সম্পাদক সমীপেষু

সঙ্গের ছবিটি দত্তফুলিয়া বাজারের পাশে ইছামতীর— সবজি বাজার আর মাছ বাজারের নোংরা ফেলার জায়গা। নদী যাচ্ছে সরু হয়ে, হারাচ্ছে নাব্যতা, মরছে জলজ প্রাণী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০০:৩৩
Share:

মরে যাচ্ছে ইছামতী

Advertisement

• ইছামতী আজ স্রোত হারিয়ে এক মরা নদী। গ্রীষ্মকালে তার অবস্থা আরও করুণ, সংস্কারের অভাবে মৃতপ্রায়। কিন্তু এই নদী এখনও আমাদের চিন্তা-চেতনা ও যাপনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অথচ এক শ্রেণির মানুষের হঠকারিতা ও বাস্তব বোধের অভাবে এর দূষণ এখন মাত্রাছাড়া। সঙ্গের ছবিটি দত্তফুলিয়া বাজারের পাশে ইছামতীর— সবজি বাজার আর মাছ বাজারের নোংরা ফেলার জায়গা। নদী যাচ্ছে সরু হয়ে, হারাচ্ছে নাব্যতা, মরছে জলজ প্রাণী। প্রশাসন কি একটু নজর দেবে না?

শুভংকর সাহা

Advertisement

সিন্দ্রানী, উত্তর ২৪ পরগনা

ধোঁকার যোজনা

• গত এক বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের নিজের লোক, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী এবং পেনশন-প্রাপকদের ২২ শতাংশ মাইনে, পেনশন বেড়েছে, ২৫ শতাংশ ডিএ বেড়েছে, বেশ কয়েক বার মাগ্গিভাতা বেড়েছে। মন্ত্রী, এমপি, এমএলএ, সরকারি-পদাধিকারী রাজনৈতিক নেতাদেরও বিপুল পরিমাণে ভাতা বাড়ানো হয়েছে।

অপর দিকে, যাঁরা সরকারি অধিগৃহীত কোম্পানি অথবা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন, স্ব-উপজীবী, অর্থাৎ পেনশন নেই এমন সাধারণ লোক, শেষ বয়সে যাঁদের আয়ের উৎস ছিল সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম, তাঁদের সুদের হার গত এক বছরের মধ্যে তিন বার কমিয়ে ৯.৩ শতাংশ থেকে ৮.৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

এর মধ্যে আবার গল্পের গরু গাছে তুলে প্রচার করা হচ্ছে ‘নবরূপে বরিষ্ঠ যোজনা আসছে ৮ শতাংশ সুদে’! পেনশনহীন বয়স্কদের জন্য এটা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে (এসসিএসএস) ৮.৪ শতাংশ সুদের কল্যাণে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া-র চেয়ারম্যানের মাপের লোকেরা আজ ৯৪ বছর বয়সে বিপিএল-এর কোঠায়! তাঁদের বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ২৫,২৫০ টাকা। আর, সাধারণ বয়স্ক মানুষদের অবস্থা আরও করুণ। তাঁরা সন্তানদের আয়ের উপরেই নির্ভরশীল হতে বাধ্য হন। সন্তানরা যদি সরকারি কর্মচারি বা কর্পোরেট সংস্থার কর্মী না হয়ে স্বল্প আয়ের কর্মী হন, তাঁদের ওই বৃদ্ধদের সেবা-শুশ্রূষার ব্যবস্থা করতে জিভ বেরিয়ে যায়। আদরের নাতি-নাতনিদের সামান্য লজেন্স দিতে গেলেও ওই বয়স্ক মানুষদের ছেলেদের কাছে হাত পাততে হয়। সারা দেশের ৮.৪০ কোটি বয়স্কদের এই যন্ত্রণা পেনশনভোগী, রাজনৈতিক নেতা অথবা মন্ত্রীদের বোধগম্য হবে না।

শুভব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়

চন্দননগর

সম্প্রীতি বুঝি!

• আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কন্যার স্কুলের বান্ধবীর বাবা, আমার এলাকায় ভাড়া থাকার জন্য ঘর খুঁজে দিতে অনুরোধ করেন। তিনি সেনা বাহিনীতে চাকরির সূত্রে বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকেন। সৌভাগ্যবশত সে সময় পাড়ায় তিনটি বাড়িতে ‘ঘর ভাড়া’— নোটিস ঝোলানো ছিল। উক্ত তিন বাড়ির মালিক আমার বিশেষ পরিচিত। তাই আমি ওঁকে আশ্বস্ত করি। তিন জন গৃহস্বামীই হবু ভাড়াটিয়ার চাকরি, শিক্ষা, ছোট পরিবারের পরিচয় পেয়ে প্রাথমিক ভাবে প্রবল উৎসাহ দেখান। কিন্তু ভদ্রলোক মুসলিম জেনে তৎক্ষণাৎ আমার প্রস্তাব খারিজ করে দেন। যুক্তি মোটামুটি এক—‘কিছু মনে কোরো না, আসলে, ওদের সঙ্গে আমাদের বাঙালিদের(?) সংস্কৃতি ঠিক খাপ খায় না।’ হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁরা স্ব-স্ব যুক্তিতে অনড় থাকেন। ওঁরা কিন্তু পাড়ায় গণ্যমান্য বলে পরিচিত।

অসহিষ্ণুতা, ধর্মীয় মেরুকরণ ইত্যাদি শব্দবন্ধের আজকাল বহুল চর্চা হয়। এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহান ঐতিহ্য আছে বলে আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। বর্তমান অভিজ্ঞতায় সেই বিশ্বাস কিন্তু টাল খেয়ে যায়।

সরিৎশেখর দাস

চন্দনপুকুর, ব্যারাকপুর

নিজস্ব সত্তা

• কৌশিক সেনের লেখাটি (৯-৫) খুব হৃদয়গ্রাহী। কিছু দিন আগে নকশালবাড়ির প্রত্যন্ত গ্রামের রংমিস্ত্রি রাজু মাহালি ও তাঁর স্ত্রী গীতা মাহালির বাড়িতে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে। ভারতের সর্বশক্তিমান নেতা অমিত শাহ ওই বাড়ির মেজেয় বসে কলাপাতায় গরিবের ভাত-সবজি খেয়েছেন। গ্রামের লোকেরা কেন রাজুর বাড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা করল, জানি না। তবে আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, দু’তিন দিন পর রাজু ও গীতা তৃণমূলে নাম লিখিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হার্বার্ট মার্কুসের কথা এসে যায়। তিনি কার্ল মার্ক্সের ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্যারিসে আলোচনা সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী উভয়ের দ্বারাই আক্রান্ত হয়েছিলেন। কারণ, তিনি ওই আলোচনায় ফ্রয়েড ও মার্ক্সের চিন্তায় সংশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। এটাই তাঁর অপরাধ। আমরা তো জানি, প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব সত্তা থাকে। সেটাকে কখনওই বাদ দেওয়া যায় না। অভিনয়ে, নাটকে, শিল্পে, আলোচনায় সর্বত্রই সেটা বজায় রেখে চলতে হয়। নিজস্ব সত্তা বিসর্জন দিয়ে নাম কেনা যায় কিন্তু নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে। তাই কোনও রাজনৈতিক দলে নাম না লিখিয়েও আমরা রাজনৈতিক শক্তির অধিকারী হতে পারি।

অলি বন্দ্যোপাধ্যায়

নদীকূল, নিমতা

আরও যা করণীয়

• বাংলা বাধ্যতামূলক করার জন্য সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ। যদিও এর ঠিক প্রয়োগ কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় থেকে গেল।

শুধু বাংলা বাধ্যতামূলক করলেই হবে না, যাতে ছাত্ররা (অভিভাবকরা) বাংলা শিখতে আগ্রহী হয় তার জন্য আরও কিছু করা দরকার। অভিভাবকরা কিন্তু সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সুবিধা হবে বলেই ইংরেজি শিখতে গেছে। তার ফলে শিক্ষিত বাঙালি বাংলা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। তাই বাংলার দিকে আকৃষ্ট করতে হলে আরও যা করতে হবে: ১) দেখা গেছে, অন্য বোর্ডগুলো বাংলা যে ভাবে পড়ায় তাতে খুব সহজ প্রশ্নপত্র করা হয়, কিন্তু উচ্চ হারে নম্বর দিয়ে দেয়। ফলে সামান্য শিখেই তারা বাংলাতে অনেক নম্বর পায়। বাংলা বাধ্যতামূলক করলেও তারা বাংলা সহজ করবে এবং কিছু না শিখিয়েই বা কম শিখিয়েই নম্বর দিয়ে দেবে। তাই নবম শ্রেণির শেষ বছরে বোর্ড দ্বারা প্রশ্নপত্র করতে হবে এবং অন্য স্কুলে সিট ফেলতে হবে যাতে ঠিক মূল্যায়ন হয়। ২) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাকরির পরীক্ষাতে (ইংরেজি শিক্ষক বাদে) ইংরেজির প্রতিযোগিতা রাখা চলবে না। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৩০/৫০ (পদ অনুযায়ী) শতাংশ নম্বর পেলেই ওই বিষয়ে উত্তীর্ণ ধরে নিতে হবে। যাতে বেশি ইংরেজি-শিক্ষিতরা এগিয়ে থাকার সুবিধা না পায়। ৩) চাকরির পরীক্ষায় বাংলা ভাষার প্রশ্নপত্র মূল্যায়ন আরও ভাল ভাবে করতে হবে, যাতে বাংলা যারা ভাল শিখেছে তারা সুবিধা পায়। যারা ইংরেজি ভাল করে শিখেছে, তাদের জন্য সর্বভারতীয় ক্ষেত্র থাক। যারা ভাল করে বাংলা শিখেছে, তাদের জন্য বাংলার চাকরিগুলি থাক। মনে রাখতে হবে চাকরিতে সুবিধা না থাকলে শুধু ‘মানুষ’ হওয়ার জন্য কেউ বাংলা শিখতে আগ্রহী নাও হতে পারে।

গৌরী পাল

গড়িয়া

তিনটে উত্তম দিন

• মধুরাই গঙ্গোপাধ্যায় (‘নারী বিবর্জিতা’, সম্পাদক সমীপেষু, ২১-৫) কোথায় সমস্ত স্টেশনের নাম প্রচলিত স্থানিক নামে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলবেন (যেমন উত্তমকুমার-এর বদলে টালিগঞ্জ), তা না করে ফেমিনিজমের নামে অন্য প্রচলিত স্টেশনের নামও কৃতী মহিলাদের নামে পালটাতে বললেন! ব্যক্তিপরিচয় বাদ দিয়ে কি কোনও জায়গার নাম করা যায় না? ‘তিনটি উত্তম’ বা ‘পাঁচটি সুচিত্রা দিন’ না বলে ‘তিনটি টালিগঞ্জ দিন’ চাওয়াটা ভাল শোনায় না?

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-৬১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন