Sandhya Mukhopadhyay

সম্পাদক সমীপেষু: বাংলাকে অবহেলা

মান্না দে-কে অবিলম্বে মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করার দাবি জানাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৮
Share:

বাংলার কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে তাঁর শেষ বয়সে ‘পদ্মশ্রী’ দেওয়ার প্রস্তাব শুধু তাঁকে নয়, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গবাসীকেই অপমানিত করেছে। তবে সেই সঙ্গে এ কথাও অনস্বীকার্য যে, সঙ্গীতজীবনের প্রায় শুরু থেকেই তিনি খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা সত্ত্বেও, সেই নেহরুর আমল থেকে মনমোহন সিংহ পর্যন্ত কোনও সরকারেরই ইতিপূর্বে মনে হয়নি যে, তাঁকে কোনও সরকারি খেতাব দেওয়া দরকার। সেই ত্রুটি বর্তমান সরকার কিছুটা হলেও শোধরাতে চেয়েছে। তাই বলে তাঁকে এখন সর্বনিম্ন পদ্ম-সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের প্রতি এই অবহেলা আজ নতুন নয়, বরং বহু দিন ধরে চলে আসছে, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সর্বজনশ্রদ্ধেয় সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে। লতা মঙ্গেশকর, ভূপেন হাজরিকা ‘ভারতরত্ন’ খেতাবে ভূষিত হলেও, তাঁদের সমসাময়িক ও সমান প্রতিভাবান মান্না দে-কে কিন্তু ‘ভারতরত্ন’ খেতাব দেওয়া হয়নি। জানি না, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে কখনও তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল কি না। আশ্চর্যের কথা, সচিন তেন্ডুলকর অবসর নেওয়ার পরই তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার প্রস্তাব দেন স্বয়ং লতাজি, অথচ নিজে সঙ্গীতজগতের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও মান্না দে-র কথা তাঁর এক বারও মনে পড়ল না, এমনকি মান্না দে-র মৃত্যুর পরেও! মান্না দে-কে অবিলম্বে মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত করার দাবি জানাই।

Advertisement

সমর গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা-৪৮

Advertisement

যোগ্যতার বিচার

অনেকের বিশ্বাস, রাষ্ট্রের দেওয়া সম্মানকে প্রত্যাখ্যান করলে তা নাকি দেশের প্রতি অসম্মান প্রকাশ করা। তাই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আরও এক দলের ধারণা, এই জাতীয় পুরস্কার শুধু তাঁদেরই পাওয়া উচিত, যাঁরা দেশের জন্য কিছু করেছেন, শিল্পীরা তো শুধু নিজের জন্যেই কাজ করে থাকেন। দু’টি কথা না বলে পারছি না। এক, দেশ বলতে দেশবাসীকেও বোঝায়, আর দুই, পুরস্কার পেতে যেমন যোগ্যতা অর্জন করতে হয়, পুরস্কার দিতে গেলেও কিছু যোগ্যতা লাগে। এক জন মানুষের কোনও পুরস্কার গ্রহণ বা বর্জন করার সম্পূর্ণ অধিকার আছে, সেটা যে কারণেই হোক না কেন। অগুনতি সঙ্গীতপ্রিয় বিশ্ববাসীর থেকে বিগত কয়েক দশক ধরে যে শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালবাসা এঁরা পেয়ে আসছেন, সেটাই বলে দেয় সঙ্গীত জগতে এঁদের অবস্থান। শিল্পীরা সারা পৃথিবীর দরবারে নিজের শিল্প দিয়ে নিজের দেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকেই উজ্জ্বল করে থাকেন, তাই শিল্পীদের ছোট করার এই চেষ্টা হাস্যকর। আর পুরস্কার দেওয়ার যোগ্যতার প্রসঙ্গ আসে, কারণ এত দিন পরে যে নিজের দেশের মণিমুক্তো দেখে, তার দৃষ্টিশক্তি নিয়ে সন্দেহ জাগে।

সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়

বেঙ্গালুরু

দেশের সম্মান

পুরস্কার গ্রহণ বা বর্জন করা যে যার ব্যক্তিগত বিষয়। বাংলার যে মানুষরা পদ্মশ্রী বা পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা জানতে চাই, রাষ্ট্র যাঁদের এই জাতীয় পুরস্কারের জন্যে নির্বাচিত করে, তাঁরা সেই পুরস্কার ফিরিয়ে দেন কেন?

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পুরস্কার ফেরালেন, কারণ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার না নেওয়াটা নাকি তাঁদের দলের অলিখিত পরম্পরা। এটা কি তাঁদের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার একটি প্রকাশ? বুদ্ধবাবুকে পুরস্কৃত করতে চাওয়াটা যদি মোদী সরকারের রাজনীতি হয়ে থাকে, পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়াটাও কি রাজনীতি নয়? বামপন্থী নেতৃত্ব কি ভেবে দেখেছেন, জনতার রায়ে তাঁরা যদি কখনও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান, সে দিন অন্যরা পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে রাজনীতি খুঁজে পাবেন? প্রত্যাখ্যান করে অনেকে তৃপ্ত হবেন? তাই বলি কি, এই সব সঙ্কীর্ণ রাজনীতি সরিয়ে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দেখতে হবে। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারকে প্রত্যাখ্যান করা, পরোক্ষে কিন্তু রাষ্ট্রকে অবজ্ঞা করা। তাই রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপক বিশিষ্টজনদের পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করার আগে তাঁদের ভেবে দেখতে অনুরোধ করব।

মৃণাল মাইতি

ডিভিসি, বাঁকুড়া

প্রশ্নে পদ্ধতি

পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করা নিশ্চিত ভাবেই ব্যক্তিগত পরিসরের আওতাভুক্ত, তাই এ বিষয়ে চর্চা করতে হলে বরং পদ্ধতিগত কিছু চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।

পদ্ম পুরস্কার নিশ্চিত ভাবেই সম্মানের, গর্বের। সাধারণত তা যখন কোনও শিল্পীকে প্রদান করা হয়, তখন বেশির ভাগ শিল্পী বিনয়ের সঙ্গেই তা গ্রহণ করেন। তবে অস্কার পুরস্কার সিনেমার জন্য, পুলিৎজ়ার সাংবাদিকতার জন্য, বুকার সাহিত্যের জন্য দেওয়া হলেও, পদ্ম পুরস্কার কোনও একটি ক্ষেত্রে বিশিষ্টতার নজির তৈরি করার জন্য দেওয়া হয়, এমন নয়। যোগ্যতার কোনও মানদণ্ডও জানা নেই। সরকার মনে করলে যাকে ইচ্ছে এই পুরস্কার দিতে পারে। তবে মানদণ্ড না থাকলেও এটি প্রদানের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। যত দূর জানি, পুরস্কার ঘোষণার আগেই প্রাপকের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়। যদি কেউ তা নিতে অস্বীকার করেন, বা নীতিগত কারণে পুরস্কার নিতে না চান, তা হলে তখনই তা জানিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু নাম ঘোষণার পর তা প্রত্যাখ্যান করলে দেশবাসী অস্বস্তিতে পড়েন। কেননা এটি দেশের সম্মাননীয় পুরস্কার। বঙ্গবাসীর পুরস্কার ফেরানোর রেওয়াজ অবশ্য আজকের নয়। তালিকায় রয়েছেন শিশিরকুমার ভাদুড়ী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, তারাপদ চক্রবর্তী, সলিল চৌধুরী, বাদল সরকার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত প্রমুখ বিশিষ্টজন।

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কথা নাহয় বাদ দিলাম, কেননা তাঁরা যে সিদ্ধান্তই নেন তাতে রাজনৈতিক অভিসন্ধি থাকতে পারে। কিন্তু প্রকৃত শিল্পীরা যখন এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন, তখন নতুন করে কিছু ভাবনার অবকাশ তৈরি হয় বইকি। যে নির্দিষ্ট কমিটি এই পুরস্কার দেওয়ার কাজে যুক্ত, তার সদস্যদেরও বাংলাকে নিয়ে আরও গভীর অধ্যয়নের প্রয়োজন।

শঙ্খ অধিকারী

সাবড়াকোন, বাঁকুড়া

বড় দেরি

কালজয়ী সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর। সঙ্গীতজগতের পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পশ্চিমবঙ্গে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের জন্য তিনি ভারতীয় বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে গণ-আন্দোলনে যোগ দেন, ও তাঁদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন। ১৯৭০-এ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ পান। এ বছর তিনি পদ্মশ্রী সম্মান গ্রহণ করলেন না, কী তার কারণ থাকতে পারে? সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, ক্রীড়া, মানবসেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ভারত সরকার পদ্ম সম্মান প্রদান করে। পুরস্কার দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতির হাত দিয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন। লতা মঙ্গেশকর পদ্মভূষণ পান ৪০ বছর বয়সে, এবং পদ্মবিভূষণ পান ৭০ বছর বয়সে, আশা ভোঁসলে পদ্মবিভূষণ ৭৫ বছর বয়সে, মান্না দে পদ্মশ্রী ৫২ বছরে, মহম্মদ রফি পদ্মশ্রী পান ৪৩ বছরে, এ আর রহমান পদ্মশ্রী ৩৩ বছরে, কুমার শানু পদ্মশ্রী ৫২ বছর বয়সে, এই বছর সোনু নিগম পদ্মশ্রী পেলেন ৪৯ বছর বয়সে। এখানেই প্রশ্ন থেকে যায়— তবে কেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে প্রায় ৯২ বছর বয়সে এসে পদ্মশ্রী পেতে হচ্ছে? পদ্মভূষণ প্রাপক সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ রাশিদ খানের কথায়, “তিনি ভারতরত্ন (দেশের সর্বোচ্চ সম্মান) পাওয়ার যোগ্য। তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়া উচিত ছিল।”

সুখময় সাহা

বেলডাঙা, মুর্শিদাবাদ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন