বাংলা বিড়ম্বনা
রাজ্য সরকার সব বিদ্যালয়ে বাংলা পড়ানো আবশ্যিক করে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু একটা কথাই বলব, বাংলাটা যাতে বাংলার মতো করেই পড়ানো হয়, সে ব্যাপারে নজরদারি থাকে যেন। না হলে ভাষাটির পক্ষে আরও বিপদ।
একটা বাস্তব উদাহরণ শোনাই। বড়রা সব সময় বলেন, ঠাকুরদেবতা নিয়ে ছেলেখেলা চলে না। কিন্তু বাচ্চাবেলায় স্বয়ং ঠাকুরমশাই ও ঠাকুমা আমার ঠাকুরদেবতা সংক্রান্ত জ্ঞানগম্যি গুলিয়ে দিয়েছিলেন। ঠাকুমার মুখে হরির নাম শুনতাম। হরি হলেন কৃষ্ণ ঠাকুর, ঠাকুমাই বলে দিয়েছিলেন। এ দিকে বাড়িতে টেপরেকর্ডারে রবীন্দ্রসংগীত চলত নিয়মিত। ঠাকুরমশাইয়ের একটি গান খুব কানে আসত, ‘জাগরণে যায় বিভাবরী/আঁখি হতে ঘুম নিল হরি...’ ঠাকুমার মুখে হরির নানা দুষ্টুমির গল্প শুনতাম আর ভাবতাম, হরি মানে কৃষ্ণ বদমায়েশি করে চোখ থেকে ঘুম চুরি করে নিয়ে যায়। তাই জেগে রাত কাটানোর দুঃখে গান গাওয়া হয়। শিশু মনে এমন ভাবনা আসবে না-ই বা কেন? ঠাকুরমশাই গানটি রচনার সময়ে ছোটদের কথা ভাবেননি। না হলে ওই গানেরই শেষে লিখবেন কেন, ‘তারই বাঁশি শুনি হিয়া ভরি...’? বাঁশি তো হরির হাতের মোয়া! ভাবতাম, হরি বাঁশি বাজিয়ে লোককে জাগিয়ে রাখে। রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তাম, এই বুঝি হরি ঘুম নিয়ে পালায়!
‘হরি’ মানে হরণ করা— যে দিন থেকে জানলাম, সে দিন থেকে ওই সিরিয়াস রবীন্দ্রসংগীতটি শুনলেই গলগল করে হাসি উঠে আসে মুখে।
অরুণাভ দাস ইতিহাস বিভাগ, বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন
তিন তালাক
‘সতীদাহ প্রথা রদ’ প্রতিরোধের সময় হিন্দু অচলপন্থীরা যে সব যুক্তি দেখিয়েছিলেন, কপিল সিব্বল তিন তালাকের সমর্থনে প্রায় একই যুক্তি দেখাচ্ছেন বলে মনে হল (‘সুপ্রিম কোর্টে সিব্বল’, ১৭-৫)। সতীদাহ সমর্থকরাও বলেছিলেন, ব্রিটিশ রাজের কোনও অধিকার নেই ভারতীয় সনাতন ধর্মবিশ্বাস বা ধর্ম অভ্যাসে আঘাত দেওয়ার। তাঁরা বলেছিলেন, ‘বিশ্বাসের প্রশ্নে সাংবিধানিক (অর্থাৎ সামাজিক/মানবিক) নৈতিকতার প্রশ্নই ওঠে না’, ‘যুগ যুগ ধরে সতীদাহ প্রথা চলছে’ ইত্যাদি। কিন্তু সে সব যুক্তি গ্রাহ্য হয়নি। এঁরাও বলছেন ৬৩৭ বছর ধরে তিন তালাক প্রথা চলছে। অতএব এটা পরিবর্তন করা যায় না।
তিন তালাক ধর্মকেই অপমান করে। তিন তালাকের ফলে নারী জীবনভর পুড়তে থাকে। এটা নরহত্যার সমতুল অপরাধ। মনে রাখতে হবে, শুধু পুরুষ মুসলমান নয়, মুসলিম নারী-শিশুদের জীবনের কথা, তাদের সুখ-দুঃখ আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাও বিবেচনা করতে হবে। আসলে তাদেরই ভাগ্য নির্ধারিত হবে আদালতে।
অশোককুমার দাস কলকাতা-৭৮
উত্তমকুমার
‘বাংলা ছবির প্রবীণতম’ শীর্ষক রচনায় (রবিবাসরীয়, ৭-৫) একটি তথ্যপ্রমাদ চোখে পড়ল। তা ছাড়া রচনাটি পড়ে উত্তমকুমার সম্পর্কে একটি বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
‘নিশীথে’ ছবির সালটিকে বলা হয়েছে ১৯৪৬। এটি তথ্যপ্রমাদ। অগ্রগামী পরিচালিত ‘নিশীথে’ ছবিটি ৮ মার্চ, ১৯৬৩ সালে মিনার, বিজলী, ছবিঘরে মুক্তি পায়। প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৬ সালে উত্তমকুমার, সুপ্রিয়া দেবী কেউই চলচ্চিত্রে পা রাখেননি।
উত্তমকুমার দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য ‘শিল্পী সংসদ’ গড়েছিলেন। কলাকুশলীদের নানা ভাবে সাহায্য করতেন এবং কাজ পাইয়ে দিতেন। অথচ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, উত্তমবাবু রামানন্দবাবুকে কর্মচ্যুত করেছিলেন। এই তথ্য ঠিক নয়। রামানন্দবাবু তাঁর নিজের যোগ্যতায় টালিগঞ্জে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন (‘তিন ভুবনের পারে’, ‘শেষরক্ষা’ প্রভৃতি) এবং উত্তমবাবু কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি।
‘নিশীথে’-এর পরে উত্তমকুমার অভিনীত ‘তিন অধ্যায়’ ছবিতেও রামানন্দবাবু ক্যামেরাম্যান ছিলেন। ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৮-এ ছবিটি রূপবাণী, অরুণা ও ভারতীতে মুক্তিলাভ করে। অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে ‘নিশীথে’র সময় যদি কোনও মতান্তর ঘটেও থাকে, তা হলে তা ১৯৬৮ সালের আগেই মিটে যায়।
প্রসঙ্গত, ‘তিন অধ্যায়’ ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নানা কারণে উল্লেখযোগ্য। এই ছবিতেই সুপ্রিয়া দেবী পরদায় প্রথম ক্যাবারে নৃত্য পরিবেশন করেন। এর আগে বাংলায় কোনও নায়িকা পরদায় ক্যাবারে নৃত্য করেননি। তা ছাড়া, এই ছবিতে একটি জটিল নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সুপ্রিয়া দেবী বিএফজেএ থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। ছবিটি রামানন্দবাবু বোধ হয় ভুলে গিয়েছেন।
তিনি সম্ভবত উত্তমকুমারকে ক্যামেরা ও আলোর ব্যাপারে অজ্ঞ ভেবেছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে উত্তমকুমারের নানা ছবির শুটিং দেখার অভিজ্ঞতা আমার আছে। আমি দেখেছি যে ক্যামেরাতে কোনও লেন্স লাগানো থাকলে কী ধরনের অভিনয় করতে হবে, এবং আলোর কৌণিক দূরত্ব অনুযায়ী কী ভাবে অভিনয়ের ধরন পালটাবে— এই বিষয়ে উত্তমকুমার যথেষ্ট অবহিত ছিলেন। ক্যামেরায় কত নম্বর লেন্স লাগানো আছে, সেটি জেনে উত্তমকুমার অভিব্যক্তি ঠিক করতেন।
‘নিশীথে’ ছবিটির মাত্র দু’বছর পরেই সত্যজিৎ রায় উত্তমকুমারকে নিয়ে ‘নায়ক’ ছবিটির শুটিং শুরু করেন ১৯৬৫ সালে। সত্যজিৎবাবু উত্তমকুমারকে এক জন ত্রুটিহীন শিল্পী বলে মনে করতেন এবং সে কথা নানা জায়গায় বলেছেন এবং লিখেছেন। যে হেতু চলচ্চিত্র একটি যান্ত্রিক মাধ্যম, এখানে এক জন অভিনেতা ত্রুটিহীন শিল্পী হিসাবে গণ্য হতে পারেন তখনই, যখন তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি ক্যামেরা, আলো, শব্দ, সম্পাদনা, শব্দ-পুনর্যোজনা প্রভৃতি সব বিভাগেই বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন। উত্তমকুমারের এই ব্যাপারটি সত্যজিৎবাবুর চোখে পড়েছিল। কিন্তু রামানন্দবাবুর চোখে পড়েনি।
শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য কলকাতা-৩৯
প্রতিবেদকের উত্তর: ‘নিশীথে’ ছবির সময়কাল ১৯৬৩ সাল, ১৯৪৬ নয়— এই অনিচ্ছাকৃত তথ্যগত ভুলের জন্য দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। দ্বিতীয়ত, উত্তমকুমারের প্রতি বিরূপ ধারণা থেকে এই রচনা নয়, রামানন্দ সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, স্মৃতিকেই এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
জঞ্জাল বাজার
সিলভার জুবিলি হাই স্কুল ছাড়িয়ে দু’মিনিট তিন মাথার মোড় হেঁটে গেলেই কিংবা হরনাথ আশ্রম থেকে বেরিয়ে মেন রাস্তায় ওপর উঠলেই নাকে এসে পৌঁছবে এক বিশ্রী কটু গন্ধ। মাসের পর মাস ধরে জমতে থাকা বাজারের পচা আবর্জনার সঙ্গে মানুষের মলমূত্রের গন্ধ। এ ছবি ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোডের ওপর অবস্থিত খড়্গপুর শহরের জনপ্রিয় দৈনিক বাজার কৌশল্যার। দুর্গন্ধময় আবর্জনা রাস্তার উপর পর্যন্ত নেমে চলে এসেছে। বাজারে স্থায়ী কোনও ডাস্টবিন নেই। নেই মল-মূত্র ত্যাগের নির্দিষ্ট স্থান।
কৌশল্যা খড়্গপুর শহরের ব্যস্ততম বাসস্টপ। এই আঁস্তাকুড় থেকে বর্ষার সময় প্রধান ওটি রোডের ওপর দিয়ে বয়ে যায় নোংরা জল। তার উপর দিয়ে চলে নিত্যযাত্রী ও যান। এ বিষয়ে ২৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রিপোর্ট করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে দোকানদারদের আমি ওই স্থানে আর্বজনা ফেলতে মানা করেছি। কারণ, ওখানে গাড়ি ঢুকতে চায় না।’ সাফাই কর্মী সকালে কনটেনার নিয়ে হাজির হলেও দোকান মালিক দোকান খোলেন না। ভ্যাট মূল বাজার থেকে অনেক দূরে হওয়ায় এবং আবর্জনা বহনের আধার না থাকায় কেউ কেউ দোকান সংলগ্ন ফাঁকা স্থান-সহ সেই আবর্জনা স্তূপে নোংরা ফেলতে বাধ্য হন। তার জন্যে কাউন্সিলরকে বড় ‘ইউজ মি’ বসানোর অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি। এ দিকে প্রচারযন্ত্রে স্বচ্ছ ভারতের স্বপ্ন ভেসে বেড়ায়।
ফাল্গুনীরঞ্জন রাজ খড়্গপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in