সম্পাদক সমীপেষু

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নাটকের (বারবধূ) পরিচালক (প্রয়াত অসীম চক্রবর্তী) আমাকে আমন্ত্রণ করলেন সেই নাটকের শততম রজনীতে। আমি নিয়মিত বাংলা নাটকের দর্শক সেটা তিনি জানতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি সবিনয়ে আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছিলাম অন্য কাজের অছিলায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০০:১৬
Share:

অসীম চক্রবর্তী (বাঁ দিকে) ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

‘এই নাটক বন্ধ হোক’

Advertisement

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নাটকের (বারবধূ) পরিচালক (প্রয়াত অসীম চক্রবর্তী) আমাকে আমন্ত্রণ করলেন সেই নাটকের শততম রজনীতে। আমি নিয়মিত বাংলা নাটকের দর্শক সেটা তিনি জানতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি সবিনয়ে আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছিলাম অন্য কাজের অছিলায়। একে সেই নাটকের বিরোধিতা বলা যাবে না।’ (‘বারবধূ বন্ধে ফরমান নয়, মনে করালেন বুদ্ধ’, ৮-৪)

বস্তুত ১৯৭৭ সালের ১১ অগস্ট তৎকালীন তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের মন্ত্রী বু্দ্ধদেব ভট্টাচার্য বারবধূ নাটকের নির্দেশক অসীম চক্রবর্তীকে একটি সরকারি চিঠি লেখেন (চিঠির ক্রমিক সংখ্যা ৩২৩)। চিঠির বয়ান ছিল: ‘বারবধূ’ অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমাকে যে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সে অনুরোধ রাখতে পারলাম না। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে যে কথা হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি করে বলছি, সংস্কৃতি ও সমাজের স্বার্থে এই নাটক বন্ধ হোক— এটাই আপনার বিবেকের কাছে আমার আবেদন।

Advertisement

দুঃখের বিষয় এই যে, শ্রীভট্টাচার্যের মতো উদারমনা, শিল্পসচেতন এবং ‘নিয়মিত বাংলা নাটকের দর্শক’ বারবধূ নাটকটি না-দেখেই তথাকথিত ফরমানটি জারি করে বসেছিলেন।

উল্লেখ্য, এই একই বারবধূ নাটকের অভিনয় দেখে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মন্মথ রায় এমনকী উত্তমকুমার পর্যন্ত মুক্তকণ্ঠে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছিলেন। তার লিখিত তথ্য প্রমাণ রয়েছে (সূত্র: ‘কোনও এক নাট্যকর্মী অসীম চক্রবর্তী সম্পর্কে দু-একটি কথা’, অসীম সামন্ত, পরম্পরা প্রকাশন) ১৯৭২ সালে শুরু হয়ে ১৯৭৭ অবধি বারবধূ প্রায় ১৮০০ রজনী অভিনীত হয় এবং আনুমানিক ২০ লক্ষ দর্শক এ নাটকের অভিনয় দেখে। শ্রীভট্টাচার্যের উপরোক্ত চিঠি পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বারবধূ নাটকটি চিরতরে বন্ধ করতে বাধ্য হন অসীম চক্রবর্তী।

প্রসঙ্গত, পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ প্রয়োজিত এবং ব্রাত্য বসু পরিচালিত ‘অদ্য শেষ রজনী’ নাটকটি কারও ভাবাবেগকে আঘাত করতে অথবা কোনও রাজনৈতিক বিষয়কে উস্কে দেওয়ার নিমিত্তে মঞ্চস্থ করা হয়নি। এই নাটকটি ষাট ও সত্তরের দশকের এক অতীব গুণী অথচ ইতিহাস বিস্মৃত বাংলা থিয়েটারের অভিনেতা ও নির্দেশকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী। কলকাতা-৯

এখন ব্যক্তিই সংগঠন

‘একটু নেমে আসতেন যদি’ (৩১-৩) প্রকাশিত সুব্রত দত্তের রচনা প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। পশ্চিমবঙ্গের সমর্পণবাদী আনুগত্যের রাজনীতির ধারা অব্যাহত, তথাকথিত বামপন্থী বৈপ্লবিক ঐতিহ্য সত্ত্বেও। বাম আমলে দলের প্রতি আনুগত্য এখন ব্যক্তিবিশেষের প্রতি আনুগত্য। এটা ঠিক যে, বামপন্থীদের একটি সাংগঠনিক সংহতি ছিল, যদিও তা ছিল ক্ষমতা কায়েম রাখার স্বার্থেই। এখন ব্যক্তিই সংগঠন। কিন্তু বাম ডান কেউই ব্যক্তিমানুষের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠেনি, সংগঠন বা ব্যক্তি সবই মূলত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং হচ্ছে।

অরুণাভনারায়ণ মুখোপাধ্যায়।
কলকাতা-৬৪

গণতন্ত্রের বিপদ

শিলদা কলেজের নতুন ভোটার একজন ছাত্রী বলেছে সে রাজনীতির কিছুই জানে না, তবে বিশ্বাস করে সাইকেল যখন পেয়েছে তখন টাকা এবং চাকরি দুটোই পাবে। অ্যারিস্টটল থেকে হ্যারল্ড ল্যাস্কি, কেউ কি কল্পনা করতে পেরেছিলেন এমন একটা সময় আসবে যখন তাঁদের সাধের গণতন্ত্র সাইকেলে চেপে সাড়ে সাতশো টাকা আনতে যাবে?

শুধু কি তাই? গণতন্ত্র বেচারার দুর্গতির শেষ নেই। সামান্য দু-টাকার চাল নিয়ে কী বেচাল। মোদীজি বলছেন, চাল আমি দিচ্ছি, দিদি বলছেন, ক্যাঁচকলা, চাল আমি দিচ্ছি। শান্তি নেই, সুদূর এথেন্স থেকে এতটা পথ পার করে কলকাতায় এসে ঝলমলে ত্রিফলার আলোয় ভরা ঝাঁ চকচকে পার্কে বসে যেই না ভেবেছে একটু জিরিয়ে নিই, অমনি এক দাদা এসে হুমকি দিয়ে বলল, শিগগির কেটে পড়ুন এটা আমাদের পার্ক। কী মুশকিল, এ রাস্তা এ পার্ক কার? দিদি বলে আমার, দাদা বলে আমার। গণতন্ত্রদাদা বলে, আমি তবে কার? হঠাৎ লোডশেডিংয়ে কে যেন বলে ওঠে, সারদা আর নারদার।

অরুণকান্তি দত্ত। বেলুড় মঠ, হাওড়া

অন্তঃসলিলা

জহর সরকার (নদী ও দেবী’, ১৪-২) লিখেছেন, ‘সরস্বতী নদী হারিয়ে গেছে, কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ আজও বিশ্বাস করেন যে অন্তঃসলিলা সরস্বতী গঙ্গায় মিশেছে।’ এই প্রসঙ্গে একটি অভিজ্ঞতা উল্লেখ করতে চাই। সম্প্রতি ইলাহাবাদে গিয়েছিলাম। সেখানকার পুরনো কেল্লাটি এখন সামরিক কর্তৃপক্ষের অধীন। সেনাবাহিনী একটি অন্তঃসলিলা নদীর জল ওই কেল্লার ভিতরে পাম্পে ফোয়ারার মতো তুলে আবার মাটির নীচে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমরা সেই জল দর্শন ও স্পর্শ করেছি। সেনাবাহিনী রং মিশিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে ওই জল প্রয়াগে গঙ্গাতেই মিশছে। স্থানীয় লোকের এবং সেনা কর্তৃপক্ষেরও বিশ্বাস ওই অন্তঃসলিলা নদীই সরস্বতী।

সুস্মিতা ভট্টাচার্য। কলকাতা-২৬

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন