‘দেশত্যাগ’ করেছিলেন ৬২২ সালে
অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘আবার হিজরি সনের ভিত্তি হল ৬৬২ খ্রিস্টাব্দে নবির মক্কা থেকে মদিনা গমন’ (‘হিন্দু হওয়াটা যেন...’, ১৫-৪)। কিন্তু এই সালটি হবে ৬২২ খ্রিস্টাব্দ। হজরত মহম্মদ (দঃ) তাঁর নিজের কোরায়েশ বংশের অত্যাচারে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর (অন্য মতে ২ জুলাই) নিজ ভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনা যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর এই ‘দেশত্যাগ’কে আরবি ভাষায় বলে ‘হিজরত’, ইংরাজিতে ‘মাইগ্রেশন’। ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তাই হিজরি সালের গণনা করা হয়। মুসলিম জগৎ হিজরি সাল মেনে চলে। সংক্ষেপে যা ‘এ এইচ’। অর্থাৎ ‘আফটার হিজরত’। ৬২৩ খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ দ্বিতীয় হিজরি সাল থেকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাবা গৃহের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার প্রচলন হয়। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রাঃ) খলিফা থাকা কালে ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে মুসলিম দুনিয়ার কালক্রম হিসেবে হিজরি সাল চালু করেন। প্রসঙ্গত, প্রাচীন মিশরীয়রা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪২২৬ অব্দ থেকে সৌরবৎসর (সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর পরিভ্রমণের ভিত্তিতে) গণনা প্রবর্তন করেন, প্রাচীন গ্রিকরা কালক্রম ঠিক করতে অলিম্পিক খেলাকে চিহ্নিত করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দ থেকে অলিম্পিক খেলা শুরু হয় এবং প্রতি চার বৎসর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। তেমনই প্রাচীন সুমেরীয়রা চান্দ্রবৎসর (পৃথিবীর চারিদিকে চাঁদের পরিভ্রমণের ভিত্তিতে) প্রচলন করেন। মুসলিম জগতের যাবতীয় রীতিনীতি চান্দ্রবৎসর মেনে হয়। চান্দ্র ও সৌরবৎসরের মধ্যে প্রতি বছরে ১১-১২ দিনের ফারাক থাকে।
দীপাঞ্জন দে কৃষ্ণনগর
বোলান গান
মুর্শিদাবাদের এক সময়ের জনপ্রিয় লৌকিক গান বোলান গান। ‘বোলান’ নামটি নিয়ে নানা জনের নানা মত। মূলত, বোল কেটে কেটে গাওয়া হত বলে এই গানের নাম ‘বোলান’। অন্য মতানুসারে, শিবের ভক্তরা গান গেয়ে মৃত মানুষের মুখে বোল মানে কথা ফোটাতে পারতেন বলে এর নাম, ‘বোলান’। গাজন উপলক্ষে এই গান মুর্শিদাবাদ জেলায় সর্বত্র গাওয়া হয়। গ্রামের বিনোদনপ্রিয় মানুষ মূলত রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণ অবলম্বনে নানা ঘটনাকে নাটক আকারে গ্রাম্য দর্শকের কাছে পরিবেশন করেন। আগে পুরুষেরা নারীর রূপ ধারণ করতেন। যদিও পেশাদার নারী শিল্পীরও দেখা মেলে আজকাল। কাহিনি, বাদ্যযন্ত্র, মঞ্চসজ্জায় আজ যে কোনও যাত্রাদলকে বোলান গান চাপে ফেলতে পারে! এক সময়ে এই গান মূলত মড়ার খুলি ও লাঠি নিয়ে পরিবেশিত হত। লৌকিক দেবতা ধম্মরাজের পূজাও এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এই জেলায়। মুর্শিদাবাদ জেলার শক্তিপুর, ভরতপুর, কান্দি, বেলডাঙা, কুমারপুর এলাকায় এই গান আজও বেশ জনপ্রিয়। অন্ত্যজ শ্রেণির লোকাচার এতে ফুটে ওঠে।
ভাস্কর দেবনাথ সাগরদীঘি, মুর্শিদাবাদ
কিছু ভ্রান্তি
অবিরল ধারায় তিস্তার জল বাংলাদেশকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সনির্বন্ধ অনুরোধ ও সেই প্রসঙ্গে তিস্তা ব্যারেজ ও খাল তৈরির অপকর্ম করার জন্য পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সমালোচনা করেছেন দেবেশ রায় (‘মুখ্যমন্ত্রীকে একটি আবেদন’, ৬-৪)। কিন্তু এখানে কিছু ভ্রান্তি থেকে গেছে। প্রথমত, তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প শুরু ১৯৭৫-৭৬ সালে। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে। তখন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ও সেচমন্ত্রী বরকত গনি খান চৌধুরী।
দ্বিতীয়ত, তিস্তা নদীর জল তিস্তা খাল ও মহানন্দা নদীখাতের মাধ্যমে গঙ্গায় ফেলার তথ্যটি ভিত্তিহীন। প্রকল্পানুযায়ী, বর্ষায় তিস্তার প্রবাহের অতি অল্প অংশ ব্যবহার করে তিস্তা খাল, মহানন্দা খাল, ডাউক-নাগর খাল ও নাগর-ট্যাঙ্গন খালের মাধ্যমে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার প্রায় ৩ লক্ষ হেক্টর কৃষি এলাকাকে সেচসেবিত করার কথা। শোনা যাচ্ছে, জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় প্রকল্পের কাজ থেমে আছে। এত বড় প্রকল্প রূপায়ণে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন পশ্চিমবঙ্গে তার বড়ই অভাব।
আর নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ভারতের প্রধান নদীগুলি যুক্ত করার যে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে, যা পরে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ লাভ করেছিল, তার সঙ্গে তিস্তা প্রকল্পের কোনও যোগ নেই।
বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখার মাত্র ১৫ কিমি দূরেই লালমনিরহাটের ডালিয়াতে তিস্তা নদীর উপর আর একটি ব্যারেজ তৈরি হয়েছে রাজশাহী ও রংপুর ডিভিশনের প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ হেক্টর কৃষি এলাকাকে সেচসেবিত করার জন্য। তিস্তার বর্ষাকালীন প্রবাহের সিংহভাগ বাংলাদেশে বয়ে যায়; শুখা মরশুমের তিস্তার জলের বাঁটোয়ারা নিয়েই যত সমস্যা। ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষকে দেওয়া-নেওয়ার মনোভাব থেকেই সমস্যা মেটাবার পথ বার করতে হবে।
গাজোলডোবার ব্যারেজ ভেঙে ফেললেই কি উৎস থেকে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত তিস্তা প্রবাহকে বন্ধনহীন করা যাবে? বাংলাদেশের ব্যারেজটিকেও তা হলে ভেঙে ফেলতে হয়। আর বন্যাবাহিত পলিতে নদী অববাহিকা তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নদীকে ফিরিয়ে দিতে গেলে তো দু’দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে বন্যা থেকে সুরক্ষার প্রয়োজনে তৈরি তিস্তা নদীর দুই পাড়ের নদীবাঁধগুলিকেও ভেঙে ফেলতে হয়। এই নদীর পারে বসবাসকারী দু’দেশের অগণিত জনসাধারণ তা মেনে নেবেন কি?
পীযূষ বসু কলকাতা-১০৬
অরক্ষিত ঝিল
উল্টোডাঙা ও দমদম স্টেশনের মাঝে দক্ষিণদাঁড়ি-সংলগ্ন রেল লাইনের ধারেই একটি ঝিল এখন কচুরিপানায় ভরা। জল আর চোখে পড়ে না। আগে এখানে টলটলে জলে মাছরাঙা ও পরিযায়ী পাখি, সাদা বক ও বালিহাঁসের সাঁতরানোর দৃশ্য প্রকৃতির শোভা বাড়াত। এখন কমপ্লেক্স-সংলগ্ন বস্তি এই অরক্ষিত ঝিলে কামড় বসাচ্ছে। মৎস্য ব্যবসায়ীরা লিজ নিয়েছিল বলেই আমাদের এই ছোট নদীর কদর ছিল মাছ ধরার সময়। তারা এখন হাত উঠিয়ে নিয়েছে। কচুরিপানা ভরা এই ঝিলের পূর্বপাড়ের সামান্য অংশে ভোররাত থেকে প্রাতঃকৃত্যের শৌচকর্ম আর ধোপাদের কাপড় কাচা চলে। রেল কর্তৃপক্ষ কি নজর দেবেন?
অরূপরতন চৌধুরী কলকাতা-৩৭
আর্সেনিক দূষণ
আর্সেনিকের ভয়াবহতা নিয়ে নামীদামি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ; এবং রোগগ্রস্ত ব্যক্তিদের দু’হাতের মেলে ধরা চেটোর কত ছবি! কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে কি?
প্রসঙ্গত, কোনও এলাকার জলে আর্সেনিক দূষণ ভয়াবহ আকার নিলে, সেখানকার টিউবওয়েলের জল পরীক্ষা করা হয় এবং মানুষকে বলা হয় কী করা উচিত, কী অনুচিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এলাকাভিত্তিক প্রতিটি টিউবওয়েলে যদি আগেভাগে আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষার নিয়মিত ব্যবস্থা থাকত, তবে এত মানুষকে দুর্ভোগ সইতে হত কি?
শক্তিশঙ্কর সামন্ত ধাড়সা, হাওড়া
শুধু রোল নম্বর
পরীক্ষার খাতায় নামের পরিবর্তে শুধু রোল নম্বর থাকলেই তো হয়। মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষার খাতায় কিন্তু নাম নয়, শুধুই রোল নম্বর চাওয়া হয়। অথচ, স্কুল বোর্ডসহ অন্যান্য পরীক্ষার খাতায় নাম লেখা কেন বাধ্যতামূলক, জানা নেই।
আবেদন, বোর্ডের পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরিবাকরি সহ অন্যান্য যাবতীয় পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষার্থীর নাম ছাড়া শুধুই রোল নম্বর লেখার ব্যবস্থা করা হোক।
সেখ জাহির আব্বাস আটাঘর তাজপুর হাই মাদ্রাসা, বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in