Sexual Harrassment

সম্পাদক সমীপেষু: হয়রানির লাইসেন্স

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:০৮
Share:

বম্বে হাই কোর্টের মহামান্য বিচারপতির রায় অনুযায়ী, মেয়েদের নিজেকে রক্ষা করার এখন দুটো পথ। এক, আইন অনুসারে যা নিগ্রহ নয়, তারও প্রতিবাদ করা। আর দুই, জামাকাপড় ছাড়াই বাইরে বেরোনো, যাতে প্রমাণ দিতে অসুবিধা না হয়, অশ্লীল স্পর্শ করা হয়েছে।

Advertisement

ত্বক স্পর্শ না করলে তা যৌন হেনস্থা নয়, এমন রায় দিয়ে জনসমক্ষে যৌন হেনস্থা করার লাইসেন্স কি নিগ্রহকারীদের হাতে তুলে দিল না আদালত! সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যেই নিজেদের উপর হওয়া যৌন অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে যাওয়া থেকে অনেকটা পিছিয়ে। যে কোনও কারণেই হোক, তার মনে চেপে আছে ভয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে এ দেশে ধর্ষণের গ্রাফ। যেখানে মানুষ দীর্ঘ প্রতীক্ষা করে আছে কখন সে নিগ্রহের সুবিচার পাবে, কখন ধর্ষণের শাস্তি কঠোরতর হবে, শাস্তি পাবে অভিযুক্ত, কবে বিকৃত নজরে তাকানোটাকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হবে; সেখানে দেশের আইন আরও শিথিল হল। অভিযুক্তদের বাঁচানোর জন্য ধাপটা বড্ড একপেশে হয়ে গেল না?

অভিযুক্ত নিজেকে বাঁচাতে এত দিন বলত, “আমি কিছু করিনি”, কাল থেকে বুক ফুলিয়ে বলবে, “আমি তো চামড়ায় সরাসরি স্পর্শ করিনি!” এই কি দেশের অগ্রগতি? নিগ্রহকারীদের মুখের হাসিই কি এগিয়ে যাওয়ার লক্ষণ? সাধারণ মানুষের হাতে বিচারক্ষমতা থাকলে আমরা বলতাম, “অপরাধী হাতে গ্লাভসই পরুক আর নিগৃহীত মেয়েটি সোয়েটার পরে থাকুক, ধর্ষণ মানে ধর্ষণ!”

Advertisement

স্মিতা ভট্টাচার্য

বাঁকুড়া

বিতর্কিত রায়

‘ইহাকেই বলে বিচার?’ (সম্পাদকীয়, ৩০-১) ঠিকই বলেছে যে, শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন নিয়ে বম্বে হাই কোর্টের রায় দেশবাসীকে উত্তাল করেছে। মানুষ বুঝতে পারছে না, তাদের সঙ্গে কোনও অবিচার হলে তারা বিচারের জন্য কোথায় যাবে? পোশাকের উপর হাত দেওয়া, হাত ধরে টানা, কিংবা যৌনাঙ্গ প্রদর্শন যদি যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতনের মধ্যে না পড়ে, তার মতো অসম্মান মেয়েদের কাছে আর কী হতে পারে? এই রায় যে সেই দুর্বৃত্তদের আরও বেপরোয়া করে দেবে, সে সম্ভাবনা যথেষ্ট। আশ্চর্য এটাই যে, যিনি এই রায় দিয়েছেন, তিনি নাগপুর বেঞ্চের মহিলা বিচারপতি পুষ্পা গনেড়িওয়ালা। সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ে স্থগিতাদেশ দিলেও, ভয় হয়। এই রকম বিতর্কিত রায় বার বার ঘোষিত হলে বিচারপ্রার্থীরা পড়বেন সঙ্কটে। মেয়েরা যে দেশে বিপন্ন, সেই দেশ কি পারবে সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে?

কুহু দাস

কলকাতা-৭৬

আস্থাহীন

সরকারের বোধোদয় হয়েছে। কৃষক আন্দোলনের চাপে সরকার তিন কৃষি আইন আগামী এক থেকে দেড় বছর স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মানুষের সামনে উঠে এসেছে তা হল, আইন ও আদালতের উপর মানুষের আস্থাহীনতা। আন্দোলনরত কৃষকদের অনড় অবস্থানে সরকারের ছুঁচো গেলার মতো অবস্থা। না পারছে আইন বলবৎ করতে, না বাতিল করতে। সরকারের এই উভয়সঙ্কটে শীর্ষ আদালত স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করল, এবং কৃষি আইন পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করল, যার সদস্যরা প্রত্যেকেই শাসক দলের বিশেষ ঘনিষ্ঠ বলে সুপরিচিত। এইখানে আদালতের উপর জনগণ ও বিরোধী দলগুলির আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই আইনের পক্ষে এত বার সওয়াল করেছেন যে, সরকারের পক্ষে আইন প্রত্যাহার করা মুশকিল। এমতাবস্থায় মানুষের মনে এই ভাবনা আসা স্বাভাবিক যে, উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সরকার কৃষি আইনের সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইল। শীর্ষ আদালতের জন্য সরকারের মুখরক্ষাও হল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর প্রধান বিচারপতি মাননীয় শরদ অরবিন্দ বোবডে বলেছিলেন, “আদালতের কাজ হল আইনের বৈধতা যাচাই করা। তা না করে আদালত আইন খারিজ বা স্থগিত করতে পারে না।” প্রশ্ন জাগে, তিন কৃষি আইনের ক্ষেত্রে আদালত প্রথমে স্থগিতাদেশ ও পরে পর্যালোচনার জন্য কমিটি গড়ে দিল কোন আইনের ভিত্তিতে? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শীর্ষ আদালত তথা সমগ্র বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বজায় রাখার দায় কার?

কুমার শেখর সেনগুপ্ত

কোন্নগর, হুগলি

ঘুণ

প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘এখন আত্মসমীক্ষার সময়’ (২১-১) নিবন্ধটি চমৎকৃত করল। বিচারব্যবস্থা নিয়ে সামান্যতম ক্ষোভ, কাটাছেঁড়া, সে যতই যুক্তিগ্রাহ্য অথবা যথার্থ হোক, আদালত অবমাননার খাঁড়া ঝোলে আলোচকের মাথায়। বিচারকরা সাধারণ মানুষের আস্থা, সম্মান আশা করতেই পারেন। কিন্তু অবমাননার ভয় দেখিয়ে সম্মান আদায় করতে হলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক।

বিচারব্যবস্থায় আস্থাহীনতার একটি প্রধান কারণ অবশ্যই বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা। বিচারপ্রার্থীর আধিক্য, বিচারকের অপ্রতুলতা কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়। যাঁদের টাকা নেই, নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের বিচারাধীন বন্দি হয়ে জেলে বহু বছর কাটাতে হয়। আর প্রভাবশালীর ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার শেষ হয়। দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি প্রতিভা এম সিংহ কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের এক সিদ্ধান্তকে যথার্থ ঘোষণা করেন। ওই সিদ্ধান্ত ছিল, তথ্যের অধিকার আইনের অধীনে এক আবেদনকারীকে তথ্য না দেওয়ার। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। তার পরই বিচারপতি জানান, যখন কোনও তথ্যের জন্য তথ্যের অধিকার আইনের অধীনে কেউ আবেদন করবেন, তাঁকে জানাতে হবে, তাঁর কী স্বার্থ আছে। এ রকম কোনও ধারা তথ্যের অধিকার আইনে নেই। শুধু তা-ই নয়, প্রার্থীকে ২৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আস্থায় ধাক্কা খাবে না এর পরেও!

আস্থাহীনতার সবচেয়ে বড় কারণ এই প্রতিবেদনেই আছে। কোনও বিচারক শাসক দলের কাঙ্খিত রায় দিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন, কেউ দেননি বলে অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। ১৯৯০-এ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ভি রামস্বামী। সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত এক কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ১৪টি অভিযোগের ১১টিতেই সারবত্তা পায়। তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা হয় সংসদে। শাসক দল অনুপস্থিত থেকে তা ব্যর্থ করে। শুধু তা-ই নয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র তাঁকে আবার বিচারক হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেন। ২০০৩ সালে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারক সৌমিত্র সেন, ২০১১ সালে সিকিমের প্রধান বিচারপতি পি ডি দিনাকরণ পদত্যাগ করে শাস্তি এড়ান। আইন কমিশনের চতুর্দশ রিপোর্টের যে সাবধানবাণী এই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, দেখা যায় না তার কোনও ছাপ পড়েছে। অথচ নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত বিচারব্যবস্থা যে কোনও দেশের মেরুদণ্ড। সেখানে ঘুণ ধরলে দুর্দিন নেমে আসবে।

শিখর রায়

কলকাতা-১৪৫

পেনশন নেই

যাদবপুর ও পশ্চিমবঙ্গের অপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী সরকারি পেনশন ব্যবস্থার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকারি যে নির্দেশনামার ফলে অবসর-পূর্ববর্তী অপশন অবসরের পরে পরিবর্তন করে অনেকে পেনশন পাচ্ছেন, সেটি ২০০৭-এর পরে চালু নেই। ব্যবস্থাটি পুনরায় চালু করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

অশোক কুমার ঘোষ

বৌবাজার, কলকাতা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন