Football

সম্পাদক সমীপেষু: ফুটবলে পিছিয়ে

দেশে ফুটবলের মানের উন্নতির প্রচেষ্টায় কয়েক বছর আগে বেসরকারি উদ্যোগে শুরু হওয়া ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) এই বছরে হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:০৫
Share:

সম্প্রতি প্রকাশিত ফিফা তালিকায় আমাদের পুরুষ ফুটবল দল বিশ্বের ২১০টি ফুটবল খেলিয়ে দেশের মধ্যে আরও ছয় ধাপ পিছিয়ে নেমে এল ১৪২তম স্থানে। ২০২৩ সালে থাকা ১০২তম স্থান থেকে মাত্র দু’বছরে ৪০ ধাপ নেমে যাওয়াটা সত্যিই দুঃখজনক। খুবই উদ্বেগের বিষয় যে, আমরা পৃথিবীর সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ হয়েও ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি। ১৯৫১, ১৯৬২ সালে ফুটবলে এশিয়াডে সোনাজয়ী এবং ১৯৭০ সালে ব্রোঞ্জজয়ী দেশের এমন দুরবস্থা কেন, সে নিয়ে অবিলম্বে দেশের প্রশাসনিক স্তরে গভীর মূল্যায়ন এবং উপযুক্ত পদক্ষেপের প্রয়োজন।

দেশে ফুটবলের মানের উন্নতির প্রচেষ্টায় কয়েক বছর আগে বেসরকারি উদ্যোগে শুরু হওয়া ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) এই বছরে হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ে আইএসএল শুরু করার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের খেলোয়াড়রা যাতে বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে খেলে আরও দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, নিজেদের উন্নত করতে পারেন। কিন্তু শুধুমাত্র তাতেই যে আমাদের জাতীয় ফুটবলের মানের বিন্দুমাত্র অগ্রগতি হবে না, সেটা ফিফার তালিকায় আমাদের ক্রমাগত পিছিয়ে যাওয়া থেকেই পরিষ্কার। তা হলে কী করণীয়, যাতে আমরা খুব দ্রুত উন্নতি করতে পারি?

যত দূর মনে হয়, এ দেশে প্রতিভার কমতি নেই। চাই উপযুক্ত পরিকাঠামো ও প্রশাসনিক সদিচ্ছা। আর যদি দেশে প্রতিভার অভাব সত্যিই থাকে, তা হলে প্রতিভাবান বিদেশি প্লেয়ারদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে নাগরিকত্ব দিয়ে এ দেশের হয়ে খেলানো যেতে পারে না? এই ব্যাপারে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন এবং সদর্থক পদক্ষেপের প্রয়োজন। পাশাপাশি আমাদের জাতীয় দলের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বা আমাদের থেকে এগিয়ে থাকা বিদেশি দলগুলির বিরুদ্ধে নিয়মিত ম্যাচে অংশগ্রহণ করা দরকার। দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে ক্লাবগুলিকে তাদের প্লেয়ারদের অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে, এই ব্যাপারে প্রয়োজন হলে সরকারকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। আশির দশকে কেন্দ্রীয় সরকারি ক্রীড়া দফতরের প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছিল জওহরলাল নেহরু গোল্ড কাপ, যেখানে আমাদের জাতীয় দল খেলার সুযোগ পেত আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, পোল্যান্ডের মতো ফুটবলে অগ্রণী দেশগুলির বিরুদ্ধে। ওই সময়ে আমাদের ফুটবলের প্রভূত উন্নতি খেয়াল করা গিয়েছিল। অনেক দশক হয়ে গেল ওই টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কি এই ধরনের টুর্নামেন্ট চালু করা যায় না?

২০২৬ সালে বিশ্বকাপে ৪৮টি দেশ খেলবে, ২০৩০ সালে মরক্কো, স্পেন, পর্তুগালে হওয়া বিশ্বকাপেও অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা একই থাকবে। শুনেছি ২০৩০-এ ৬৪টি দেশ খেলানোর ভাবনাচিন্তাও করা হচ্ছে। আমরা কি এক বার চেষ্টা করে দেখতে পারি না, সেই ৬৪টি দলের মধ্যে এ দেশের নামটিও ঢোকানো যায় কি না?

আনন্দ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৭৮

মান নিম্নগামী

‘দেড় লক্ষ জনসংখ্যার কুরাসায়ো বিশ্বকাপে‌’ (২০-১১) প্রসঙ্গে কিছু কথা। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত, বিশ্বের ক্ষুদ্রাকার দেশগুলির অন্যতম, কুরাসায়ো আগামী ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ইতিপূর্বে জানা গিয়েছিল, পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে অতলান্তিক মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র, পাঁচ লক্ষের কিছু অধিক জনসংখ্যার কেপ ভার্ডও বিশ্বকাপে খেলবে। প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৫২ বছর পর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত আরও একটি দেশ হাইতিও‌ খেলবে আসন্ন বিশ্বকাপে।

দেখা যাচ্ছে, ফুটবলে বিশ্বের অনেক অজানা ছোট-মাঝারি দেশের উত্থান হচ্ছে অবিশ্বাস্য গতিতে এবং এদের অনেকেই বিশ্বকাপও খেলছে।‌ যেমন, কুরাসায়ো ফিফায় অন্তর্ভুক্ত হয় ২০১০ সালে ও মাত্র পনেরো বছর পরেই অংশগ্রহণ করছে বিশ্বকাপে।‌ কেপ ভার্ড ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা লাভ করে ও ফিফার সদস্য হয় ১৯৮৬ সালে। আর, হাইতি ১৯৩৪ সালে ফিফার সদস্য হয় ও ১৯৭৪ সালে প্রথম বার বিশ্বকাপে খেলে। এ দিকে ভারত ১৯৪৮ সালে ফিফার সদস্য হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত চার বার অলিম্পিক ফুটবলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারলেও বিশ্বকাপে খেলার কোনও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ১৯৭০ সালের ব্যাঙ্কক এশিয়ান গেমসে শক্তিশালী জাপানকে হারানোর পর থেকেই কোনও অজ্ঞাত কারণে আর মানোন্নয়ন হয়নি এ দেশের ফুটবলের। যেখানে ক্রিকেট, হকি, শুটিং, ব্যাডমিন্টন, তিরন্দাজি ছাড়াও আরও অনেক প্রকারের খেলায় বিশ্ব ও এশিয়ায় ভারত দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে, সেখানে ফুটবলে এমন দুয়োরানির মতো অবস্থা কেন? কোনও সঠিক পরিকল্পনা, উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়াই দিশাহীন ভাবে এত কাল এই জনপ্রিয় খেলাটি খেলা হয়ে আসছে এ দেশে। এ ভাবে আর কত দিন চলবে?

তাপস সাহা, শেওড়াফুলি, হুগলি

সান্ত্বনা

‘আজও নেই’ (১৪-১১) শীর্ষক পত্রে আসন্ন ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে কেপ ভার্ড-র অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ কর লিখেছেন, “এ ব্যাপারে প্রথম সর্বকনিষ্ঠ দেশ হল ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী তৎকালীন তিন লক্ষ জনসংখ্যার দেশ আইসল্যান্ড।” এই প্রসঙ্গে জানাই, ২০০৬ নয়, ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে জনসংখ্যার নিরিখে তৎকালীন ক্ষুদ্রতম দেশ আইসল্যান্ড (তখন জনসংখ্যা ছিল সাড়ে তিন লক্ষ) প্রথম বার (এ পর্যন্ত এক বারই) বিশ্বকাপে খেলে। তবে সে বার আইসল্যান্ডের বিশ্বকাপে খেলা কোনও মতেই ভাগ্যের খেলা ছিল না। কারণ, তার আগেই ২০১৬ সালের ইউরো কাপে তারা প্রথম বারের জন্য (এ পর্যন্ত এক বারই) শুধু যোগ্যতা অর্জনই করেনি, শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেছিল। এই পর্যায়ে ফ্রান্সের কাছে হারলেও দু’টি গোল করেছিল তারা। বিশ্বকাপের পরই সর্বাপেক্ষা কঠিন ফুটবল প্রতিযোগিতা ইউরো কাপে শেষ আটে উঠে দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের চমকে দিয়েছিল পেশায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, চিত্রপরিচালকদের নিয়ে গড়া এই দলটি। ২০২৬ বিশ্বকাপে অবশ্য জনসংখ্যার নিরিখে ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে আইসল্যান্ডের এই রেকর্ডটি ভেঙে দিতে চলেছে ১,৫৬,১১৫ জনবসতির ক্যারিবিয়ান দেশ কুরাসায়ো। আরও যে সব কম জনসংখ্যার দেশ বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলেছে, তারা হল কাতার (৩১ লক্ষ), উরুগুয়ে (৩৪ লক্ষ), ক্রোয়েশিয়া (৩৮ লক্ষ), পানামা (৪৫ লক্ষ) এবং নিউ জ়িল্যান্ড (৫৩ লক্ষ)।

পত্রলেখক হতাশা প্রকাশ করে লিখেছেন, “...১৪০ কোটির ভারত বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠতে পারল না আজও।” তবে ভারতবাসীর সান্ত্বনা অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক কূটনীতি, সামরিক শক্তি তথা ক্রীড়া বিশ্বের প্রবল পরাক্রমশালী শক্তি, আমাদের প্রায় সমান জনসংখ্যার প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিনও এ পর্যন্ত মাত্র এক বারই (২০০২) বিশ্বকাপে খেলেছে।

সজলকান্তি ঘোষ, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

টনক নড়বে?

ভারতের সাম্প্রতিক ফিফা র‌্যাঙ্কিং খুবই হতাশাজনক। হতাশা আরও বাড়ে যখন মনে পড়ে এএফসি এশিয়ান কাপে ভারতকে হারানোর ফলেই পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশ আজ ১৮৩ থেকে ১৮০ র‌্যাঙ্কিংয়ে উঠে আসতে পেরেছে। এখনও কি আমাদের সর্বভারতীয় ফুটবল প্রশাসন ও সরকারের টনক নড়বে না? আইলিগ, আইএসএল কবে হবে কেউ জানে না। ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী ভারতীয় দল এখন এশিয়ায় ৪৬টা দেশের মধ্যে ২৭তম। ছোট্ট দেশ কুরাসায়ো বিশ্বকাপ খেলবে আর আমরা রাত জেগে টিভির পর্দায় গলা ফাটাব অন্যদের জন্য?

রাধারমণ গঙ্গোপাধ্যায়, বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন