অমিতাভ গুপ্ত স্বজনপোষণের বহুমাত্রিক রূপ তুলে ধরেছেন (‘নিজের ক্ষমতায় উন্নতি’, ১-৮)। লেখকের মূল্যায়ন যথার্থ। অনেক কারণে অতি সাধারণ ব্যক্তিও যেমন স্বজনপোষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন, তেমনই রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিরাও এই দোষে দুষ্ট হতে পারেন। প্রশ্ন, এত দোষজর্জর ভারত দেশটা এখনও পর্যন্ত টিকে আছে কী করে? লেখক এই প্রশ্নে নিরুচ্চার থেকেছেন। স্বজনপোষণ থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। স্বাধীন দেশের জন্য সংবিধান রচনা হয়েছে। কালের নিয়মে তার সংশোধনীও হয়। তবে উত্তরণের চূড়ান্ত পথনির্দেশ দিয়ে সমগ্র আলোচনা আর এক জন অসামান্য লোক তাঁর বিখ্যাত নীতি ও ন্যায্যতা মহাগ্রন্থে করেছেন। তিনি ‘জীবন, স্বক্ষমতা ও সক্ষমতা’ প্রবন্ধে লিখেছেন, “এই নয় যে আমাদের সবাইকে এমন সামাজিক কর্মনীতির পক্ষে দাঁড়াতেই হবে যা সকলের সক্ষমতা সমান করে দিতে চায়, সেই কর্মনীতির অন্যান্য তাৎপর্য যা-ই হোক না কেন।” বস্তুত, তিনি সামাজিক বৈষম্যকে বা সক্ষমতার অসাম্যকে শুধুমাত্র সক্ষমতার সীমাবদ্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে ভবিষ্যৎ কর্মনীতি তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। কারণ, তাতে নীতি তৈরি সার হবে। নির্দিষ্ট কোনও সূত্র পাওয়া যাবে না, যা এই সমস্যার অপনয়নে কার্যকর হবে। এই মহাগ্রন্থের লেখক অমর্ত্য সেনের কথা ধরে বলি, দেশের প্রতিটি মানুষকে স্ব-ক্ষম করে তোলা প্রয়োজন এক সক্ষম ভারত গড়তে। এক সমস্যা থেকে বার করে এনে আরও একশো সমস্যার মাঝখানে দাঁড় করানোর চেষ্টা এখানে কোনও মতে কাঙ্ক্ষিত নয়। শিবুদাদের প্রশ্নের তোড়ে তপেশরা ছুটে পালায়, কারণ শিবুদারা চিরকাল শাণিত। এর বেশি কিছু নয়।
বিমল জানা
বেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর
ফর্সার সুবিধে
অমিতাভ গুপ্তের প্রবন্ধটি পড়ে আমার এক সহকর্মীর কথা মনে পড়ল, যিনি এক জন প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী এবং পেশায় শিক্ষক। ঘরোয়া এক আড্ডায় এক বার ওই সহকর্মী বলেছিলেন,“গায়ের রং কালো বলে আমাকে কত ঠাট্টা-অপমান সইতে হয়েছে, তা আপনারা জানেন না।” শুনে চমকে উঠেছিলাম। আমাদের দেশে মেয়েদের গায়ের রং নিয়ে কেমন অসভ্যতা চলে তা জানতাম, কিন্তু গায়ের রং কালো হওয়ার কারণে পুরুষদেরও ঠাট্টা-অপমান সইতে হয়, এটা জানা ছিল না। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে লড়াই করে বেড়ে-ওঠা ওই সহকর্মীর কাছে শুনেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সাদামাটা পোশাক আর গায়ের রং কালো হওয়ার কারণে গণপরিবহণ-সহ নানা জায়গায় অনেক অপরিচিত মানুষ তাঁকে ‘তুমি’ সম্বোধন করতেন, বয়স্ক কেউ কেউ ‘তুই’ করে বলতেও দ্বিধা করতেন না। পাশাপাশি পরিচিত জনের ঠাট্টা তো ছিলই। এর থেকে এটা পরিষ্কার যে, এ দেশে তথাকথিত ফর্সা, বা গম-রং নিয়ে যাঁরা জন্মান, তাঁরা অজানতেই অনেক সুবিধে ভোগ করেন।
শেষে আমার কথা বলি। গড়পড়তা প্রাপ্তবয়স্ক বাঙালি পুরুষের দৈহিক উচ্চতার থেকে আমার উচ্চতা কয়েক ইঞ্চি কম হওয়ায় সেই কবে থেকে ঠাট্টা-তামাশার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ অপমান সয়ে আসছি। এখন নিশ্চিত ভাবে বলা যেতে পারে, যাঁরা সমাজ নির্ধারিত বা তার থেকে বেশি দৈহিক উচ্চতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁরাও সুবিধাভোগী। কারণ তাঁরা অকারণেই অনেক সুবিধা ভোগ করেন।
দেবাশীষ চক্রবর্তী
কলকাতা-১১৫
প্রতিভা নয়
অমিতাভ গুপ্তের প্রবন্ধটি পড়ার পর অনেকেই আমরা—‘নিজের ক্ষমতায় উন্নতি’ করার দাবিদাররা— নির্লিপ্ত থাকার ভান করব। আবার কোনও সুশীল পাঠক খবরের পাতাটি সযত্নে ভাঁজ করে পুরনো কাগজের ঝাঁপের নীচের দিকে ঢুকিয়ে দেবেন; কেউ বা ক্ষোভে-গাত্রদাহে পাতাটা দুমড়ে মুচড়ে, দলা পাকিয়ে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবেন। বস্তুত, বিশেষ সুবিধা বা ‘প্রিভিলেজ’ সামাজিক কারণে আর অবস্থান-ভেদে পাওয়া যায়। যুগ যুগ ধরে প্রিভিলেজ-ভোগীরা এটা ভুলে থাকেন যে, এটা কোনও প্রতিভা নয়। আমরা বিষয়টা ভুলে যাওয়ার ভান করি, অথবা অজ্ঞতায় ও ঈর্ষায় জর্জরিত হয়ে বিষয়টিকে মেনে নিতে অস্বীকার করি। মনের গ্রন্থি একটু আলগা করলে অবশ্যই ধরা পড়বে, ‘রাজার ঘরে যে মন আছে, টুনির ঘরেও সে মন আছে।’ তাই তপেশের দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে শ্বাস নিয়ে বলি, সংরক্ষণের বাড়তি সুবিধা নিয়ে ৩৫ হাজারের কেরানির ভিক্ষার ঝুলির দিকে আর না-ই বা নজর দিলাম।
নব কুমার গায়েন
সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বাম কর্মসূচি কই?
‘কৌশল নয়, সংগঠন চাই’ (২৮-৭) শীর্ষক প্রণব বর্ধনের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে কিছু কথা। প্রণববাবু বলেছেন, তৃণমূলের অনেক দোষই কম মাত্রায় হলেও সিপিএম আমলে ছিল। তা হলে তো তৃণমূলকে আর একটু পরিশীলিত করলেই হয়। বামেদের প্রয়োজনীয়তা কেন? বামেদের সমাজ দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাঁদের করণীয় কাজ কী অর্থে অন্যদের চেয়ে গুণগত ভাবে ভিন্ন, এবং তদনুযায়ী বাস্তবে (তত্ত্বগত বুলি নয়) কী কর্মসূচি নিয়ে তাঁরা কাজ করতে চান এবং পারবেন, তা আগে ঠিক করতে হবে। তার পরে তো সংগঠন গড়ার কাজ। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাবাসীর বৃহত্তর কল্যাণের জন্য বামেরা কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে কী করতে চান, তা স্পষ্ট ভাবে, সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় ঘোষণা করতে হবে। শুধু অন্য দলের বিরোধিতা করা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
ক্ষমতায় থেকেও কেন বামেরা সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা রূপায়ণ করতে পারেননি, তার ব্যাখ্যা করতে হবে। মনে রাখা দরকার, সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার সময়ে একটা বুলেটও খরচ করতে হয়নি। প্রণববাবু সিপিএম-এর যে করণীয় কাজগুলোর কথা বলেছেন, তাতে সমবায়কে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শুধু সরবরাহ বা বিপণন সমবায় নয়, ছোট চাষিদের জমির মালিকানা বজায় রেখে উৎপাদন-সমবায় গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া উচিত, যা গুণগত ভাবে অন্যদের থেকে ভিন্ন এক উন্নত ধাপ হবে।
সমাজ বিশ্লেষণে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই রাজনীতিকে চালনা করে, তাই রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশ্লেষণ না করে শুধুই ক্ষমতায় থাকার জন্য অথবা কাউকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য নানা রকমের নির্বাচনী জোট করার কৌশল বামেদেরকে গোলকধাঁধায় নিয়ে যাবে।
মৃগেন গাঁতাইত
কলকাতা-১৫৪
অপরাধের ফাঁদে
সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে দেখা যাচ্ছে, অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান কৈশোর থেকেই নানা অপরাধমূলক কাজের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। সপ্তম, অষ্টম শ্রেণির ছাত্ররা বিএসএফ-এর চোখে ধুলো দিয়ে সীমান্তে প্যাকেট পৌঁছে দিতে গিয়ে ধরা পড়ছে। কেউ জাল নোট-সহ ধরা পড়েছে। সম্প্রতি এমন ঘটেছে মালদহের কালিয়াচক এবং হবিবপুরে। তার আগে বালুরঘাটেও মাদকদ্রব্য হোম ডেলিভারি করতে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়ে এক তরুণী। সাঁতরে মহানন্দা নদী দিয়ে ও পার বাংলায় গরু পাচার করছে কমবয়সি ছেলেরাই। অপরাধের পান্ডারা কাঁচা পয়সার লোভ দেখিয়ে দরিদ্রের সন্তানদের দিয়ে এ সব করাচ্ছে। আইন অনুসারে নাবালকদের হোমে পাঠানো হচ্ছে, মূল অপরাধীরা আইনের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে। স্কুল বন্ধ, সংসারে অনটন, মাদকাসক্তি এবং স্মার্টফোন— এ সব কিছুর ফলে অল্পবয়সি ছেলেরা অপরাধের দিকে পা বাড়াচ্ছে। এই শৈশব এবং কৈশোরকে রক্ষা করার কোনও দায় সরকারের কি নেই?
সনাতন পাল
বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর