সম্পাদক সমীপেষু

তাবিজ, কবচ, আংটি, প্রভৃতি নানান আচার ও কুসংস্কারের বশীভূত হয়ে উঠছে। সঙ্গে রয়েছে চ্যানেলে চ্যানেলে নানা পৌরাণিক গল্পগাছা, জ্যোতিষবিদ্যা, বচন-সহ নানা অবৈজ্ঞানিক, অপসংস্কৃতির লাগাতার প্রচার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২২
Share:

মানুষ তৈরি করতে হবে

Advertisement

নিজে হিন্দু বলেই বেশি গ্লানি হয়। যার প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালবাসা, ভরসা অগাধ, তার সামান্যতম বিচ্যুতিও সহ্য হয় না। হিন্দু ধর্মে ‘বাবা’ একটি নতুন সংস্কৃতি। এঁরা চ্যানেলে আসেন, সিনেমা করেন, বিচিত্র পোশাক পরেন, বিলাসময় জীবন, ব্যভিচার, খুন, অবৈধ সম্পত্তি, রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে ভাবা— এত সব কিছু অসংগতি নিয়েও এঁরা মানুষের আস্থা অর্জন করছেন, এটাই সবচেয়ে বিস্ময়কর। মানুষের লোভ, ভয়, নিরাপত্তাহীনতাই এর প্রধান কারণ। মানুষ বেশি করে অদৃষ্টবাদের উপর আস্থাশীল হয়ে উঠছে। তাবিজ, কবচ, আংটি, প্রভৃতি নানান আচার ও কুসংস্কারের বশীভূত হয়ে উঠছে। সঙ্গে রয়েছে চ্যানেলে চ্যানেলে নানা পৌরাণিক গল্পগাছা, জ্যোতিষবিদ্যা, বচন-সহ নানা অবৈজ্ঞানিক, অপসংস্কৃতির লাগাতার প্রচার। এত যে গীতা, রামায়ণ, মহাভারত, শিব, কৃষ্ণ, গণেশ, মনসার মাহাত্ম্য প্রচার হচ্ছে, তাতে কি মানুষের কোনও আধ্যাত্মিক পরিবর্তন হয়েছে, হিংসা কমেছে, না কি দুর্নীতি কমেছে? তা হলে কী লাভ! আদৌ কি এতে মনুষ্যত্বের বিকাশ হচ্ছে?

এ পথ ঠিক পথ নয়। শিক্ষাঙ্গনই প্রকৃত মন্দির। সেখানেই একমাত্র প্রকৃত মানুষ গড়া যায়, চেতনার উন্মেষ ঘটে, আচরণের পরিবর্তন হয়। নিজের এলাকার স্কুলে দান করুন। প্রতিটি মানুষের শিক্ষাকে সুনিশ্চিত করুন। এমন শিক্ষা, যাতে প্রকৃত মানুষ তৈরি হয়।

Advertisement

কৌশিক সরকার

রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

বিচিত্র রাজনীতি

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আলাদা করে ব্যক্তিস্তরে তালাক নিয়ে রায়কে সমর্থন জানানোয় তাঁর দলে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা আর নতুন কী (‘কেরলে সক্রিয় সংস্কারী বুদ্ধদেব’, ২৫-৮)! অতীতেও তিনি বার বার পার্টি লাইনের বাইরে গিয়ে কখনও বন্‌ধ নিয়ে, কখনও মাদ্রাসা নিয়ে মন্তব্য করেছেন, আবার দলের চাপে সে সব প্রত্যাহারে বাধ্যও হয়েছেন। তবে আলোচ্য সংবাদটি যেহেতু মুসলমান রাজনীতি-সঞ্জাত, তাই উল্লেখ করতে হয় তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব কালে ঘটে যাওয়া এ রকমই আর একটি ঘটনা। তখন এ রাজ্যে লাগামছাড়া মুসলমান অনুপ্রবেশের ফলে আশঙ্কিত-চিন্তিত শ্রীভট্টাচার্য মন্তব্য করেছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের জনবিন্যাস দ্রুত পালটে যাচ্ছে।’ সে বারেও যথারীতি তাঁর এই মনোভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পর দিনই পার্টির চাপে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে তিনি নিজেই পালটে যান। সত্যিই কী বিচিত্র এবং সর্বনাশা এই ভোটব্যাংক রাজনীতি!

সনাতন পাঠক

কলকাতা-১

উত্তরণের পথে

‘চিকিৎসা হাসপাতালে, পরীক্ষা বাইরে’ (দক্ষিণবঙ্গ সংস্করণ, ২৩-৮) শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথমেই বলি, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে আউটডোর বিভাগে আগে যেখানে ৫০০-৬০০ রোগী দেখা হত, এখন সেখানে প্রতি দিন গড়ে ২০০০-এর কাছাকাছি রোগী হয়। অর্থাৎ, রোগীর সংখ্যা খুব কম সময়ের মধ্যে চার গুণ বেড়ে গিয়েছে। প্রচার বেড়েছে। সচেতনতা বেড়েছে। খাতায় কলমে ৩০০ বেডের ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে প্রায় ৪৫০-র কাছাকাছি রোগী ভর্তি থাকেন।

বোঝার সুবিধার্থে একটা ছোট পরিসংখ্যান দিচ্ছি। আউটডোরের ২০০০ রোগীর ৮০%, অর্থাৎ প্রায় ১৬০০ রোগীর কিছু না কিছু টেস্ট রোগ নির্ণয়ের স্বার্থে লেখা হয়। যেমন আল্ট্রা-সোনোগ্রাফি, এক্স-রে, রক্ত-সহ আরও অন্যান্য পরীক্ষানিরীক্ষা। কেবল আউটডোরের রোগীর ৮%-র এক্স-রে লেখা হলে প্রতি দিন প্রায় ১৬০ জনের এক্স-রে হয়। আগে যেখানে কেবল ৩০টির বেশি এক্স-রে হত না। প্যাথলজিক্যাল টেস্ট কমবেশি ৪০% রোগীর ক্ষেত্রে লেখা হলে, প্রতি দিন প্রায় ৮০০ জনের রক্ত-পরীক্ষা করতে হয়। এখন ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে প্রতি দিন প্রায় ১০০ জন রোগীর আল্ট্রা-সোনোগ্রাফি করার প্রয়োজন হয়।

এ বার আসি মূল বিষয়ে, যেটার অভাবে সমস্ত হাসপাতাল ভুগছে— যথোপযুক্ত মানবসম্পদ। মানবসম্পদের সংখ্যা রোগী বৃদ্ধির সমানুপাতে বাড়েনি।

প্রতি দিন পেশেন্ট সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাক্তার-সহ সমস্ত স্বাস্থ্য-কর্মীদের কাজের চাপ। সমস্যা নিরসনে কয়েকটি প্রস্তাব। ১) যেখানে রেডিয়োলজিস্ট-এর অভাব রয়েছে, সেখানে মেডিক্যাল অফিসারদের আল্ট্রা-সোনোগ্রাফি ট্রেনিং করিয়ে সোনোলজিস্ট হিসেবে পোস্টিং দেওয়া যেতে পারে। যে ভাবে সিসিইউ-এর মতো স্পেশ্যালিটি ইউনিটে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এক জন রেডিয়োলজিস্ট-এর বদলে তিন জন সোনোলজিস্ট থাকলে কাজ অনেকটাই হালকা হয়ে যেতে পারে। ২) যে সমস্ত প্যাথলজিক্যাল টেস্ট সরকারি হাসপাতালে হয় না, সেগুলি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলের সুবিধা নিয়ে করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে অনেক হাসপাতালেই সমস্ত রকমের টেস্ট চালু করা হয়েছে। ৩) পিপিপি মডেলে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্ট এবং এক্স-রে পরীক্ষার সরকারি রেট অত্যন্ত কম হওয়ার কারণে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলি অংশগ্রহণ করে না। সেই স্পেশাল টেস্টগুলির দাম বাড়িয়ে পিপিপি মডেলে প্রাইভেট ল্যাবরেটরিদের আকর্ষণ বাড়ানো যায়।

রোগনির্ণয়ের উপর গুরুত্ব দিলে চিকিৎসা আরও দ্রুত এবং ভাল হবে। তাই হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ডিপার্টমেন্টকে শক্তিশালী করা উচিত। বর্তমানে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন, ১) আগে ম্যানুয়াল এক্স-রে হত, এখন ডিজিটাল এক্স-রে হয়। ২) আগে পোর্টেবল এবং নন-ডপলার মেশিনে সোনোগ্রাফি হত, এখন উন্নত মানের ডপলার হাই এন্ড মেশিন দেওয়া হয়েছে। ৩) আগে ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে সিটি-স্ক্যান হত না। এখন বিনা পয়সায় সিটি স্ক্যানের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ পরিষেবা উন্নত হচ্ছে। ১০০ শতাংশ না হলেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও কিছু অভাব, অভিযোগ আছে। আমরা ‘উত্তরণের পথে’।

প্রণত টুডু

ঝাড়গ্রাম

তিনটি ভুল

আমার লেখা ‘উত্তমের গান যাঁদের’ শীর্ষক পত্রে তিনটি ভুল তথ্য রয়েছে (সম্পাদক সমীপেষু, ৯-৮)। ১) ১৯৫৬ সালের ‘সাগরিকা’ ছবিটি ‘উত্তম-শ্যামল’ জুটির প্রথম ছবি নয়। উত্তমকুমারের লিপের জন্য শ্যামল মিত্র সর্বপ্রথম গেয়েছিলেন ১৯৫৪ সালে ‘মনের ময়ূর’ ছবিতে। ২) ‘সপ্তপদী’ (১৯৬১) ছবিতে ‘এ বার কালী তোমায় খাবো’ গানটি উত্তমকুমারের লিপে গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। মিণ্টু দাশগুপ্ত নয়। ৩) উত্তমকুমারের কণ্ঠে ‘ঠগ বাছতে হয় গাঁ উজাড়’ গানটি ‘অবাক পৃথিবী’ (১৯৫৯) ছবিতে শোনা যায়। ‘কুহক’ ছবিতে নয়। ‘অবাক পৃথিবী’ ছবিটির সুরকার ছিলেন অমল মুখোপাধ্যায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ছোট ভাই।
এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য
আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

এই প্রসঙ্গে সবিনয় জানাই যে, আরও কিছু শিল্পীর হদিশ পেলাম, যাঁরা উত্তমকুমারের লিপে গান গেয়েছিলেন। উত্তমকুমারের লিপে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় সর্বপ্রথম গেয়েছিলেন ১৯৫৫ সালে ‘সাঁঝের প্রদীপ’ ছবিতে নিজের সুরে ‘অনুরাগে রাঙাতে আমারে’-সহ আরও একটি গান। কথা শ্যামল গুপ্তের। সুবীর সেনও গেয়েছিলেন উত্তমকুমারের লিপে। ১৯৭৩ সালে মুকুল রায়ের সুরে ‘কায়াহীনের কাহিনি’ ছবিতে আশা ভোঁসলের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে ‘আমি যে তোমার তুমি যে আমার’ গানের শেষ এক লাইন। গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। হিন্দিতে ভূপিন্দর সিংহ গেয়েছিলেন উত্তমকুমারের লিপে ১৯৭৯ সালে ‘দুরিয়াঁ’ ছবিতে। তাতে ছিল জয়দেব সুরারোপিত দুটি গান ‘জিন্দগি মেরে ঘর আনা’ ও ‘জিন্দগি মে জব তুমহারে গম’। সহশিল্পী ছিলেন অনুরাধা পড়ওয়াল।

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

কলকাতা-১০৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন