অটো ও অপমান
• শিয়ালদহ-বেলেঘাটা অটো রুট সব সময়ই খুবই ব্যস্ত এবং যাত্রী পরিবহণ পরিষেবার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রত্যহ কয়েক হাজার নিত্যযাত্রী এই রুটে যাতায়াত করেন। বেলেঘাটা, বাইপাস, সল্ট লেক, চিংড়িঘাটা, সায়েন্স সিটি, নিউটাউন, এই বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের এবং নিউ টাউন, সল্ট লেক-এ কর্মরত কয়েক হাজার মানুষকে দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্যে এই পরিষেবার উপর নির্ভর করতেই হয়। এই রুটের অটো ভাড়া অদ্ভুত। এগারো টাকা। অটোয় ওঠার আগে অবশ্যই ওই এগারোর এক টাকাটি যত্ন করে সরিয়ে রাখতে হয়। কারণ কোনও কারণে সেটি কারও কাছে কোনও সময় না থাকলে তাঁকে চরম অপমানের সম্মুখীন হতে হয় এবং সবার সামনে উঁচু স্বরে প্রমাণ করে দেওয়া হয় যে তিনি অত্যন্ত অপরাধ করেছেন এক টাকা খুচরো না নিয়ে অটোয় উঠে। কেউ পঞ্চাশ অথবা একশো টাকা দিলে তাঁকে এখন ব্যাগ ঘেঁটে গুনে গুনে খুচরো কয়েনে বাকি ফেরত দেওয়া হয়।
এত কিছু সহ্য করেও অবিবাদী শান্তিপ্রিয় বাঙালি রোজ এ ভাবেই যাতায়াত করে চলেছে। গত পয়লা সেপ্টেম্বর সারা সন্ধ্যা খুব একচোট বৃষ্টি-বাদলা হয়েছে। রাত্রি সাড়ে আটটায় শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটো স্ট্যান্ডে এসে দেখি প্রায় একশো জন লাইনে দাঁড়িয়ে। শুনলাম অটো নেই। কিন্তু দেখলাম অটো আছে, পিছনে দাঁড়িয়ে। কয়েক জন গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী দাদা, যাবেন না? এত জন সেই কখন থেকে লাইন এ দাঁড়িয়ে?’ উত্তর এল, ‘না’! কয়েক জন লোক লাইন ভেঙে দৌড়ে যাচ্ছেন এবং কী যেন একটা চুপিচুপি কথা হচ্ছে ড্রাইভারদের সঙ্গে, ড্রাইভার তাঁদের অটোয় চাপিয়ে হুশ করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আমরা দু’তিন জন একটু চেঁচামিচি করলাম। কোনও লাভ হল না। বাকিরা সবাই চুপ। কাউকে কিছু বলার নেই, কেউ কিছু শোনার নেই, চুপ করে সব মেনে নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
বাড়ি যখন ফিরলাম, তখন ঘড়িতে বাজে দশটা।
সাহেব
কলকাতা
না পাওয়াও সত্য
• আজকাল প্রায়শই দেখা যাচ্ছে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত বা বিফল হয়ে আত্মঘাতী হচ্ছে সদ্য যুবকযুবতীরা, কখনও বা অ্যাসিড ছুড়ে পুড়িয়ে দেওয়া অথবা নিধন করা হচ্ছে প্রতিপক্ষকে। এ কেমন সভ্যতা? কেমন মানসিক গঠন যে, না পেলেই আর বিকল্প কোনও পথ না জানা বা না ভাবতে পারা? আমরা অভিভাবকরা তো জানি যে পৃথিবীতে সব শব্দেরই একটা বিপরীত শব্দও আছে। পাওয়া না পাওয়া, আলো অন্ধকার, দিন রাত, সাদা কালো, প্রেম ও প্রত্যাখ্যান, সবই একটা ছাড়া আর একটা অর্থহীন। সে শিক্ষা ছোট থেকেই শিশুদের দেওয়া দরকার। মন বড় স্পর্শকাতর ও পরিবর্তনশীল বস্তু। আমরা কেউই কারও মাপের নই। জীবন অনেক বড়। মানুষের ভাল লাগাও স্থির নয়, সদাই পরিবর্তশীল। পরাজয়, ব্যর্থতা, এগুলো মেনে নেওয়ার শিক্ষাও জীবনের সব শিক্ষার একটি। তাই নিজের মনকে নিজে খুশিতে ভরিয়ে রাখার দায়িত্ব, নিজেকে বহন করার ভার নিজের নিতে শেখা জরুরি।
আজকাল ঘরে ঘরে একমাত্র সন্তান। প্রেমিক বা প্রেমিকার জন্য গোটা জীবনটা বিনা যুদ্ধে দিয়ে দিলে মধ্য বা বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের জীবনটাও যে নিঃস্ব হয়ে যায়, সে কথা শুরুর আগে বা ছোট থেকেই একটু একটু করে শিখিয়ে না তুললে নিজেদের নিজেরাই হত্যা করা হয় না? সত্যম্,শিবম্, সুন্দরম্— এই তিনটি শব্দের মধ্যে সত্যম্ শব্দটির অবস্থান সর্বাগ্রে। সুন্দর সর্বশেষে। এর মর্মার্থ গভীর। যা কিছু সুন্দর, তা সত্য নাও হতে পারে। কিন্তু যা কিছু সত্য তার স্থান সবার আগে, কারণ সত্যের প্রতিষ্ঠা না হলে সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জীবনে প্রেমের সঙ্গে প্রত্যাখ্যানও সত্য। তাকে গ্রহণ করাও শিখতে হবে।
আজকাল যারা লেখাপড়ায় ভাল তাদের মধ্যেও কোনও কোনও বিষয়ে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ার জন্য আবেগের বশে দুর্ঘটনার মাত্রা ক্রমবর্ধমান। এমনকী প্রত্যাশা পূরণ না হলেই অবসাদের শিকার ও পরিণতিতে আত্মহত্যা। যৌথ পরিবার ভেঙে অণুপরিবার হওয়ার ফলে আবেগ প্রকাশের পরিধি ছোট হয়ে গেছে। কেবল জ্ঞান নিয়েই জীবন সম্পূর্ণ হয় না। নিজের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে বৃহৎ পৃথিবীটার সঙ্গেও একটু সরাসরি সংযোগ খুবই জরুরি। না বুঝলে নিজেদেরই সর্বনাশ।
রীনা আইচ পণ্ডিত
বেলগাছিয়া
বাংলা নামে দেশ
• বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি, এই তিনটি ভাষাতেই পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ করার নতুন একটি প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট রাজ্য পাঠাচ্ছে জেনে খুবই খুশি হলাম। সিদ্ধান্তটি রাজ্য মন্ত্রিসভায় গৃহীত হয়েছে (‘৩ ভাষায় ‘বাংলা’ নাম চাইছে রাজ্য’ ৯-৯)। খুবই যুগোপযোগী ও প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত। দেরিতে হলেও নতুন(?) নামকরণ বাস্তবায়নের পথে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেল রাজ্য সরকার। ‘বাংলা’ নামে জাতীয় স্তরে এ রাজ্যের কিছু সুবিধা রয়েছে।
অপর দিকে, ‘পূর্ব’-এর অস্তিত্ব বিলোপে ‘পশ্চিম’ বহাল রাখার যৌক্তিকতাও বিচার্য হয়েছে। কোনও ভূখণ্ডের নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সেই স্থানের অধিবাসীদের ভাষা-জনজাতিগত পরিচয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিষয়। সুপ্রাচীন ‘ঐতরেয় আরণ্যক’ গ্রন্থে ‘বঙ্গ’ নামটির উল্লেখ রয়েছে। প্রথম শতাব্দীতে উৎকীর্ণ পভোসার গুহালিপিতে ‘বঙ্গপাল’ শব্দটি পাওয়া গিয়েছে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে কালিদাসের রঘুবংশে একাধিকবার বঙ্গ নামের উল্লেখ রয়েছে। ১২০৭ সালে সংকলিত সদুক্তিকর্ণামৃতে শ্রীহট্টের এক জন কবির সংস্কৃত শ্লোকে বঙ্গাল-এর উল্লেখ রয়েছে। মানসোল্লাস গ্রন্থে আছে ‘গৌড় বঙ্গাল’। মুঘল যুগের প্রামাণ্য ঐতিহাসিক গ্রন্থ আবুল ফজলের ‘আইন-ই-আকবরি’-তে ‘সুবে-এ-বাঙ্গাল’ বলা আছে। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে পাওয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি পত্রেও (সনদ) এই নামের সমর্থন পাওয়া গিয়েছে।
বিশিষ্ট ভাষাতত্ত্ববিদগণের আলোচনা থেকে জানা যায়, ‘বঙ্গ’ থেকেই ভাষা বিবর্তনে ‘বঙ্গাল’ বা ‘বাঙ্গালা’ এবং এ নামটিই কালক্রমে কথ্য অপভ্রংশে ‘বাংলা’ হয়েছে। ফলে, পরোক্ষে ‘বাংলা’ নামকরণে ‘বঙ্গ’ ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণই রইল। বলা যায়, জনসাধারণের মুখের ভাষাকে এ এক বিরাট স্বীকৃতি। যা ভাষার গরিমাকে বৃদ্ধি করে। পরিশেষে, বিখ্যাত ভাষাবিদ সুকুমার সেন বলেছেন, ভাষা লইয়া দেশ। যে রাজ্যের প্রধান মাতৃভাষা ‘বাংলা’, সেই রাজ্যের নাম সরকারি ভাবে ‘বাংলা’ হতে চলেছে এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কী আছে?
সাবির চাঁদ
রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ
দাশনগর স্টেশন
• ভারতীয় রেলের দক্ষিণ পূর্ব শাখার খড়্গপুর ডিভিশনে হাওড়া জেলার দাশনগর স্টেশনে আপ লাইনের প্ল্যাটফর্ম এবং ডাউন লাইনের প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সংযোগকারী ওভারব্রিজের জন্য নিত্যযাত্রীদের আবেদন অনেক দিনের। দাশনগর এই শাখার অন্যতম একটি ব্যস্ত স্টেশন। একপ্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রেললাইন পারাপার করেন যাত্রীরা। এমনিতেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের বেহাল অবস্থা। আপ বা ডাউনের লোকাল ট্রেন কখনওই সময়ে আসে না। ন্যূনতম পনেরো মিনিট কখনও বা তা আধ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে আসে। চারটি লাইন সংবলিত এই স্টেশনের মাঝের লাইনটি দিয়ে মুখ্যত এক্সপ্রেস এবং গ্যালপিং লোকাল যাতায়াত করে। ওই সব ট্রেন স্টেশনের অদূরের সিগন্যালে আটকে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওভারব্রিজ না থাকার জন্য নিত্যযাত্রীদের আটকে যাওয়া ট্রেনের অপর প্রান্তে থাকা নিজ গন্তব্যের ট্রেন পেলেও তা ছেড়ে দিতে হয় এবং পরবর্তী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় এবং কোনও ট্রেন সময়ে না ঢোকার জন্য যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ হয় না। একটি ওভারব্রিজ নির্মিত হলে অনেকে উপকৃত হবেন।
সৌপ্তিক পাল
ইছাপুর, শিয়ালডাঙা, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়