Bhanu Banerjee

সম্পাদক সমীপেষু: স্পষ্টবাদী, নির্ভীক

ব্যক্তিজীবনে গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ভানু চিরকালই স্পষ্টবক্তা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

‘মাসিমা মালপো খামু’ শুনলেই এক জনের ছবি ভেসে ওঠে। তিনি, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ তিনি বেঁচে থাকলে শতবর্ষ ছুঁতেন। ১৯২০ সালের ২৬ অগস্ট বর্তমান বাংলাদেশের বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক কমিউনিজ়মের ধারায় ভানুর পোশাকি নাম ছিল সাম্যময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের সহচর হওয়ায় ও স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে রাজরোষে পড়ে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হন। ১৯৪১ সালে কলকাতায় আসেন, শুরু হয় কর্মজীবন। রসবোধের কারণে মঞ্চসফল অভিনেতা সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নামে। প্রথম ছবি জাগরণ মুক্তি পেল ১৯৪৭ সালে। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় সাড়ে ৭৪। বাঙালি দর্শকের রান্নাঘরের আলোচনায় চলে এলেন তিনি। ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট আইকন হয়ে গেল, প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ থাকত। তাঁর যাত্রার মধ্যে সুবর্ণগোলোক সেরা। অন্তত ৩০০ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৫৫ সালে রসরচনা নামে কৌতুকের একটি বইও প্রকাশ করেন।

Advertisement

ব্যক্তিজীবনে গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ভানু চিরকালই স্পষ্টবক্তা। প্রয়োজনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন। এক বার শিল্পী সংসদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে কালো তালিকাভুক্ত হন। কিন্তু মাথা নত করেননি, হাতে কাজ না থাকা সত্ত্বেও।

পরেশ নাথ কর্মকার

Advertisement

রানাঘাট, নদিয়া

কমেডির উত্তম

কলকাতার কড়চা-য় (‘একাই ১০০’, ৩১-৮) লেখা হয়েছে, ‘‘খ্যাতির বিচারে তিনিই কার্যত বাংলা কমেডির উত্তমকুমার।’’ একেবারে ঠিক। মনে আছে, হলে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত ছবি দেখতে গিয়েছি, দেখি দর্শক উসখুস করছে, কারণ তখনও ছবিতে ভানুর উপস্থিতি নেই। যেই এলেন, হইহই কাণ্ড। তখন আমরা কিশোর। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তো বলেইছেন “বাংলা ছবিতে যেমন উত্তম-সুচিত্রা ছাড়া চলত না, তেমন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, তুলসী চক্রবর্তী ছাড়াও চলত না। দর্শকদের কাছে উত্তম-সুচিত্রার মতো তাঁরাও জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁদের চাহিদাও ছিল সমান।” বাংলা সিনেমায় অভিনেতা হিসেবে কমেডিয়ানরা বরাবরই খুব শক্তিশালী, অন্য দেশ হলে তাঁরা অনেক বেশি সম্মান পেতেন। যেমন, রঞ্জিত রায়ের খুব ভক্ত ছিলেন ভানু। লিখেছেনও তাঁর সম্পর্কে: “ইনি ঢাকার লোক, এঁর মতো ভার্সেটাইল কমেডিয়ান খুব কমই আছেন। সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রা ছাড়াও এঁর কমিক গানের রেকর্ড আছে, বাংলাদেশে প্যারোডি গানের জন্মদাতা বলতে গেলে তিনিই।”

এমনই পূর্ববর্তীদের মধ্যে তুলসী চক্রবর্তী, তুলসী লাহিড়ি, নবদ্বীপ হালদারকে শক্তিশালী অভিনেতা মনে করতেন ভানু। সে ধারা বজায় রেখেই দাপটে অভিনয় করে গিয়েছেন নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, হরিধন মুখোপাধ্যায়, শ্যাম লাহা, জহর রায়, উৎপল দত্ত, অনুপকুমার, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, চিন্ময় রায়, সন্তোষ দত্ত... দুঁদে কমেডিয়ান, সকলেই প্রয়াত। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ের ধারাতে শুধু বাঙাল ভাষার মজা ছিল না, ছিল অন্য মাত্রাও। কমেডি ও সিরিয়াস অভিনয়ের মেলবন্ধন ঘটত তাঁর তৈরি চরিত্রের মধ্যে। মাত্র ৬৩ বছর বয়সে তিনি চলে না গেলে আরও কত ভাল অভিনয় পেতাম আমরা তাঁর কাছ থেকে।

দেবব্রত নিয়োগী

কলকাতা-২৬

কত গান

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লিপ’-এ প্লেব্যাক করেছিলেন অনেক বিখ্যাত শিল্পী। ‘পুতুল নেবে গো’ গানটি শ্যামল মিত্র গেয়েছিলেন ১৯৫৮ সালে নচিকেতা ঘোষের সুরে ভানু পেল লটারি ছবিতে। ভানুর লিপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন নচিকেতা ঘোষের সুরে পার্সোনাল এ্যাসিস্ট্যান্ট ছবিতে ‘ক রয়েছেন কলকাতায়’, ‘এই বেশ ভালো লাল সাদা কালো’, ‘তোমাদের নতুন কুঁড়ির নতুন মেলায়’। মান্না দে ১৯৬৭ সালে গেয়েছিলেন ৮০তে আসিও না ছবিতে ‘তুমি আকাশ এখন যদি হতে’ (সহশিল্পী, রুমা গুহঠাকুরতা) এবং ‘ও ভোলা মন বাঁচতে যদি চাও’। ভানুর লিপে কিশোর কুমার গেয়েছিলেন সাবরমতী ছবিতে ‘তাক ধিন ধিন তা’ (সহশিল্পী, ইলা বসু)। গানটির অবশ্য সিংহভাগ ছিল উত্তমকুমারের লিপে। অর্থাৎ, একই গানে কিশোর দু’জনের লিপে প্লেব্যাক করেছিলেন।

বিশ্বনাথ বিশ্বাস

কলকাতা-১০৫

ক্যাপ্টেন

ঋজু বসু ঠিকই বলেছেন, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ‘‘শুধু বাঙাল নয়, বাঙালির ক্যাপ্টেন’’ (আনন্দ প্লাস, ২৭-৮)। পশ্চিমবঙ্গের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মানোর সুবাদে ছোটবেলায় দেখেছি, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের কোনও ম্যাচের ধারাভাষ্য প্রচারিত হওয়ার সময় ট্রানজ়িস্টরের সামনে শ্রোতারা শুধুই মোহনবাগান সমর্থক। ইস্টবেঙ্গল হেরে গেলে ‘বাঙালদের হারিয়ে দিয়েছি’ বলার চল ছিল। কিন্তু সেই সাময়িক মনোভাব স্থায়ী হয়ে ওঠার পথে অনেক সময়ই বাধা হয়ে দাঁড়াতেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে তাঁর অভিনীত সাড়ে ৭৪, ভানু গোয়েন্দা জহর এ্যাসিস্ট্যান্ট, যমালয়ে জীবন্ত মানুষ ইত্যাদি ছবির ‘ভানু’ দিনরাত মাঠে-ঘাটে অপরিসীম শ্রম করা মানুষগুলোর কাছে হয়ে উঠতেন বিনোদনের এক সুদৃঢ় মাধ্যম। চার পাশে মোহনবাগান সমর্থকদের বিপরীতে যখনই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবে বসিয়েছি, সফল হয়েছি। ঘটি-বাঙাল, চিংড়ি-ইলিশের দ্বৈরথ আজ অতটা নেই। কিন্তু ভানুর ‘ক্যাপ্টেন্সি’ বাঙালি সংস্কৃতিতে স্মরণীয় হয়ে আছে।

গৌতম জানা

কলকাতা-৭৪

জেল কেন?

ভীমা কোরেগাঁও মামলায় সুধা ভরদ্বাজ প্রমুখ সমাজ আন্দোলনকারীদের কয়েদ করার দু’বছর পূর্ণ হল। আইন মোতাবেক সরকার তাঁদের আটকে রাখতে পারে। কিন্তু প্রশ্নটা আইনের না, নৈতিক যুক্তির। তাঁদের অপরাধের কোনও মজবুত সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে পেশ করা যায়নি। প্রমাণ হবে কি না, তা অনিশ্চিত। কিন্তু, তাঁদের জীবন থেকে অমূল্য সময় অপহৃত হচ্ছে। কোনও ভাবেই কি আর তাঁরা ফেরত পাবেন তাঁদের এই জীবন?

সাধারণ নাগরিক ভালই আন্দাজ করতে পারেন, এঁদের আটকে রাখাটা অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য। যাতে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস না করেন। তাতে শাসকের লাভ, কিন্তু দেশের বিপুল ক্ষতি। এঁদের বুদ্ধিমত্তা, গণতান্ত্রিক চৈতন্য, এবং প্রতিরোধী সাহসের যে বিপুল ভান্ডার, আমরা সহনাগরিকরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

সম্প্রতি নানা দেশে দাবি উঠেছে, জেল তুলে দাও। “ঐতিহাসিক সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, লোককে জেলে পুরে লাভ হয় না,” জানাচ্ছেন অ্যাঞ্জেলা ডেভিস, মার্কিন বিদ্যাবেত্তা ও রাজনৈতিক কর্মী। অ্যাঞ্জেলাদের দাবি, সন্দেহভাজনদের জেলে ভরে রাখলে অন্য নাগরিকরা অধিক নিরাপদে থাকতে পারবেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই। ভারতেও ২০১৮-র হিসেবে, জেলবন্দির সংখ্যা ৪,৬৬,০৮৪; যত বন্দি রাখার বন্দোবস্ত আছে, তার চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। অধিকাংশই বিচারাধীন, অপরাধ প্রমাণিত হয় না। অনেকে আইনি সহায়তা না পেয়ে জেলে পড়ে আছেন। যাঁরা বিনা দোষে সাজা ভোগ করলেন, তাঁদের প্রতি অন্যায়ের কোনও প্রতিকার নেই।

আমেরিকার ‘জেল তুলে দাও’ আন্দোলনের লোকেরা দেখেছেন, জেলে রাখা হয় তাঁদেরই, যাঁরা কালো, প্রান্তিক, অসহায়; আর রাখা হয় তাঁদের, যাঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হন, শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলেন। ভারতেও বিনা বিচারে জেলে আটকে থাকা লোকদের ৮০ শতাংশই হতদরিদ্র, প্রান্তিক শ্রেণির। আর কিছু অংশ হলেন সুধা ভরদ্বাজদের মতো প্রতিবাদী। অসুস্থ এই মানুষরা জামিনে ছাড়া পেলে রাষ্ট্রের বিরাট ক্ষতি করে ফেলবেন কি?

মিহির মণ্ডল

ঝাড়গ্রাম

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন