তা সত্যি চোখ কপালে তোলার মতো। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব হোক বা অপদার্থ ব্যবস্থাপনা, পুরনো ছাত্রাবাসের অনেকটাই নাকি ব্যবহারের অযোগ্য। ফলে সে ছাত্রাবাসে সব পড়ুয়ার জন্য স্থান সংকুলানও হচ্ছিল না। ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে বলা হয়েছিল অনেককেই। নতুন ছাত্রাবাস ভবন তৈরি হয়ে গেলে আর ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে হবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি অনেকাংশেই ভেঙেছেন কর্তৃপক্ষ, অভিযোগ আন্দোলনরত পড়ুয়াদের। নতুন ছাত্রাবাস তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও ঘর পাচ্ছেন না যাঁরা, তাঁরা অনশনের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আন্দোলনরত পড়ুয়াদের দাবি একেবারে বুনিয়াদি পরিকাঠামোগত। ন্যূনতম যে পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করার কথা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের, সেইটুকু অন্তত করা হোক— দাবি এটুকুই। বৈধ দাবি, যৌক্তিক দাবি, ছাত্রাবাস পাওয়া ছাত্রদের অধিকার।

আরও পড়ুন: ‘প্রতীকী’ অনশন তুলতে বললেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা, মেডিক্যালে জটিলতা বাড়ছে

কিন্তু দুর্বোধ্য আচরণ কর্তৃপক্ষের। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে পড়ুয়ারা অনশনে রয়েছেন এবং তাঁদের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ জটিল হচ্ছে দেখেও গয়ংগচ্ছ ভঙ্গিতে নড়াচড়া চলছে। পড়ুয়াদের দাবি এতই সাধারণ যে, কলেজ কর্তৃপক্ষই তার নিষ্পত্তি ঘটাতে পারতেন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমে টালবাহানা চালিয়ে গেলেন, অনশন আন্দোলনের খবর ক্রমশ বিভিন্ন শিবিরের উদ্বেগ বাড়াতে থাকল, এবং বিষয়টি মেডিক্যাল কলেজের পাঁচিলের বাইরে বেরিয়ে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের দরবারে পৌঁছে গেল। পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘসূত্রি হয়ে উঠল যেন। অত্যন্ত সাধারণ একটি চাহিদা মেটানোর দাবি তুলে পড়ুয়ারা এতদিন একটানা অনশনে, কিন্তু বিভিন্ন স্তরের কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন রকম দিশাহীন কথাবার্তা বলে চলেছেন। কেউ বলছেন, আলোচনা করতে হবে, কেউ বলছেন রিপোর্ট চেয়েছি, কেউ বলছেন রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি, কেউ বলছেন আমার হাতে আর নেই, কেউ বলছেন যা করার নবান্ন করবে। থাকার জায়গা চেয়ে একদল পড়ুয়া দু’সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন, সবচেয়ে অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন করছেন, একটানা অনশনের জেরে একাধিক পড়ুয়ার শারীরিক পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে পড়েছে, তা সত্ত্বেও কলেজ কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের কোনও স্তরে যেন উদ্বেগের চিহ্ন মাত্র নেই। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর অসংবেদনশীলতা আর কী হতে পারে!

কলেজ কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন পড়ুয়াদের যেন প্রতিপক্ষ ভাবছে। আচরণ দেখে মনে হয়, শুধু প্রতিপক্ষ নয়, শত্রুপক্ষ ভাবছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার তরফ থেকে জারি করা প্রেস বিবৃতিতে আবার এই অনশন সম্পর্কে সংশয়ও প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে এই অনশনকে ‘প্রতীকী’ অনশন আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিস্ময়কর আচরণ! বাস্তবিক একটি সমস্যা, বারবার সমাধান চেয়েও না পেয়ে একদল পড়ুয়া অনশন শুরু করতে বাধ্য হলেন, পরিস্থিতির অবনতি হতে না দিয়ে সহানুভূতিশীল ভঙ্গিতে তৎক্ষণাৎ মিটিয়ে ফেলা যেতে পারত যে সমস্যা, তাকে অকারণে জটিল আকার নিতে দেওয়া হল। এবং তার পরেও সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কোনও আশ্বাস না দিয়ে অনশন প্রত্যাহার করতে বলা হল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি সঙ্কটের নিরশন আদৌ চাইছেন? নাকি ন্যায্য দাবিতে লড়তে থাকা একদল পড়ুয়ার সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে যে কোনও মূল্যে ‘জয়ের হাসি’ হাসতে চাইছেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখন এটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন