• আমাদের রাজ্যের এক রাজনৈতিক নেতা আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ‘কানা–খোঁড়া’ হলেও কর্মীদের সেই প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার নিদান দিয়েছেন (‘কানা-খোঁড়া প্রার্থী হলেও....’, ৪-৩)। প্রতিবন্ধীদের প্রতি এই অমর্যাদা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। এই মন্তব্যের প্রবল প্রতিবাদ হওয়া উচিত। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নন, বরং মানুষ হিসাবে তাঁরা সমমর্যাদার অধিকারী। ভুল হবে, যদি আমরা হেলেন কেলার, স্টিফেন হকিন্স, মাসুদুর রহমান বা সুধা চন্দ্রনের কথা ভুলে যাই। রাজনীতিকদের কাছ থেকে সমাজ আরও সহানুভূতিশীলতা আশা করে, এটাও ভুলে গেলে চলবে না।
দেবত্র দে
ব্যারাকপুর
আবেগ ফেলনা?
• সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে আইনজীবী বলছেন, গাড়ি-বাড়ির ঋণ শোধ করতে না পারলে ব্যাংক সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে, তা হলে বিজয় মাল্য, নীরব মোদীরা ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ না করে পালিয়ে যায় কী করে? এর উত্তরে প্রধান বিচারপতি বললেন, আবেগ ভরা কথায় লাভ হবে না। আমরা প্রায় সব সময়ই ভেবে নিই, যুক্তির স্থান আবেগের অনেক উপরে। কিন্তু আবেগের সঙ্গে যুক্তির কি কোনও বিপরীতমুখী সম্পর্ক আছে? শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, খেলা— যে কোনও ক্ষেত্রে গঠনমূলক কাজ ও মহৎ সৃষ্টির পিছনে থাকে আবেগ। বিচারপ্রক্রিয়ায় আবেগ ও যুক্তির সম্পর্ক সংঘাতের নয়। যুক্তিকে গভীর ভাবে বিশ্লেষণের জন্য আবেগের সাহচর্য দরকার।
প্রণব রাহা
দুর্গাপুর-৪
বাস্তব আলাদা
• ‘চাষির বন্ধু!’ (১৩-২) চিঠিতে লিখেছিলাম, ‘সরকার কৃষকের কাছ থেকে অনেক ফসল কেনে না, শুধু কেনে ধান ও গম।’ শবনম খাতুন লিখেছেন (১৭-২) ‘এই তথ্য ঠিক নয়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার চব্বিশটি শস্যের জন্য সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে।’ উনি ঠিক বলেছেন। তবে সংখ্যাটা চব্বিশ নয়, আটাশ। কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘কমিশন ফর এগ্রিকালচার কস্টস অ্যান্ড প্রাইসেস’ ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ওয়েবসাইটে এই তালিকা লিপিবদ্ধ করেছে। এর মধ্যে চারটি অর্থকরী ফসলও আছে। উনি সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য দিয়েছেন। তথ্য হিসাবে নির্ভুল। আমি বলতে চেয়েছিলাম, বাস্তবে সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্য দিয়ে ধান ও গম ছাড়া আর কিছু কেনে না। বিচ্ছিন্ন ভাবে কোনও কোনও রাজ্য সরকার কোনও ফসল কিনতে পারে। সেটা এতই অল্প যে দূরবিন দিয়ে দেখতে হয়। আটাশটা কৃষিপণ্য যদি সহায়ক মূল্যে যথাসময়ে সরকার কিনে নিত, তা হলে অভাবী বিক্রি কথাটা ভারতীয় কৃষকদের জীবন থেকে উঠে যেত। আর তাঁরা মহাজনি অত্যচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছেও নিতেন না।
২০১৭-র মাঝামাঝি মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তামিলনাড়ু ও অন্যান্য রাজ্যে ব্যাপক কৃষক বিক্ষোভ হয়েছে। আন্দোলনরত কৃষকদের মূল দাবি ছিল উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য। সহায়ক মূল্য না পেয়ে কৃষকরা গাড়ি-গাড়ি ফসল রাস্তায় ঢেলে বিক্ষোভ জানিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের কৃষকরা সয়াবিনের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। কখনও আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। পত্রলেখক লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে ধান ও পাট প্রতি বছরই সহায়ক মূল্যে কেনা হয়।’ সত্যি কি হয়? জেসিআই পাট কিনছে না। ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ কী? পঞ্জাবের টম্যাটো চাষিদের প্রতারণার ঘটনা এবং পশ্চিমবঙ্গের আলুচাষিদের ঠকানোর ঘটনা সবার জানা।
এ বার সরকারি সহায়ক মূল্যের হাল-হকিকত তদন্ত করা যাক। ‘অখিল ভারতীয় কিসান সংঘর্ষ সমিতি’র এক সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে খারিফ মরশুমের ৭টি শস্য— ধান, সোয়াবিন, তুলা, চিনাবাদাম, বাজরা ইত্যাদি ফসলের সহায়ক মূল্য না পেয়ে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ২ লক্ষ কোটি টাকা। চিনাবাদামের কথা দৃষ্টান্ত হিসাবে ধরা যাক। সরকার চিনাবাদামের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করেছে ৪,৪৫০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। বাস্তবে কৃষকরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ২,৬০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত সহায়ক মূল্য রাজ্য সরকার কর্তৃক ঘোষিত উৎপাদন খরচের চেয়েও কম। যেমন অড়হর ডাল। কেন্দ্রীয় সরকার অড়হর ডালের সহায়ক মূল্য ঠিক করেছেন ৫,০৫০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। কিন্তু রাজ্য সরকারগুলির হিসাব অনুযায়ী উৎপাদন খরচ আরও বেশি। যেমন অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী অড়হর ডালের উৎপাদন খরচ ৫,৭৭২ টাকা। তামিলনাড়ু এবং কর্নাটক সরকারের হিসাব অনুযায়ী যথাক্রমে ৬,৮৪১ টাকা এবং ৫,১০০ টাকা। বাস্তবে কৃষকরা অড়হর ডাল বিক্রি করে পেয়েছেন কুইন্টাল প্রতি ৪,৫০০ টাকা। ফলে খাতায়-কলমে আটাশটা ফসল সহায়ক মূল্যে কেনার কথা থাকলেও বাস্তবে কেনা হয় না।
কমলকুমার দাশ
কলকাতা-৭৮
সুদ ও সুরক্ষা
• হরলাল চক্রবর্তী তাঁর চিঠিতে (‘সুদের হার’, ২৩-২) আয়কর ও সুদহারের বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ব্যাংকে কম সুদহার যে কোনও দেশের শিল্পের বিকাশের পক্ষেই ভাল। একই সঙ্গে আয়কর ছাড় তুলে দিয়ে করছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর যে প্রস্তাবের কথা তিনি লিখেছেন, তাও ভাবার মতো। কিন্তু উনি যে-সব দেশে কম সুদহারের কথা লিখেছেন, সেখানে প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত মানুষজনের জন্য রাষ্ট্রের তরফে যথেষ্ট সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ব্যাংকে সুদের হার কম হলেও প্রবীণদের ‘গেল গেল’ রব তুলতে হয় না। অন্য দিকে ভারতে, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বাসে দুটি আসন বরাদ্দ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আয়কর নেওয়া হয় ডেনমার্কে। সে-দেশে সর্বোচ্চ ৬৮% এবং সর্বনিম্ন ৪২% আয়কর নেওয়া হয়। বিনিময়ে সেখানকার অবসরপ্রাপ্ত মানুষজনকে আজীবন পেনশন, নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। প্রবীণদের পরিবহণ পরিষেবাও দেওয়া হয় নিখরচায়। বিশ্বে আয়করের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার বেলজিয়ামে, তৃতীয় জার্মানিতে, চতুর্থ ফিনল্যান্ডে, পঞ্চম সুইডেনে। এই সব দেশেই নাগরিকদের পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রাষ্ট্র। ওই সব দেশে ব্যাংকে সুদের হার খুবই কম। তাতে অসুবিধা হয় না প্রবীণদের। তাই কম সুদহারের পক্ষে সওয়াল করার সময় আমাদের দেশের প্রবীণ মানুষজনের সমস্যার কথাটি না বলা হলে, মুশকিল। হরলালবাবুর চিঠি অনুযায়ী, ভারতীয়রা অতিরিক্ত সঞ্চয়ী। কেন, তা ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাসে এলার মুখ দিয়ে বলিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। ‘উপার্জনে আমাদের সুযোগ কম বলেই সঞ্চয়ে আমাদের অন্ধ আসক্তি।’ যে দেশে মানুষের ভবিষ্যৎ যত অনিশ্চিত, সে দেশে মানুষ তত বেশি সঞ্চয়ে আসক্ত হয়।
জয়ন্ত সিংহ
হাওড়া
জলাভূমি
• ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ স্মরণে সুকান্ত চৌধুরী ও জয়ন্ত বসু (২০-২) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। সুস্থ প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখা সকলের দায়িত্ব। কিন্তু ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা জলাভূমি অলাভজনক মাছ চাষে ব্যবহার করে নিজেদের আর্থিক ক্ষতি স্বীকার কেন করবেন কেউ? বৃহত্তর স্বার্থে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এটি অর্থনৈতিক যুক্তির বিষয় ও সাধারণ লোভের সংজ্ঞার বাইরে। ঠিক বাজার মূল্যে পরিবেশ রক্ষার জন্য সরকার জলাভূমি অধিগ্রহণ করলে, ভূমি মালিকরা সহযোগিতা করবেন মনে হয়।
তপন সিংহ
কলকাতা-২৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়