অবহেলায় ইতিহাস
ভারতের স্বাধীনতা যজ্ঞে চন্দননগরের আত্মনিবেদনের কাহিনি অমৃত সমান। চন্দননগর ফরাসি শাসন থেকে মুক্ত হয় ১৯৫২ সালে। ইতিহাসের চন্দননগরে আছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি। পদ্মাবোট থেকে রবীন্দ্রনাথ নৌসেনাদের যে বাড়িটি উঁকি মেরে দেখতেন, আজও অক্ষত রয়েছে সেই পাতালবাড়ি। ফরাসি স্থাপত্যের নিদর্শন হোটেল দ্য প্যারি, জাহ্নবী নিবাস, ফরাসি রেসিডেন্সি এবং ১৭২০-র কাপুচিন স্মারক নিয়ে টিকে থাকা সেন্ট জোসেফ্স চ্যাপেল ফিসফিসিয়ে ইতিহাসের কথা কয়। আর রয়েছে বারদোয়ারি, আদুরে নাম ক্লক টাওয়ার। বুকে সাঁটা এক ফরাসি ঘড়ি। ঠিক সময় দিলেও ঘণ্টা বাজাবার সামর্থ্য নেই, মাথার ওপর খোলা ছাদ, ঔদাসীন্যের সৌজন্যে জরাজীর্ণ। চুক্তির ৯নং ধারা মোতাবেক ভারত এবং ফরাসি সরকার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়বদ্ধ ছিল। মান্যতা পায়নি ভারত-ফ্রান্স চুক্তি। ইতিহাসের স্মারক ঘড়িটি অচল হওয়ার আগে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হতে পারে না?
কল্যাণ চক্রবর্তী সম্পাদক, চন্দননগর হেরিটেজ
জীবনদায়ী
সুব্রত গোস্বামীর লেখাটি অত্যন্ত সময়োপযোগী (‘ব্যথা উপশমের পথ খুলুন’, ৫-৮)। মরফিন-গোত্রীয় ওষুধ প্রয়োগ বন্ধ করে রাখা নীতি নির্ধারকদের একটা ‘কম্বল চিকিৎসা’ ছাড়া আর কিছু নয়। শুধু ক্যানসার রোগীই নয়, যাঁর এক বার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, সুস্থ হওয়ার পর জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন জীবনে এমন যন্ত্রণা কখনও ভোগ করেননি। যন্ত্রণা যত বাড়ে, রোগীর অবস্থা ততই আশঙ্কাজনক হতে থাকে। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে দরকার মরফিন বা পেথিডিন ইঞ্জেকশন। সেটা জোগাড় করতে পেশেন্টের বাড়ির লোকের যন্ত্রণা হয় অবর্ণনীয়। বেশির ভাগ হাসপাতাল তার গুরুত্বই বোঝে না। যন্ত্রণা বাড়তে বাড়তে রোগী অনেক সময় কার্ডিয়োজেনিক শকে চলে যায়, যা রোগীকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। যার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় রোগীর আত্মীয় এবং চিকিৎসক। তাই মরফিন, পেথিডিন প্রকৃত অর্থে জীবনদায়ী ওষুধ। জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন করে হাসপাতালগুলিতে সহজলভ্য করা বাঞ্ছনীয়।
দীপ ভট্টাচার্য কলকাতা-১০৪
শিক্ষায় নবাগত
শিক্ষার মানের উন্নতি না হলে শিক্ষক নিয়োগ করে কী লাভ— এ প্রশ্ন উঠছে (‘এত শিক্ষক কি দরকার ছিল’, ২৯-৭)। যে সব প্রত্যন্ত স্কুলে শিক্ষকের প্রয়োজন বেশি, সেখানেই শিক্ষকের ঘাটতি থেকে যায় নিয়োগের পরেও। বাড়ির কাছের স্কুলে নিযুক্ত হতে চান সবাই। স্কুলের প্রয়োজনটা বড়, না শিক্ষকের পেশাগত সুবিধাটা জরুরি— এই নিয়ে এখনকার সদ্য নিযুক্ত শিক্ষকদের কোনও টানাপড়েন নেই। নিয়োগপত্র পাওয়ামাত্র সুবিধাজনক জায়গায় পোস্টিং পেতে তৎপর হয়ে ওঠেন প্রায় সবাই। সুপারিশ, দৌড়ঝাঁপ করে অনেকে বন্দোবস্তও করে ফেলেন। যাঁরা পারেন না, বুকে পাথর চাপিয়ে হাজির হন সেই সব স্কুলে, যেখানে তাঁদের মোটেও যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। সেই মাস্টারমশাইদের কাছেই স্কুল হয়ে ওঠে কারাগার। সেখান থেকে পালাতে চান তাঁরা। সমাজ ভাবে, মাস্টার ফাঁকিবাজ। মাস্টার ভাবে, সে বঞ্চিত, সে অপদার্থ। তাঁর পেশাগত সুযোগ আছে। অথচ তা পাওয়া যাচ্ছে না। সুযোগের বণ্টনে কোথাও সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। তাতে ক্ষোভ তৈরি হবেই।
একটা কথা বলা হচ্ছে, শিক্ষক নিয়োগ না করে, নিযুক্ত শিক্ষকদের রাজ্যের সব স্কুলে সমান ভাবে বণ্টন করে দিলেই সমস্যা মিটে যেতে পারে। তাতে রাজকোষের চাপও কমে, আবার শিক্ষকের অভাবও মেটে। যদি তা-ই হয়, শিক্ষার মান যদি তাতে সত্যিই বাড়ে, তাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু শুধু বণ্টন করলেই হবে না। যে ব্যবস্থাটা শুরু হল, তার ওপর ধারাবাহিক নজর রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিক্ষকদের অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনে চলে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। স্কুলের কাছে স্থানীয় ভাবে নিয়োগে যদি এই সমস্যার সমাধানে বাড়তি কোনও সুবিধা মেলে, এবং যদি স্কুলের পড়াশোনার মান উন্নত হয়, সেটাও বিবেচনা করতে অসুবিধা কোথায়!
নিয়োগ বন্ধ হলে শিক্ষকদের এই সব সমস্যার সমাধান হবে কী ভাবে! তাঁরা যে যেখানে আছেন, সেখানেই কি থেকে যাবেন সারা কর্মজীবন? এতে কি একটা শ্রেণিবৈষম্য তৈরি হবে না? এক দল ভাববেন, আমরা বাজি মেরে দিতে পেরেছি, অন্যরা ভাববেন, আমরা অসহায়।
শিক্ষকতার কাজে অন্য সব পেশার চেয়ে নতুনদের প্রয়োজন বেশি। আদর্শ কিছুটা হলেও এঁদেরকেই চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে। শিক্ষায় সেটা কাজে এলে ভাল। আদর্শ না থাকলে লক্ষ্য থাকে না। লক্ষ্য না থাকলে অবসাদ আসে। আমাদের শিক্ষায় সবচেয়ে বড় বাধা, এক অস্থির বিষণ্ণতার বোঝা। শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক সকলেই আক্রান্ত অনাস্থায়। নবাগতরা সেখানে আনতে পারেন মুক্ত বাতাস, তাঁরাই সরাতে পারেন অন্ধকার। তাই তাঁদের আসার রাস্তা খোলা থাকা দরকার। অন্তত আসাটা নিশ্চিত করতে হবে এই ব্যবস্থায়।
অরণ্যজিৎ সামন্ত কলকাতা-৩৬
রেলবিচ্ছিন্ন
মালদহ সদর থেকে উত্তর মালদহের কুমারগঞ্জ, ভালুকা রোড, হরিশচন্দ্রপুর, কুমেদপুর, সামসি পর্যন্ত রেলযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠছে। শিয়ালদহ থেকে যে একটি মাত্র হাটেবাজারে এক্সপ্রেস এই সব স্টেশন হয়ে বিহারের কাটিহার পর্যন্ত যাচ্ছে, সেই ট্রেনটিকে অকারণে মালদহ টাউন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে অন্যান্য মেল, এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোকে চালানো হচ্ছে। ৫ অগস্ট ভোরে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে চলা হাটেবাজারে এক্সপ্রেসকে মালদহ টাউন স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রেখে শুধু যে দার্জিলিং মেলকেই চালানো হল তা-ই নয়, পদাতিক এক্সপ্রেস, যোগবাণী এক্সপ্রেস দুটোকেও অগ্রাধিকার দেওয়া হল। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ট্রেনটি আটকে থাকায় যাত্রীরা টয়লেটে পৌঁছে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। এই সব স্টেশনে এই বিশেষ ট্রেনটি বিলম্বে পৌঁছনোর কারণে স্টেশনগুলো থেকে সংযোগ রক্ষাকারী বাস, ট্যাক্সি, অটো রিকশা সবই অমিল হয়ে যায়।
এত দিন পর্যন্ত কাটিহার থেকে আগত লোকাল ট্রেনগুলোকে নিয়ে মালদহ টাউন স্টেশন পর্যন্ত চালানো হত। কিন্তু বছরখানেক ধরে ট্রেনগুলোকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আট-নয় কিলোমিটার দূরের মালদহের সদরঘাট স্টেশনে। অথচ, পাঁচ বছর আগে যাত্রীদের চাপ কমানোর জন্য এই মালদহ টাউন স্টেশনেরই অপর প্রান্তে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে টিকিট কাউন্টার তৈরি করা হল! আর এখন উত্তর মালদহের যাত্রীরা সেই মালদহ টাউন স্টেশনেই ঢুকতেই পারছেন না। ফলে, উত্তর মালদহের প্রায় পনেরো লক্ষ মানুষকে কার্যত রেল যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হচ্ছে।
শান্তনু বসু চাঁচল কলেজ, মালদহ
লোডশেডিং
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার অন্তর্গত বারেন্দ্রপাড়া এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। বছরের অধিকাংশ সময়েই লো-ভোল্টেজের সমস্যায় জেরবার হতে হয়। ৩-৪ ঘণ্টার লোডশেডিং নিত্য দিনের অঙ্গ। সময়ে অসময়ে লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজে সব থেকে বেশি হয়রানির শিকার হয় ছাত্রছাত্রী, অসুস্থ ব্যক্তি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও কর্মজীবীরা। উৎসবের দিনগুলিতেও ছাড় মেলে না। অগণিত বার ইলেকট্রিক অফিসে যোগাযোগ করেও কোনও ফল মেলেনি। সোনারপুরের মতো জংশন এলাকার এই সর্বজনীন সমস্যাটিকে উচ্চতর কর্তৃপক্ষ নজরে আনলে আন্তরিক ভাবে বাধিত হব।
লোপামুদ্রা নস্কর কলকাতা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়