Coronavirus

যথেষ্ট কিট নেই, ফলে আক্রান্তের সঠিক হিসেবও নেই

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা মনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।সরকার থেকে জানানো হয়েছে যে, আগামী ৩ মে পর্যন্ত তো বটেই এবং প্রয়োজনে আরও বেশি দিন এই ‘শেল্টার-ইন-প্লেস’ নিয়ম জারি থাকবে। কারণ, সংক্রমণ ঠেকাবার এই একটাই পন্থা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৫৬
Share:

সানফ্রান্সিসকো এখন যেমন। ছবি: এএফপি।

আমরা সান ফ্রান্সিসকো বে এলাকায় থাকি। কোভিড-১৯ পৃথিবী জুড়ে যে অতিমারির আকার ধারণ করেছে, তার জেরে গত তিন সপ্তাহ ধরে আমরা ঘরবন্দি।

Advertisement

আমাদের কাউন্টি, সান্টা ক্লারা ভীষণ ভাবে সংক্রামিত। অথচ, উপসর্গযুক্ত সমস্ত মানুষকে পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। কারণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়াগনস্টিক কিট নেই। ফলে, ঠিক কত জন সংক্রামিত এবং আরও কত জন দিনে দিনে সংক্রামিত হচ্ছেন, তারও সঠিক হিসেব নেই। অতএব, সরকার থেকে জানানো হয়েছে যে, আগামী ৩ মে পর্যন্ত তো বটেই এবং প্রয়োজনে আরও বেশি দিন এই ‘শেল্টার-ইন-প্লেস’ নিয়ম জারি থাকবে। কারণ, সংক্রমণ ঠেকাবার এই একটাই পন্থা।

ফলে, অফিস-কাছারী সব বাড়ি থেকেই চলছে। রোজকার খাওয়াদাওয়া-ও আমরা কাটছাঁট করেছি। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবারও পাওয়া যাচ্ছে না। সুপারমার্কেটগুলোও আস্তে আস্তে ‘আউট-অফ-স্টক’ হয়ে যাচ্ছে। এবং কোনও ভাবে খাবার কিনে আনলেও তা দূষণমুক্ত করাটা একটা মহাযজ্ঞ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা মনে মনে প্রস্তুত যে, এই অবস্থা জুনের শেষ পর্যন্তও চলতে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন: খাঁ খাঁ করছে গোটা শহর, এ যেন এক মৃত্যুপুরী

আরও পড়ুন: কয়েক সপ্তাহ আগেও বুঝিনি এ রকম হতে চলেছে প্যারিসে

তবে, আমরা নিরাশ নই। পৃথিবীতে এমন পরিস্থিতি আগেও এসেছে। আমার জীবদ্দশায় এই প্রথম বার, কিন্তু তার মানে কালের গতিতেও প্রথম বার নয়। এমন অজানা আতঙ্ক (কখনও প্লেগ, কখনও যুদ্ধ পরিস্থিতি, কখনও মন্বন্তর) বহু বার এসেছে, মানুষকে তছনছ করেছে, তার পর আবার সব শান্ত, বিপন্মুক্ত হয়েছে। এটাই তো নিয়ম। আগেও হয়েছে, আবারও হবে ভবিষ্যতে। শুধু এ বারের বেলায় আমরা তার সাক্ষী মাত্র। বরং আমি আর আমার পরিবার ভাগ্যবান যে, এই পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝবার জন্য আমাদের সংস্থান আছে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলার জন্য আমাদের মাথার উপর একটা ছাদ আছে, খাবার সঞ্চয় করে রাখার জন্য একটা রেফ্রিজারেটর আছে। সে জন্য ঈশ্বরের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের তো সেটুকুও নেই।

আমাদের শ্রদ্ধা সেই সব অগুনতি স্বাস্থকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, খাদ্য সরবরাহকারী, স্বেচ্ছাসেবী এবং প্রত্যেকটি মানুষদের প্রতি, যাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা ত্যাগ করে জরুরি-পরিষেবা দান করে চলেছেন। এই প্রসঙ্গে বলি, এখানে বহু স্বেচ্ছাসেবক প্রবীণদের কাছে খাবারদাবার ও অন্যান্য দরকারি জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছেন। বে এরিয়ার প্রাচীনতম বাঙালি সংস্থা বিভিন্ন রকম পরিষেবা দিয়ে চলেছে। তার মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের জন্য খাবার সরবরাহ করার ব্যবস্থা, ওষুধের জোগাড় করে দেওয়া, স্বাস্থকর্মীদের জন্য গাউন ও মাস্কের ব্যবস্থা করা রয়েছে। এখানকার কোম্পানিগুলিও বিভিন্ন ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বহু সংস্থা ঘোষণা করেছে যে, তারা এই দুর্যোগের জন্য অর্থনৈতিক কারণে কোনও কর্মী-ছাঁটাই করবে না। সর্বোপরি, আমাদের স্থানীয় রামকৃষ্ণ মিশন শাখার মহারাজ ও ভক্তরা অনলাইন ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সন্ধ্যারতি এবং ‘লেকচার সিরিজ’ চালু রেখেছেন, অগণিত মানুষের মনে দিচ্ছেন প্রশান্তির ছোঁয়া।

প্রার্থনা করি, এই দুর্দিনে ঈশ্বর আমাদের সহ্যশক্তি দিন, সুদিনের প্রতীক্ষা করার ধৈর্য দিন, বিপদের মধ্যে স্বার্থপর না হয়ে মানুষের পাশে থাকার সুবুদ্ধি দিন।

ঋদ্ধিতা মুখোপাধ্যায়

সানিভেল, সান্টা ক্লারা কাউন্টি, ক্যালিফোর্নিয়া

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন