Coronavirus

সম্পাদক সমীপেষু: বিশ্বায়ন বদলাবে?

ভারতেও এই অতিমারির প্রাদুর্ভাব শুরু হয় বিশ্ব-যোগের হাত ধরেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০০:০১
Share:

করোনাভাইরাসের ভয়াল আবহ চিনের সঙ্গেই যাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, তা হল বিশ্বায়ন। ১৯৯০-এর দশকের গোড়া থেকে বিশ্বায়ন বিশ্বের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হিসাবে যে ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা প্রথম টাল খায় ২০০৮-’০৯ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে। এর পর ব্রেক্সিট বা চিন-আমেরিকা বাণিজ্য-যুদ্ধ, বিশ্বায়নের বিরোধিতার ছবিই তুলে ধরে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অন্য দেশ (প্রধানত চিন) থেকে আমদানিকৃত দ্রব্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ও প্রোটেকশনিজম বা সংরক্ষণ তত্ত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বিশ্বায়ন পরবর্তী যুগে ভারতীয়দের এইচ-১বি ভিসার সমস্যাও অনেক বেড়ে যায়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন— যেগুলিকে বিশ্বায়নের সাফল্য বলে তুলে ধরা হচ্ছিল, সেগুলির কার্যকারিতা সম্বন্ধেও প্রশ্ন উঠেছে বার বার। আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিশ্বায়নের এই মন্দ গতিকে বোঝানোর জন্য একটি নতুন শব্দের জন্ম দেয়: ‘স্লোবালাইজেশন’। ক্রমবর্ধমান এই প্রতি-বিশ্বায়নের ধারাকে করোনাভাইরাস এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিল।

Advertisement

গত ১০ বছরে বিশ্বায়নের ফলে পর্যটন শিল্পে উন্নতি হলেও, মজার ব্যাপার হল, বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রথম পাঁচটি পর্যটক-বহুল দেশ, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম পাঁচটি ক্ষতিগ্রস্ত দেশও বটে। ভারতেও এই অতিমারির প্রাদুর্ভাব শুরু হয় বিশ্ব-যোগের হাত ধরেই।

করোনার ধাক্কায় বিশ্ব জুড়ে মানুষ ঘরবন্দি। জীবন ও জীবিকার উপর বিরাট আঘাত। করোনার কারণে চিনের সঙ্গে বহু দেশের জোগান-শৃঙ্খল বা সাপ্লাই-চেন ভেঙে যাওয়ার ফলেও বিপর্যয়। বিভিন্ন দেশ চিন-নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে। জাপান ইতিমধ্যেই তাদের বাজেটে সেই সব কোম্পানিকে ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে, যারা তাদের উৎপাদন ইউনিট চিন থেকে অন্যত্র সরাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু কোম্পানি নাকি চিন থেকে সরিয়ে ভারতে কারখানা স্থানান্তরের কথা ভাবছে। ফিলহাল বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতও নীতি পরিবর্তনের কথা ভাবছে। বিশ্ব বাণিজ্য থমকে যাওয়ায়, বহু বিনিয়োগকারী তাঁদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন শেয়ার মার্কেট থেকে।

Advertisement

তবে মুদ্রার উল্টো পিঠও আছে। ভারত প্রথমে ১৩টি দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহ করেছে। তা বানানোর মূল কাঁচামাল আবার সরবরাহ করা হচ্ছে চিন থেকে। এ ছাড়াও আরও কিছু ভাবে চিন করোনা-যুদ্ধে সারা বিশ্বের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্য সিল্ক সরণির আদলে স্বাস্থ্য সিল্ক সরণির পরিকল্পনাও নাকি করছে। তাই বিশ্বায়ন থামবে না হয়তো, কিন্তু নিঃসন্দেহে বদলাবে।

দেবলীনা ঘোষ

কলকাতা-৭৯

বিপর্যস্ত

করোনা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কাছে মোবাইল ফোন না রাখতে দেওয়ার নির্দেশ এক অমানবিক সিদ্ধান্ত। যাঁরা এখানে ভর্তি আছেন, তাঁদের চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটছে। বাইরের জগতের সঙ্গে তাঁরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। পরিবার পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার একমাত্র উপায় মোবাইল ফোন। এখন যদি তাঁদের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয়, তবে তাঁরা মানসিক দিক থেকে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন।

তাপস কুমার রায়

কলকাতা-৮

চলন্ত এটিএম

‘পথে ঘুরবে এটিএমের গাড়ি’ (২৩-৪) শীর্ষক সংবাদে জানা গেল, ভ্রাম্যমাণ এটিএম পরিষেবা চালুর কথা ভাবছে বেশ কিছু ব্যাঙ্ক। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই ওই পরিষেবা চালু করেছে কলকাতায়। অন্য কিছু ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, গ্রাহকদের সুবিধার জন্য কলকাতায় ওই পরিষেবা চালু করার কথা ভাবছে। প্রশ্ন হল, শুধু কলকাতাতেই ওই পরিষেবা চালু করা হবে কেন? পশ্চিমবঙ্গের অন্য জেলাগুলি কেন বঞ্চিত হবে?

কালী শঙ্কর মিত্র

ভদ্রেশ্বর, হুগলি

এঁদেরও ব্যবস্থা

সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স তথা স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের কর্মীদের জন্যও সরকারকে ভাবতে হবে। শহরের অনেক বেসরকারি হাসপাতালে গ্রাম বা মফস্সল থেকে অনেক মানুষ কাজে যোগ দেন। লকডাউনের ফলে বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা আটকে পড়েন এবং একটানা ডিউটি করতে বাধ্য হন। সেখানে তাঁদের থাকার ও খাওয়ার অসুবিধা যেমন হয়, তেমনই ছুটি নিয়ে গ্রামে ফিরলেও সমস্যা দেখা দেয়, সংক্রমণের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। কারও কারও নির্ধারিত ছুটি শেষ হয়ে গেলেও কাজে যোগ দিতে পারছেন না, কারণ ইতিমধ্যেই তাঁর বাড়িকে কোয়রান্টিন করার জন্য দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এঁদের জন্য সরকারকে ব্যবস্থা করতে হবে বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে।

প্রণয় ঘোষ

কালনা, পূর্ব বর্ধমান

হয়রানি

গত এক বছর ধরে কিডনির অসুখে আক্রান্ত আমার বাবা। বয়স ৬৮ বছর। সপ্তাহে দু-তিন বার ডায়ালিসিস নিতে হয়। লকডাউন থাকায় সব ধরনের গণপরিবহণ বন্ধ। এক রকম বাধ্য হয়েই প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে প্রায় ৪০ কিমি দূরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায়, রাতেও হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার হয়। সঙ্গে চিকিৎসা ও ডায়ালিসিস সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও, রাস্তায় পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি বাবার হাতে ডায়ালিসিসের যে চ্যানেল করা আছে, সেটা দেখানো সত্ত্বেও পুলিশ দীর্ঘ ক্ষণ রাস্তায় আটকে রাখছে। এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় লিখিত আবেদন করে সাহায্য চেয়ে যোগাযোগ করলে আমায় বলা হয়, ‘‘এ রকম কোনও সরকারি নির্দেশনামা নেই। রোগীর সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজ থাকলে পুলিশের আটকানোর কথা নয়।’’ অথচ বাড়ি থেকে বোলপুর যাওয়ার রাস্তায় অন্তত দু-তিন জায়গায় হয়রানি হচ্ছে। অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য গাড়িতে যাওয়ার জন্য এই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। উল্লেখ করি, আমাদের গ্রামের একমাত্র অ্যাম্বুল্যান্সটি কয়েক মাস যাবৎ থানায় আটকে রয়েছে। আশেপাশে আর কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাচ্ছি না। ফলে এক দিকে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে রাস্তায় পুলিশের হয়রানি, অন্য দিকে প্রাইভেট গাড়ি করে মাসে ১০-১২ বার ডায়ালিসিস করতে যাওয়ার জন্যও বিপুল টাকা খরচ, যা বাবার পেনশনের সামান্য টাকায় কুলিয়ে উঠছে না।

মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য

বেড়ুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান

গৃহশিক্ষক?

২০ এপ্রিল থেকে করোনামুক্ত এলাকায় কৃষি, কুটির শিল্প, অসংগঠিত ক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে করোনা নিয়ন্ত্রণবিধি মেনে ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সেই তালিকায় গৃহশিক্ষকতায় ছাড়ের কথা উল্লেখ নেই। এ ক্ষেত্রে বেশি জনের জমায়েত হয় না। ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই সাইকেলে, মোটর বাইকে যাতায়াত করে কিংবা বাড়িতে শিক্ষক আসেন। তাই নিয়ন্ত্রণবিধি মেনে ছাত্রছাত্রীদের টিউশনিতে শিক্ষা দেওয়া সম্ভব। এতে দু’টি লাভ হতে পারে। বেকার যুবক-যুবতী, যাঁরা টিউশনির উপর নির্ভরশীল, তাঁরা কাজে যুক্ত হতে পারবেন। দুই, ছাত্রছাত্রীরা স্কুল বন্ধের সময়ে কিছুটা হলেও নিজেদের স্কুলের সিলেবাস এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

কৃষ্ণা কারফা

বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন