Editorial News

একটা মাত্র আবর্তনে বদলে যাক অনেক কিছু

দুটো তারিখের মধ্যে অনেকখানি ব্যবধান সঞ্চারিত হোক পৃথিবীর একটা মাত্র আবর্তনকে সাক্ষী রেখে, ১৪২৫-এর প্রথম সকালটায় অনেক কিছু নতুন আলোয় ধরা দিক, এমনই আকুতি সময়ের চোখে আজ।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪৩
Share:

পরশু বা গত কাল বা আজ ভোরে যে ভাবে উঠল সূর্যটা, আগামিকালও ঠিক সে ভাবেই উঠবে। খুব একটা এগিয়ে বা পিছিয়ে উঠবে না। সকালে জানালা দিয়ে যতখানি আলো এল ঘরে, আগামিকাল তার চেয়ে অনেক বেশি বা অনেক কম আসবে, এমনও বলতে পারি না। তবু অনেকটা ফারাক হয়ে যাবে দুই সকালের মাঝে। ২৪ ঘণ্টার ফারাক নয়, গোটা একটা বছরের ফারাক। অঙ্কে হিসেব করলে এক বছরের ফারাক মিলবে না, প্রতীকী হিসেবে মিলে যাবে হয়তো। হিসেবটা মিলে যাক, ফারাকটা খুব স্পষ্ট করে বোঝা যাক, সময়টা বদলে যাক— কোটি কোটি বাঙালির আকাঙ্খা সম্ভবত এই রকমই আপাতত।

Advertisement

প্রতীকী অর্থে আজকের সকালটা প্রবীণতম, ১৪২৪ সালের শেষ সকাল। সেই প্রতীকী অর্থেই কালকের সকালটা হবে নবীনতম। বাস্তবে পিঠোপিঠি দুটো দিন। কিন্তু সময় বড় অন্য রকম দাবি নিয়ে হাজির এই দুই পিঠোপিঠি তারিখের সামনে। দুটো তারিখের মধ্যে অনেকখানি ব্যবধান সঞ্চারিত হোক পৃথিবীর একটা মাত্র আবর্তনকে সাক্ষী রেখে, ১৪২৫-এর প্রথম সকালটায় অনেক কিছু নতুন আলোয় ধরা দিক, এমনই আকুতি সময়ের চোখে আজ।

নতুন বছর বার বারই প্রতীকী তারুণ্য নিয়ে ধরা দেয়। কার্যক্ষেত্রে এ যুগে ইংরেজি নতুন বছরটাই আসল নতুন বছরের তকমা আদায় করে নিয়েছে। বাংলা নববর্ষ কার্যত আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত। তবু পয়লা বৈশাখ বাঙালির হৃদয়ে, বাঙালি মননে স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ, নির্মল অস্তিত্ব নিয়ে ধরা দেয় আজও। অতএব পয়লা বৈশাখ আজও এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সন্ধিক্ষণ, যে সন্ধিক্ষণে জীবনের শপথগুলোকে ঝালিয়ে নেওয়া যায় নিষ্কলুষ আলোকে। অনেক কিছু হয়তো ভুল হয়ে গিয়েছে, অনেক কিছু হয়তো অনাকাঙ্খিত পথে এগিয়েছে, গোলমাল হয়ে গিয়েছে হয়তো অনেক রকম হিসেব গোটা একটা বছর ধরে। সেই সমস্ত ভেস্তে যাওয়া হিসেবের খাতা সপাটে বন্ধ করে নতুন খাতা খুলে ফেলার অবকাশ আজও নিয়ে আসে পয়লা বৈশাখ।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গোটা বছর ধরে অনেক রকম সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হল। মানবাত্মার সাংঘাতিক অসম্মান ঘটিয়ে বাংলার নানা প্রান্তে মাথা তুলল সাম্প্রদায়িকতার বিষ। পাহাড় অশান্ত, উত্তপ্ত, রক্তাক্ত রইল মাসের পর মাস বিভাজনের দাবিতে। গণতন্ত্রের উপরে নির্লজ্জ ও বেনজির আঘাত প্রত্যক্ষ করতে হল পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে। আরও নানা নেতি হানা দিল নানা রন্ধ্রপথে। ইতিবাচক কিছু ঘটেইনি গত একটা বছরে, এ কথা বলা যায় না। জীবন তার আপন ছন্দ, রূপ, রং, স্পর্শ, আঘ্রাণ সহযোগে নিরন্তর সামনের দিকে নিয়ে চলে আমাদের প্রত্যেককেই। শত-সহস্র নেতির সাক্ষী হতে হলেও সেই নিরন্তর অগ্রগতিতেই ইতিবাচকতার সবচেয়ে বড় নিহিতি। বছরের শেষ সকালে পৌঁছে খেরোর খাতার শেষ পাতায় সেই অগ্রগতির যোগফল থাক, সে যোগফলকে নতুন খাতায় তুলে নেওয়ার তোড়জোড় থাক। কিন্তু নেতির হিসেব এই শেষ পাতাতেই শেষ হয়ে যাক। বয়ে যেন না নিতে হয় পরের খাতায়। অঙ্গীকারটা এমনই হোক।

আরও পড়ুন
শুঁটকি আর পিরের গানে বর্ষবরণ

চৈত্র মাস তার শেষ লগ্নে উপনীত। এ চৈত্রে কেউ কারও চোখে সর্বনাশ দেখে থাকতে পারেন। কেউ না-ও দেখে থাকতে পারেন। কিন্তু চৈত্রের সংক্রান্তিতে যাবতীয় বিষের সর্বনাশ হোক, আক্ষরিক অর্থেই হোক, আকাঙ্খা থাক এমনই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন