সম্পাদক সমীপেষু: একা নেকড়ে

সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল, এই হানাগুলো চলতে চলতে, সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই ঘৃণা জন্মে গিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯ ০০:০১
Share:

সংগঠিত সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ ঘটানোর ঝুঁকি অনেক বেশি। তা ছাড়া বেশ খরচসাপেক্ষ। তাই নতুন একটা মানুষ মারার ধারণা উঠে এসেছে: ‘লোন উলফ’! হাতের কাছে যে অস্ত্র সহজলভ্য, তা নিয়ে এক জন লোক নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে নিকটবর্তী লোকজনের উপর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যত জনকে পারছে মেরে ফেলছে, জখম করছে। গোটা ইউরোপ, আমেরিকা জুড়েই এত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে যে সংগঠিত ভাবে প্রচুর মানুষের নিধন ঘটানো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই ‘লোন উলফ’ ধাঁচে অতর্কিতে হানা চলছে। কখনও হোটেলের জানালা দিয়ে বেপরোয়া ভাবে গুলি চালিয়ে, অথবা কার্নিভালে উৎসবে মগ্ন নিরীহ মানুষজনের উপর একা একটা দশ চাকার ট্রাক চালিয়ে দিয়ে, বা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁদের ছুরিকাহত করে, এই হানা অনেক মানুষের প্রাণ নিচ্ছে। নিউজ়িল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ঘটনাও এ রকমই হানার পৈশাচিক পরিণতি।

Advertisement

সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল, এই হানাগুলো চলতে চলতে, সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই ঘৃণা জন্মে গিয়েছে। সবাই একে অপরকে প্রত্যাঘাত করতে ইচ্ছুক। এটাকে আটকানোর ক্ষমতা কোনও সরকারের নেই। যত দিন না মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হচ্ছে। প্রতিটি সম্প্রদায়কে ভাবতে হবে, এ ধরনের ঘটনা থেকে কোনও সম্প্রদায়ের মানুষেরই আর নিস্তার নেই। অস্ত্র এখন সহজলভ্য। তা ছাড়া মানুষকে মারার জন্য মনের মধ্যে এক রাশ ঘৃণাই যথেষ্ট। এই ঘৃণাটাকে দূর করা একান্ত দরকার। এক শ্রেণির মানুষ ক্রমাগত ঘৃণার বীজ বপন করে চলেছে, কোনও কোনও মহান দেশ আবার এই সব হানাদারদের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ আখ্যাতেও ভূষিত করে! সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম হয় না, জাত হয় না, দেশ হয় না।

কৌশিক সরকার

Advertisement

রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া

আধুনিক নারী

প্রাচীন ভারতে বেদপাঠে এবং শ্রবণে শূদ্রদের অধিকার ছিল না। পরে, নারীদেরও শূদ্রসম বলে, তাদের ওঁকার উচ্চারণে, বেদপাঠে, পূজায় সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “এদেশে পুরুষ-মেয়েতে তফাৎ কেন যে করিয়াছে, তা বোঝা কঠিন। বেদান্তশাস্ত্রে আছে, একই চিৎসত্তা সর্বভূতে বিরাজ করিতেছেন। কোন শাস্ত্রে এমন কথা আছে যে, মেয়েরা জ্ঞান ভক্তির অধিকারিণী হইবে না? ভারতের অধঃপতনের কারণ, ভট্টাচার্য বামুনেরা ব্রাহ্মণেতর জাতকে যখন বেদপাঠের অনধিকারী বলিয়া নির্দেশ করিলে, সেই সময় মেয়েদেরও সকল অধিকার কেড়ে নিলে।” অথচ, বৈদিক যুগে নারীদের উপনয়নাদি সংস্কার হত। অপালা, মৈত্রেয়ী, গার্গী, লোপামুদ্রা প্রভৃতি ব্রহ্মজ্ঞানপূর্ণা বহু নারীর নাম আমরা পাই। তাঁরা তো যাগযজ্ঞ পূজা অর্চনাদি সবই করতেন। এখন আধুনিক পোশাক পরা শহুরে নারীরা যখন নিজেদের আধুনিকা প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে আস্ফালন করছি, তখন বাকুঁড়ার শালতোড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা চরম আধুনিকতার নিদর্শন দেখাচ্ছেন সমাজের অসাম্যের বিরুদ্ধাচরণ করে, বিপরীত স্রোত প্রবাহিত করে। তাঁরা পৌরোহিত্য করছেন। ‘ব্রাহ্মণ-গড় ভেঙে দেবসেবায় শিউলিরা’ (১৯-৩) পড়ে, মুগ্ধ হলাম। যে কর্মটি এত দিন পুরুষ দ্বারা পরিচালিত কর্ম বলেই প্রসিদ্ধ ছিল— আজ সেই ক্ষেত্রটিতেও অধিকার অর্জন করলেন শালতোড়ের নারীবৃন্দ। রমণী কিস্কু, ‌বাঁসুলী সরেন, শিউলি বাউড়ি— এঁরা ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে আধুনিকতার ধ্বজা ওড়ালেন। আরও আশ্চর্যের কথা, এঁরা কেউ ব্রাহ্মণ নয়। বলা বাহুল্য, পৌরোহিত্যে অন্য বর্ণের নারীর অধিকার তো দূরের কথা, ব্রাহ্মণদের স্ত্রী, কন্যাদেরও সে অধিকার থাকে না। অভিনন্দন জানাই নতুন যুগের রমণীদের ও সেই সংস্থাটিকে, যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া সমাজের মেয়েদের পৌরোহিত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে।

রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক

কলকাতা-৫৫

হোক ইউনিয়ন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আনাচেকানাচে ব্যানার ফেস্টুন পোস্টারে চোখ বোলালেই বুঝতে অসুবিধা হয় না, ছাত্র ইউনিয়ন ফিরিয়ে আনার দাবিতে পড়ুয়ারা কতটা মরিয়া। ২০১৭-র মাঝামাঝি, বর্তমান রাজ্য সরকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র ইউনিয়ন তুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশিকা জারি করে। ছাত্র ইউনিয়ন পুরোপুরি বন্ধ করে, সরকারি তত্ত্বাবধানে ছাত্র কাউন্সিল গঠন করার জন্য আইন প্রণয়ন করে। মিডিয়া মারফত এই সংবাদ জানার পর যাদবপুরের ছাত্ররা প্রতিবাদে শামিল হয়।

উপাচার্য বলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সরকারি আইন প্রযোজ্য নয়।সেই প্রেক্ষিতে ছাত্রদের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি এবং সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। উপাচার্য ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এর আগে ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি স্টুডেন্ট ফোরাম গঠন করা হয়। সেখানে একমাত্র তৃণমূল ছাত্র সংগঠন ছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের দাবিতে সকলেই ঐকমত্যে পৌঁছয়। উপাচার্যের কাছ থেকে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের প্রতিশ্রুতির পর ছাত্রেরা ২০১৮-র শুরু থেকে আন্দোলন প্রত্যহার করে। কিন্তু উপাচার্য ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজন তো দূরের কথা, ছাত্রদের পরামর্শ দেন অগণতান্ত্রিক কাউন্সিল উপহার পেয়ে খুশি থাকতে। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ছাত্ররা আবার আন্দোলনে শামিল হয়। তাদের বক্তব্য, কাউন্সিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ছাত্র সংসদ নয়। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, ছাত্র কাউন্সিলের প্রথম তিন জন শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি হলেন শিক্ষক, যাঁরা আবার কলেজের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে উপাচার্য দ্বারা মনোনীত হবেন। শুধু তাই নয়, ছাত্র কাউন্সিলের মিটিং আহ্বান করার একমাত্র অধিকারী সভাপতি, যিনি শিক্ষক প্রতিনিধি এবং উপাচার্যের মনোনীত প্রার্থী। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, প্রত্যেক দু’বছর অন্তর এক বার সরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র কাউন্সিল গঠিত হবে। নির্বাচনের দিনক্ষণ সরকার নির্ধারণ করে দেবে। নিয়মাবলি সংক্রান্ত কোনও সঙ্কট তৈরি হলে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত ভোট পরিচালন সমিতি সরকার গঠন করে দেবে। নির্বাচন সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হলে সরকার নির্দেশ দেওয়ার অধিকারী। ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থী পদের জন্য আবেদন, প্রচার, ভোটগ্রহণ এবং ফল ঘোষণা করতে হবে। যদি কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত কাজ সম্পন্ন করতে না পারে, সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে। আসলে ছাত্র কাউন্সিলের পথ ধরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি আধিপত্য কায়েম করাই মূল লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিভাগের জন্য একটিই ছাত্র কাউন্সিল থাকবে। একাধিক ক্যাম্পাস থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একটির বেশি কাউন্সিল থাকতে পারবে না। তা ছাড়া স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের কোনও ছাত্র, কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের সমস্যা ভিন্ন রকম। সব বিভাগের সমস্যার জটিলতা একটি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পক্ষ সমাধান করা কতটা বাস্তবসম্মত? আবার, ছাত্র কাউন্সিল কোনও রাজনৈতিক দর্শন দ্বারা চালিত হতে পারবে না। মোট কথা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাজনীতিকে সম্পূর্ণ ব্রাত্য করে রাখার দারুণ ফিকির বার করেছে সরকার। তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ছাত্র ইউনিয়ন ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করছে। হোক কলরবের মতো হোক ইউনিয়ন আন্দোলনে তারা আবার গর্জে উঠতে পারে।

কমল কুমার দাস

কলকাতা-৭৮

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন