খাপ খোলা অসভ্যতা
রোহন ইসলামের ‘আমাদের এই খাপ পঞ্চায়েত’ (৭-১২) পড়ে মুগ্ধ হলাম। সত্যিই এখন সোশ্যাল মিডিয়া নামক বস্তুটি হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকগুলো খাপ পঞ্চায়েতের সমষ্টি। কিছু মানুষ সাধারণ কথাবার্তা বা বন্ধুত্বের জন্য ফেসবুক ব্যবহার করলেও, অধিকাংশ লোক যেন এখানে আছেন অবাধ ইতরামি করার জন্য। কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, কোনও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, এর-তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা, মেরে ফেলা কেটে ফেলার ডাক দেওয়া, এই হচ্ছে তাঁদের সারা দিনের কাজ। এও এক রকমের গণধোলাই। ভার্চুয়াল গণধোলাই। এই লোকেরাই চোরকে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে তার বুক ভেঙে দেয়, চোখ গেলে দেয়, আর বলে ন্যায়বিচারের পক্ষে লড়ছি।
আর সবচেয়ে বড় সুবিধে হয়েছে, এখানে কোনও সেন্সর নেই, কোনও নিষেধ করার ক্ষমতাওয়ালা কর্তা নেই। তাই যা খুশি বলা যায়, এবং যে কোনও ভাষায় বলা যায়। এই লাইসেন্স পেয়ে সবার আগল খুলে গিয়েছে। অশালীন ভাষা প্রয়োগের উৎসব চলেছে। যে যত জঘন্য গালাগাল প্রয়োগ করতে পারে তার লেখায়, সে তত স্মার্ট। আসলে, এত দিন সমালোচনার অধিকার থাকলেও, এমনকী প্রবন্ধে-নিবন্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণের সুযোগ থাকলেও, একেবারে খুল্লমখুল্লা অভদ্র দাঁত-খিঁচনো আক্রমণের সুযোগ ছিল না। ধরে নেওয়া হত, যাঁরা সমালোচনা করছেন, কিছুটা শিক্ষিত হয়ে, যুক্তি দিয়ে তা করবেন। কিন্তু এখন সমালোচনার একমাত্র যোগ্যতা, কষে গালাগাল দিতে পারা। তাই অনেকেই এই মাঠে লাফিয়ে নেমে পড়েছেন। যে লেখক, শিল্পী, পরিচালককে পছন্দ নয়, তাঁদের নামে চূড়ান্ত অসভ্য কথা লেখা যাচ্ছে, সমাজের কাকে কাকে কী ভাবে ‘লিঞ্চ’ করা উচিত তা নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে ন্যক্কারজনক ভাষায় মত দেওয়া যাচ্ছে। এবং এই পোস্ট-করনেওয়ালারা নিজেদের ভেবে নিচ্ছেন ক্রিটিক, সমাজ-সংস্কারক।
অপ্রতিম ভৌমিক কলকাতা-৬৮
মনে রাখার মতো
জয়ন্ত ঘোষাল লিখেছেন, ‘১৮৫৫ সালে এক বার অযোধ্যায় দু’পক্ষের সংঘাতে বহু লোক মারা যায়। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্রিটিশ রাজশক্তি’ (‘কুসংস্কারেই নির্বাচনী সিদ্ধি’, ২৯-১১)। ১৮৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শাহ গুলাম হুসেন ও মৌলবি মুহম্মদ শাহ-র নেতৃত্বে অযোধ্যায় হনুমানগড়ির হনুমান মন্দিরের জমিতে একটি মসজিদ গড়ার দাবিতে স্থানীয় মুসলমানদের উগ্র আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য ছিল, আসলে জায়গাটি একটি পুরনো মসজিদের। মন্দিরের মাটির নীচে নাকি একটি মসজিদ চাপা পড়ে আছে। হনুমান মন্দিরটি অবশ্য তৈরি করে হিন্দু বৈরাগীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ওয়াজিদ আলির পূর্বপুরুষ নবাব সুজাউদ্দৌলা।
সুলতানপুরের নাজিম আগা আলি খান কোনও রকমে আন্দোলনকারীদের নিরস্ত করে বলেন, এই বিষয়ে নবাবের সিদ্ধান্ত যা হবে, তা-ই সবাইকে মানতে হবে। এই সময় ‘ব্রিটিশ রাজশক্তি’ নয়, অযোধ্যার নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ-ই পরিস্থিতির তদন্তের স্বার্থে, মন্দিরের মাটির নীচে কোনও মসজিদ সত্যিই আছে কি না দেখার জন্য, তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যার সদস্যরা ছিলেন, হিন্দু— স্থানীয় রাজা মান সিংহ, মুসলান— নাজিম আগা আলি খান এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন আলেকজান্দার ওর।
এরই মধ্যে ২৮ জুলাই আন্দোলনকারী নেতারা হনুমানগড়ের মন্দির চত্বরে নমাজ পড়ার ডাক দিলেন, তাতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল। নবাবের নির্দেশে নবাবি ফৌজ নিয়ে ফৈজাবাদ থেকে হনুমানগড়িতে ছুটে এলেন ক্যাপ্টেন ওর ও ক্যাপ্টেন হিয়ার্স। তবু দাঙ্গা আটকানো গেল না। দু’পক্ষেরই প্রায় সত্তর জন মানুষ নিহত হলেন। মিটমাটের চেষ্টায় নবাব আন্দোলনকারী নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। প্রস্তাব এল, মন্দিরের পাশেই একটি ছোট মসজিদ গড়ে তোলার, মাঝে থাকবে একটি উঁচু পাঁচিল। কিন্তু হিন্দু বৈরাগীরা এই প্রস্তাব মানতে চাইলেন না। এই সময় তদন্ত কমিশনের রায় বেরল: মন্দিরের জমিতে কখনওই মসজিদ ছিল না। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে তাঁরা জমিটির কয়েকটি দলিলও পেশ করলেন। এই অবস্থায় চূড়ান্ত হতাশ মুসলমানদের উদ্দেশে বরেলির মৌলবি আমির আলি জেহাদের ডাক দিলেন। নবাব অযোধ্যার ইসলামি পণ্ডিত ও ধর্মীয় নেতাদের কাছে জানতে চাইলেন, এই জেহাদ ইসলামি শাস্ত্রসম্মত কি না? মৌলবিদের নেতা অযোধ্যার প্রধান মুজতাহিদ সৈয়দ মুহম্মদ নাসিরাবাদি নবাবকে জানালেন, এই জেহাদের ডাক সম্পূর্ণ ভাবে অনৈতিক ও ইসলাম শাস্ত্রবিরোধী।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ফৈজাবাদে জড়ো হয়ে মুসলিম আন্দোলনকারীরা হনুমানগড়ির দিকে এগোতে থাকলেন। নবাবের ফৌজ তুমুল লড়াই করে রুদৌলিতে তাদের আটকে দিল। মারা গেলেন প্রায় চারশো আক্রমণকারী ও নবাবের ফৌজের বাইশ জন। শ্রীপান্থ তাঁর ‘মেটিয়াবুরুজের নবাব’ বইয়ে লিখেছেন, ‘এ ভাবে রক্তের মূল্যেই সে দিন হনুমানগড়ে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন করেছিলেন ওয়াজিদ আলি শাহ।’
আর এই ঘটনার ১৩৭ বছর পরে স্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ (! ) শাসকেরা কিন্তু মৌলবাদীদের কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন, ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন।
পীযূষ রায় বেহালা
দুই ফাঁদ
রাজস্থানে আফরাজুলের হত্যা নিয়ে এ মুহূর্তে তোলপাড় চলছে। যদি এটা নিছক সন্দেহের বশে, হিন্দুত্ব রক্ষার তাগিদে একটা মানুষকে কুপিয়ে পুড়িয়ে খুনের ঘটনাই হয়, তবে হয়তো ‘লাভ জেহাদ’-এর মতো বিষাক্ত ধারণার প্রভাবে ভবিষ্যতে আরও রক্ত, পোড়া মাংসের গন্ধে এই দেশ ভরে যাবে।
আর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গুরুগ্রামে। নিজের মা আর বোনকে পিটিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে ষোলো বছরের কিশোর! কেন? তাকে নাকি মোবাইলে গেম খেলতে বাধা দেন তার মা। পড়তে বসতে বলেন। কিন্তু সে মোবাইল গেমে এতই আসক্ত যে নিজের মা-বোনকে খুন করে।
দুটি হত্যাকাণ্ডকে পাশাপাশি রাখলে, এক ভয়ানক বার্তা উঠে আসে। এক দিকে সমাজে তৈরি হচ্ছে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা মিলিয়ে এমন এক আবহাওয়া, যা একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে আর একটি গোষ্ঠীর সংঘাতে উৎসাহ দিচ্ছে। অন্য দিকে তৈরি হচ্ছে এমন এক অ-সামাজিক আবহ, যেখানে প্রযুক্তির তথাকথিত ‘উন্নতির’ কুফল হিসেবে, জন্মাচ্ছে এক ভয়ংকর ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, যার ফলে এক কিশোর নিজের মা বোনকেও খুন করতে পারে নির্দ্বিধায়!
শুভময় ভট্টাচার্য ই-মেল মারফত
ক্যামেরার টাকা
‘ক্যামেরা তো চাই, টাকা কই স্কুলের’ (৮-১২) পড়লাম। সমস্যাটি যখন রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলের, তখন কিছুটা টাকা দিক রাজ্য সরকার। আর বাকিটার জন্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ, পরিচালন কমিটি, সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা উদ্যোগ নিয়ে (প্রয়োজনে কমিটি গঠন করে), এলাকার সম্পন্ন পরিবার ও বিদ্যালয়ের সম্পন্ন প্রাক্তনীদের কাছে অর্থসাহায্যের আবেদন করুন।
অমিত সরকার নিমতলাবাজার, নদিয়া
পারেন না
‘পুলিশের নাচ’ (১০-১২) শীর্ষক চিঠি পড়ে অবাক হলাম। উর্দি পরে পুলিশ থানায় নাচছেন, আর তাঁকে এক জন সমর্থন করছেন? এক জন মাস্টারমশাই টিফিনের সময় প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় পান। সেই সময় কি তিনি তাঁর প্রেমিকাকে ফোনে ডেকে নিয়ে, টিচার্স রুমে বসে গল্পগুজব করতে পারেন?
বৃন্দাবন ঘোষ বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়