Bangladesh Situation

রাতভর বিক্ষোভ বাংলাদেশে! ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ সংবাদপত্রের অফিসে, হামলা চলল ভারতের উপদূতাবাসেও

বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে ভাঙচুরের পরেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ‘বিবিসি বাংলা’-র প্রতিবেদন অনুসারে, দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভিতরে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৭
Share:

বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’-র দফতরে অগ্নিসংযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায়। ছবি: রয়টার্স।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ। উত্তেজিত জনতার রোষ থেকে রেহাই পেলেন না সাংবাদিকেরাও। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এব‌ং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে ভাঙচুরের পরেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ‘বিবিসি বাংলা’-র প্রতিবেদন অনুসারে, দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ভিতরে আটকে পড়া সাংবাদিকদের উদ্ধার করা হয়। আটকে পড়া সাংবাদিকদের একাংশ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন।

Advertisement

অন্য দিকে, খুলনায় এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করেছে উত্তেজিত জনতা। ময়মনসিংহে এক যুবককে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়িতে ফের ভাঙচুর চালানো হয়েছে। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলি জানিয়েছে, রাজশাহীতেও মুজিবের অপর একটি বাড়ি এবং আওয়ামী লীগের দফতর ভাঙচুর করা হয়েছে। বাংলাদেশের বহু জায়গাতেই বিক্ষোভকারীদের মুখে ছিল শেখ হাসিনা এবং ভারত-বিরোধী স্লোগান। চট্টগ্রামে ভারতীয় উপদূতাবাস লক্ষ্য করে ঢিল-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। রাত থেকে উপদূতাবাসের সামনে অবস্থানে বসেছেন ছাত্র-যুবদের একাংশ।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি নিয়ে চিন্তিত মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারও। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবার ঢাকায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাতে হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঢাকার শাহবাগে জমায়েত করেছিলেন বহু মানুষ। তার পরেই দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঢাকার কারওয়ান বাজারে ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর অফিসে ভাঙচুরের পর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভিতরে আটকে পড়েন সাংবাদিকেরা। ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর মহিলা সাংবাদিক জ়াইমা ইসলাম সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে লিখেছেন, “আমি ঠিক করে শ্বাস নিতে পারছি না। এখানে খুব বেশি ধোঁয়া। আমি ভিতরে রয়েছি। আপনারা আমায় হত্যা করছেন।” রাত ২টো নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে সব সাংবাদিককে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে আনা হলেও শুক্রবার দুই সংবাদপত্রের কোনও মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশিত হবে না। নিরাপত্তাজনিত কারণে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের ছুটি দেওয়ায় ডিজিটাল সংস্করণেও কাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে।

Advertisement

জুলাই আন্দোলনের (২০২৪ সালের অগস্ট মাসে যার জেরে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন) অন্যতম নেতা হাদি গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। ইউনূস সরকারের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের এক কর্মী হাদির মাথায় গুলি করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। ইনকিলাব মঞ্চ নামক সংগঠনের আহ্বায়ক হাদির মৃত্যুর পরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়। খুব সম্ভবত পরিস্থিতি আঁচ করেই গভীর রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইউনূস। সেখানে তিনি ‘ধৈর্য ও সংযম’ বজায় রাখার আবেদন জানান। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিক্ষোভকারীরা দেশের অন্তর্বর্তী প্রধানের আবেদন কার্যত অগ্রাহ্য করেছেন।

বৃহস্পতিবার রাতেই ইউনূস জানিয়েছেন, হাদির মৃত্যুতে আগামী শনিবার বাংলাদেশে শোকদিবস পালন করা হবে। জাতীয় পতাকাও অর্ধনমিত রাখা হবে। শুক্রবার আয়োজন করা হবে বিশেষ নমাজ প্রার্থনার। সেই সঙ্গে তিনি জানান, ওসমানের স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব গ্রহণ করবে সরকার। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে হাদির দেহ বাংলাদেশে ফিরবে। হাদির দেহ ফিরলে পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement