ডারউইনের বিপদ
‘ডারউইন নিয়ে অনড় মোদীর মন্ত্রী’ (২২-১) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় ১৯২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি-র ডেটন শহরে স্কোপস নামক এক বিদ্যালয় শিক্ষকের যে বিচার হয়েছিল, তার কথা। স্কোপস তাঁর বায়োলজি ক্লাসে ডারউইনের এই তত্ত্বের কথা ছাত্রদের বলেন। পরের দিন ওই শহরে এই নিয়ে প্রবল বিক্ষোভ হয়, কারণ ডারউইনের বিবর্তনবাদের এই তত্ত্ব বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব বা ‘ক্রিয়েশনিজ্ম’ তত্ত্বের সরাসরি বিরোধী। স্কোপসকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয় ও তাঁর বিচার শুরু হয়।
এই বিচারটি পরবর্তী কালে ‘মাংকি ট্রায়াল’ নামে বিখ্যাত হয়। এই বিষয়টি অবলম্বন করে জেরম লরেন্স ও রবার্ট ই লি তাঁদের বিখ্যাত নাটক ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ রচনা করেন। স্ট্যানলি ক্রেমার আবার এই নাটকটিকে চলচ্চিত্রে রূপায়িত করেন (সঙ্গের ছবি)। অনেক বিখ্যাত পরিচালকের পরিচালনায় এই নাটকটি আমেরিকান টেলিভিশনে বহু বার প্রদর্শিত হয়েছে। ব্রডওয়েতেও বহু বার এই নাটকটি অভিনীত হয়েছে ও প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
বাংলায় এই নাটকটির দুটি অনুবাদের কথা আমার জানা আছে। অসীম চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘পাশ্চাত্যের তিনটি নাটক’ বইতে যে তিনটি নাটকের অনুবাদ করেছেন তার একটি ‘শূন্যতার উত্তরাধিকার’ হল এই নাটকটি। ‘স্যাস’ পত্রিকার ২৬তম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল পাচু রায় অনূদিত এই নাটকটি ‘মধুবাতা ঋতায়তে’ নামে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ যে আজও, এই একবিংশ শতাব্দীতেও, আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়ানো আইনত নিষিদ্ধ। রাজ্যের তালিকা ইন্টারনেটে সার্চ করলেই পাওয়া যায়।
প্রবীর মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
ষড়যন্ত্রী?
বহু দিন আগে, ছবির গানে ‘মন্ত্রীমশাই’-এর সঙ্গে ‘ষড়যন্ত্রীমশাই’ মিলিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। এখন এক মন্ত্রিমশাই দাবি করছেন ডারউইন মিথ্যে, তিনি এ-ও বলেছেন, বেদে সব কিছুর উত্তর আছে। মনে হয় ভারতে এখন পরিকল্পিত ভাবে অশিক্ষা ছড়াবার ষড়যন্ত্র চলছে, সাধারণ বুদ্ধি ও কুসংস্কার দিয়ে বিশেষ জ্ঞানকে অপমান করার একটা চেষ্টা চলছে, কয়েকটা প্রাচীন শাস্ত্রে (যা সাধারণ মানুষ কখনও পড়ে না কিন্তু খুব শ্রদ্ধা করে) সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে তাই কোনও ভারতীয়ের আর নতুন কিছু শেখার দরকার নেই, বিশেষ করে পাশ্চাত্যের থেকে তো নেই-ই— এটা প্রচারের চক্রান্ত চলছে। আর সেই ষড়যন্ত্রেরই একটা অংশ: সরকারে থাকা বড় বড় পদের লোকের বারে বারে অশিক্ষিত উচ্চারণ, যুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত ধারণার বিরোধিতা।
পুলকেশ মিত্র, কলকাতা-৬৪
অন্ধ বাৎসল্য
পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়ের ‘অন্ধ বাৎসল্য হইতে সাবধান’ (১৮-১) পড়ে মনে হল, উনি যে বিষয়ে সাবধান করেছেন এই যুগের মা-বাবাদের, তা অবশ্যই ঠিক। এখন অনেক মা-বাবাকেই তাঁদের সন্তানের আচরণের কারণে আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। তবু প্রশ্ন, সন্তানের ওপর নির্ভর না করে, তাদের প্রথম থেকেই সন্দেহের তালিকায় রেখে, নিজেদের বিষয়-আশয় গুছিয়ে নিয়ে যদি কোনও বাবা-মা মনে করেন, আমরা বড় শান্তিতে আছি, ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ নিরাপদ— তাতে কি সমাধান হবে? সন্তানরা তাতে যদি বাবা-মা’কেই উলটে স্বার্থপর ভেবে বসে, তখন সম্পর্ক টিকবে তো? তার চেয়ে, ছোট থেকেই সন্তানকে শেখাতে হবে, লেখাপড়া শিখে রোজগেরে হওয়াকে মানুষ হওয়া বলে না। সব কাজের মধ্যে প্রকৃত মানুষ হওয়াই বড় কাজ।
রত্না রায়, হিলি মোড়, বালুরঘাট
সুধীন-হেমন্ত
আমার লেখা ‘আর হেমন্ত?’ (১৫-১) শীর্ষক পত্রের জবাবে সাবেরী দাশগুপ্তের ‘কিসের গুড বুক?’ (২০-১) পত্রের প্রসঙ্গে জানাই, আমি কিন্তু কোথাও সুধীন দাশগুপ্তের ব্যক্তিত্ব ও সংগীত প্রতিভা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলিনি। এবং কোথাও বলিনি, সুধীনবাবু হেমন্তবাবুকে অশ্রদ্ধা করতেন। বরং হেমন্তবাবুর প্রশংসায় সুধীনবাবু কী বলতেন, তা চিঠিতে উল্লেখ করেছি। দু’জনেই দু’জনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, শ্রদ্ধা আর পছন্দ-অপছন্দ কিন্তু এক গোত্রের নয়। প্রত্যেক মানুষেরই পছন্দ-অপছন্দ ব্যাপারটি থাকেই। এটাই স্বাভাবিক। মানতেই হবে।
‘হেমন্ত-সুধীন’ জুটি সফল না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে, হেমন্তবাবু কর্মক্ষেত্রে এবং বয়সে, দু’দিক থেকেই সিনিয়র। এই প্রসঙ্গে বলি, মান্না দে এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায় দু’জনেই সমসাময়িক। আর হেমন্তবাবুর চেয়ে মান্নাবাবু কিন্তু এক বছরের বড়। গীতিনাট্যের গান বাদে, সুধীনবাবুর সুরে মান্না দে গেয়েছিলেন ৬০টির বেশি গান। সেখানে হেমন্ত গেয়েছিলেন মাত্র ১২টি গান। এখানে কি সন্দেহ প্রকাশ করা অন্যায়?
কোনও শিল্পীকে অসম্মান করার অভিপ্রায় আমার নেই। তবু যদি আমার কোনও মন্তব্যে সুধীনবাবুর আত্মীয় বা অনুরাগী আঘাত পেয়ে থাকেন, আন্তরিক দুঃখিত।
বিশ্বনাথ বিশ্বাস, কলকাতা-১০৫
সংগ্রাহক
ঋত্বিক ত্রিপাঠীর ‘সত্যিই ছোট হচ্ছে’ (১৮-১) শীর্ষক চিঠি পড়ে প্রবীণ এক লেখকের কথা মনে পড়ে গেল। তিনি ছিলেন লিটল ম্যাগাজিনেরই লেখক, যত্রতত্র লিখতেন না। দুশো-তিনশো পাতার পত্রিকার এক সম্পাদকের ছোটাছুটি দেখে এক দিন প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা ইনি কি সম্পাদক? দেখি, রাতদিন নানা প্রান্তে দৌড়ে বেড়ান, লেখা সংগ্রহের তাগিদে আমার কাছেও আসেন... ইনি তো আসলে এক জন সংগ্রাহক। লেখা জোগাড় করাই ওঁর কাজ।’ লিটল ম্যাগাজিনের জগতে এই সংগ্রাহকদেরও আবির্ভাব ঘটেছে। এগুলি কখনওই চটি নয়, আকারে ঢাউস। তবে যা-হোক করে ভরানো নয়, নির্দিষ্ট মানের লেখা ছাপা হয় এ-সব পত্রিকায়। অ্যাকাডেমিক মহলে তাই এঁরা কৌলীন্যের অধিকারীও। এ-সব পত্রিকার দামও চড়া। প্রচুর বিজ্ঞাপন থাকে বলে ছাপার খরচ নিয়ে সম্পাদকের দুশ্চিন্তা থাকে না। পরিশ্রমী এবং রুচিশীল সম্পাদকরাই (পড়ুন সংগ্রাহক) এ ধরনের পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছেন।
শিবাশিস দত্ত, কলকাতা-৮৪
জেলখানা
বাংলার বিভিন্ন জেলখানায় মারামারি, বন্দি পলায়ন ইত্যাদি নিয়ে ‘যৎকিঞ্চিৎ’ স্তম্ভে (২১-১) তির্যক সম্পাদকীয় মন্তব্য চমৎকার। এই প্রসঙ্গে অতীতের একটি অদ্ভুত ঘটনার কথা উল্লেখ করছি। ১৯৭৪ সালে কলকাতার একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে (স্টেটসম্যান, ১৫ জুলাই, ১৯৭৪) প্রকাশিত খবর। বিহারের নালন্দার কথা। সেখানে জেল থেকে রোজ সন্ধ্যায় নাকি বাছা-বাছা চোরদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা ভোর-রাতে চুরি করে, আবার জেলে ফিরে আসে। জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চোরাই মালের ভাগ-বাটোয়ারা হয়। পুলিশ নাকি জেলে অনেক চোরাই মাল পেয়েছে। (সূত্র: বনফুলের ডায়েরি ‘মর্জিমহল’, প্রথম খণ্ড)। সত্যি-মিথ্যে জানি না, তবে রক্ষে, আমাদের রাজ্যে জেলের এই অবস্থা হয়নি। অন্তত এখনও! ।
রঞ্জিতকুমার দাস, বালি, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
ভ্রম সংশোধন
‘ব্যর্থ, বিপর্যস্ত’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রবন্ধে (২৬-১) ‘আটষট্টিতম প্রজাতন্ত্র দিবসে’ লেখা হয়েছে। এটি ভুল। হবে ‘ঊনসত্তরতম প্রজাতন্ত্র দিবসে’। প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসটি ছিল ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।