ঈশা দাশগুপ্ত তাঁর ‘রাবণবধের দেশেই...’ (২৪-১০) নিবন্ধে কর্নাটক, তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের কথা বললেও পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ তোলেননি। অথচ পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে আদিবাসী দলিত বহুজনদের দ্বারা পরিচালিত অনেকগুলি সংগঠন আজ কাঁধে কাঁধ দিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে। এঁদের প্রত্যেকেরই আদর্শ অম্বেডকর ও তাঁর আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক দর্শন। পুরোহিততন্ত্র যে একটা ধোঁকাবাজি এবং যাবতীয় অসাম্য ও অন্যায়ের মূল, এই সত্য তাঁরা উপলব্ধি করেছেন। হিন্দুত্ববাদ দীর্ঘ দিন ধরে আঁকড়ে আছে বিভিন্ন দেবদেবীর পুতুলপুজো, বিষ্ণুর দশ অবতার, মনু সংহিতা, নানান ধর্মগুরুর বুজরুকি ও আরও নানা ধরনের প্রশ্নহীন অলৌকিকতাকে। এগুলিকে ঝেঁটিয়ে দূর করাই দলিত সংগঠনগুলির মূল অ্যাজেন্ডা। তাই রাবণবধে শাস্ত্রাচারী হিন্দুমন তৃপ্ত হতে পারে, যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী দলিতহৃদয় নয়।
রাক্ষস রাবণ, দৈত্য বলি, মহিষাসুর প্রমুখ হিন্দু আখ্যানে দীর্ঘ দিন ধরে অনার্য বলে চিহ্নিত হয়ে আসছে। তাঁরা নাকি সব অশুভ শক্তির প্রতীক। তাই তাঁদের পরাজয়, তাঁদের হত্যা আর্যদের কাছে উৎসব বলে পরিগণিত। অন্য দিকে দলিত আদিবাসী যাঁরা তাঁরা মনে করেন এই সব দৈত্য-দানব-অসুর-রাক্ষসরা তাঁদের পিতৃপুরুষ। তাঁরাই এ দেশের মূলনিবাসী, যাঁদের হটিয়ে কিংবা কৌশলে পরাস্ত করে অনুপ্রবেশকারী আর্যরা দখল নিয়েছিল এ দেশের। তার পর বিজয়ীরা জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, জীবনযাপন পদ্ধতি।
আজ দলিতরা খুঁজে ফিরছে তাদের আত্মপরিচয়, আপন সংস্কৃতির উৎসকে। রাবণ উৎসব তারই অঙ্গ। এরই দোসর হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে আজ শুরু হয়েছে অসুর-স্মরণ উৎসব, দৈত্যরাজ বলির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদান। তথ্য হিসেবে উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালে পুরুলিয়ায় প্রথম বড় আকারে অসুর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক ছিল চরণ বেশরার নেতৃত্বে ‘মাঝি পারগানা গাঁওতা’। সে সভায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ উপস্থিত হন। ওই বৎসর গোটা রাজ্য জুড়ে শ’খানেক অসুর স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে সেটা বেড়ে হয় ৩৫০টির মতো। ২০১৬ সালে সভার সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০০-র কাছাকাছি। গত বছর কমবেশি ১২০০টি অসুর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এ বছর সেটা আরও বাড়বে বলে আয়োজকদের অনুমান। এই ক্রমবর্ধমান পরিসংখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে রাম-রাজনীতির উল্টো প্রান্তে রাবণ-সংস্কৃতি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে দলিত আদিবাসী সমাজের গভীরে জঙ্গি হিন্দুত্ববাদের যোগ্য প্রত্যুত্তর হিসেবে।
সনৎকুমার নস্কর
কলকাতা– ১৪৪
‘নিষিদ্ধ’ দেবদূত
‘এই তো আমাদের জীবন, তার আবার ভাল থাকা’— চার দিকে আলোর রোশনাইয়ের মাঝে মনে পড়ছে, কানে বাজছে স্বগতোক্তির মতো বলা কথাগুলো। সত্যিই তো, এঁদের ন্যূনতম মানুষের মতো স্বীকৃতিটুকু তো আজও আমরা দিতে পারলাম না বরং বরাদ্দ রাখলাম একরাশ ঘৃণা। অথচ প্রায় ১২ হাজার জন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত তা তো নিশ্চয়ই এঁদের ‘বাজার’ আছে বলেই। আরও মজার যে সেই বাজারের ‘খরিদ্দার’ কিন্তু দিব্যি সমাজে মাথা উঁচু করেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অথচ এই যৌনকর্মীরা হয়ে রয়েছেন অচ্ছুৎ। এঁদেরও যে একটা সুস্থ মন, মনুষ্যত্ব আছে সেটুকু ভাবতেও আমরা কেন ঘৃণা করি? কী জানি, হয়তো-বা আমিও এত গভীরে গিয়ে ভাবতাম না যদি না নিজের জীবনে এক অসহায় মুহূর্তে এঁদের থেকে নিঃস্বার্থ সেবা, মন ছুঁয়ে যাওয়া মমতা পাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী হতাম।
স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে আমরা টু-হুইলারে ফিরছিলাম। রাত তখন প্রায় ১২টা এবং স্বাভাবিক ভাবেই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মতো ব্যস্ত রাস্তাতেও গাড়ির চাপ বেশ কম। তা সত্ত্বেও হঠাৎ একটা ট্যাক্সি যমদূতের মতো ইন্ডিকেটর ছাড়াই আমাদের সামনে এসে পড়ল, ফলে আমরা দু’জনেই রাস্তায় ছিটকে পড়লাম। সৌভাগ্য ছিল এটাই, ওই দুর্ঘটনার জায়গাটা ছিল সমাজের এক ‘নিষিদ্ধ’ অঞ্চলের সামনে। তো সেখানকার বাসিন্দারা ‘দেবদূত’-এর মতো আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন এবং পরম মমতায় আমার স্ত্রীর সেবার দায়িত্ব তুলে নিলেন। আমার স্ত্রীকে কয়েক জন মিলে ধরে নিয়ে একটা জায়গায় বসিয়ে, ওর নোংরামাখা জুতো নিজেদের হাতে খুলে ওর প্রায় বেঁকে যাওয়া আঙুলে (যা পরে জানা যায় যে ভেঙেছিল) জল ঢেলে ঢেলে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে মালিশ করে, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মুখটা দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে অন্তত বাড়ি ফিরে যাওয়ার মতো করে সুস্থ করে তুললেন। সব থেকে মন ছুঁয়ে গিয়েছিল আসার সময় ওঁদের স্ত্রীকে সুস্থ রাখার জন্য নানান পরামর্শ দেওয়ার আকুতি দেখে। বলেছিলাম ‘ভাল থাকবেন আপনারা’, আর তার উত্তরে যা শুনেছিলাম সেটাই একদম প্রথমে লেখা কথাগুলো।
শহরবাসী যখন উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে থাকি, আলোর বন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে যাই, তখনও এঁরা থেকে যান সমাজের ব্রাত্যজনের প্রতিনিধি হিসেবেই।
মৃণ্ময় দে
আগরপাড়া
রোহিঙ্গা
‘হাড়দহের শিবির ছেড়ে এদিক-ওদিকে রোহিঙ্গারা’ (২৬-১০)। কিন্তু কেন তাঁরা চলে যাচ্ছেন? হাড়দহের ‘দেশ বাঁচাও সামাজিক কমিটি’র সম্পাদক হোসেন গাজী এর উত্তরে যা বলেছেন, তা তথ্যের দিক থেকে অসম্পূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে গত ৫ অক্টোবর ২০১৮ অসম থেকে কয়েক জন রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে, এ কথা সত্যি। মায়ানমারের বাসিন্দাদের মায়ানমারেই পাঠানো হলে রোহিঙ্গারা ভয় পাচ্ছেন কেন?
সম্প্রতি দিল্লির শাহিনবাগ, কালিন্দী কুঞ্জ শিবিরে দিল্লি পুলিশ প্রত্যেক রোহিঙ্গা বাসিন্দাকে একটি নতুন ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন ফর্ম’ ভরতে বলে। আগেও শরণার্থীদের সরকারি ফর্ম ভরে জমা দিতে হয়েছে। কিন্তু এ বারের ফর্মে এমন কিছু নতুন লেখা রয়েছে যা তাদের আতঙ্কিত করেছে এবং সেই আতঙ্ক সারা দেশের রোহিঙ্গাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে প্রত্যেক রাজ্যের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চিহ্নিত করতে বলেছে এবং তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠাতে বলেছে। ওই ফর্ম ভরে প্রত্যেক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ঘোষণা করে বলা হবে যে সে এক জন ‘মায়ানমারের বাঙালি’। যে ‘রোহিঙ্গা’ পরিচয়ের জন্য মায়ানমার থেকে এত অত্যাচার সয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে, সেই পরিচয় মুছে দিতে চাইছে। জানা গিয়েছে যে এই ফর্ম দিল্লি পুলিশ বিলি করলেও তা ইস্যু করেছে মায়ানমার এমব্যাসি। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে তারা এই আদেশ পেয়েছে। ফর্মের টেক্সট রয়েছে বার্মিজ ভাষায়, সঙ্গে ইংরেজি তর্জমাও। জানি না, ইতিমধ্যে ওই ফর্ম ভরে পুলিশের কাছে দিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাধ্য হয়েছেন কি না।
জিতেন নন্দী
কলকাতা-১৮
অসহায়
খুব অসহায় বোধ করি যখন আগুনে পোড়া যন্ত্রণায় কাতর মানুষকে নিয়ে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে হয়, আর শুনতে হয় এখানে কোনও বার্ন ইউনিট নেই, এসএসকেএম-এ যান। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে সবিনয়ে অনুরোধ করি রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালগুলোতে বার্ন ইউনিটের ব্যবস্থা করে এই মানুষদের বাঁচান।
উদয় শংকর বসু
কলকাতা-৬৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘পড়ে থাকা জিনিস নিয়ে শিল্প সৃষ্টি শিক্ষকের’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (কলকাতা, পৃ ১২, ৭-১১) শিক্ষকের নাম পঞ্চানন মণ্ডল। প্রতিবেদনে শিক্ষকের নাম পরশুরাম মণ্ডল লেখা হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।