football

সম্পাদক সমীপেষু: ফুটবলেও সূর্যোদয়

ফুটবল ছিল এক সময়ে আমাদের বাংলা তথা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। সেই ফুটবলেই আজ খেলোয়াড় পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৫৮
Share:

ফুটবল ছিল এক সময়ে আমাদের বাংলা তথা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। ফাইল চিত্র।

শুভজিৎ মজুমদারের ‘ফুটবলের স্বপ্ন ভুলে খাবার বিলি পেশা পৌলমীর’ (১১-১) পড়ে স্তম্ভিত হলাম! এত রকম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা এক জন ফুটবলারের এই পরিণতি মনকে ভারাক্রান্ত করে। বয়স কম হলেও পৌলমী প্রতি পদে আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন কী করে আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়! ভারতে খেলার জগতে ক্রিকেটের সর্বব্যাপী আগ্রাসন সত্যিই অন্য খেলাগুলিকে কোণঠাসা করে দিয়েছে। ফুটবল ছিল এক সময়ে আমাদের বাংলা তথা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। সেই ফুটবলেই আজ খেলোয়াড় পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও যাঁরা খেলতে আসছেন, তাঁদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা এতটাই যে, এই ধরনের খবর প্রায়ই চোখে পড়ে। সাম্প্রতিক অতীতে ব্যাডমিন্টন, পুরুষ ও মহিলা হকি, কুস্তি, ভারোত্তোলন, অ্যাথলেটিক্স, টেবিল টেনিস ইত্যাদি খেলায় বিশেষ কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে কয়েকটি ক্রীড়া সংস্থা সাফল্যের মুখ দেখেছে। তাতে খেলোয়াড়রাও সামাজিক এবং আর্থিক ভাবে কিছুটা মর্যাদা পেয়েছেন। ক্রিকেটের সর্বব্যাপী আগ্রাসন যেমন সত্যি, তেমনই এটাও মানতে হবে যে, ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনায় যথেষ্ট পেশাদারিত্বও আছে। অতি সম্প্রতি মহিলা ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি প্রায় ছেলেদের সমান করে দেওয়া হয়েছে, যা এক ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবে মানতেই হবে।

Advertisement

সম্প্রতি ভারতের ফুটবল ফেডারেশনের পুনর্বিন্যাস হয়েছে। নতুন কিছু রূপরেখা দেওয়ার চেষ্টাও চলছে। সদিচ্ছা থাকলে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যে অনেক কিছু করা যায়, সেটা আমরা আগে দেখেছি। তাই আশা, অদূর ভবিষ্যতে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ক্লাব তথা এআইএফএফ দেশের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বার করে যোগ্য মর্যাদাটুকু দেবে। লড়াই খুব কঠিন। কিন্তু আশা রাখি, নবীনা পৌলমী নাছোড়বান্দা মনোভাবকে সঙ্গী করেই জয় ছিনিয়ে আনবেন এক দিন।

পার্থ সারথি ভট্টাচার্য, বোরহাট, পূর্ব বর্ধমান

Advertisement

দৈন্যদশা ঘুচুক

মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে যাবতীয় বাধা কাটিয়ে ১৯৯১-এর নভেম্বরে চিনে সূচনা হয় মহিলাদের বিশ্বকাপ ফুটবলের। এর পর সারা বিশ্বে মেয়েদের ফুটবল ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ করে ফিফা। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা মেয়েদের ফুটবল খেলা বাধ্যতামূলক করে দেয় সদস্য দেশগুলোর জন্য, দেওয়া হয় বার্ষিক অনুদানও। আমাদের দেশের মানুষ ফুটবল ভালবাসলেও বিশ্বকাপ ফুটবলে আমরা এখনও প্রতিনিধিত্ব করতে পারিনি। যার অন্যতম কারণ, ফুটবলকে ক্রিকেটের মতো গুরুত্ব না দেওয়া। ফুটবলের উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ অত্যন্ত কম। অধিকাংশ জায়গায় সঠিক মাপের মাঠ নেই। নেই খেলোয়াড়দের সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। খেলোয়াড়রা অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাড়িতে তাঁদের উপযুক্ত খাবার জোটে না। খেলার জন্য পোশাক, বুট কেনার ক্ষমতা থাকে না। তা হলে আমাদের দেশ কিংবা রাজ্য উচ্চমানের খেলোয়াড় পাবে কোথা থেকে?

সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। এর পর সংবাদমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়, তা রাজ্যের পক্ষে অত্যন্ত লজ্জার। পৌলমী অধিকারী, ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি এশিয়া কাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে দেশের জার্সি পরে খেলেছেন একাধিক ম্যাচে। পরে ২০১৬ সালে গৃহহীনদের বিশ্বকাপে দেশের জার্সি পরে ফুটবল খেলেছিলেন। এ ছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, আইএফএ-সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে নিয়মিত ভাবে খেলেছেন তিনি। এর পরেও জোটেনি ন্যূনতম পরিচিতি বা সম্মান। নিজের পেট চালাতে ও সংসারের দায়ভার সামলাতে বাধ্য হয়ে অ্যাপ-নির্ভর খাবার ডেলিভারি সংস্থার কাজ করছেন। এই কাজ করে দিনে কখনও ১৫০, কখনও ২০০, কখনও বা ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। এক অতিদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন চরম লড়াই করে। পৌলমীর বক্তব্য, তিনি এখনও ফুটবল খেলা চালিয়ে যেতে চান। খেলাটা তিনি ভালবাসেন। কিন্তু তাঁর সংসারে অভাব রয়েছে। খালি পেটে খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরি দিতে আবেদন জানিয়েছেন রাজ্যের ফুটবল কর্তাদের কাছে। যাতে তিনি খেলার প্রস্তুতির জন্য পুরো সময় দিতে পারেন। পৌলমীর এই চাওয়া অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। আশা করি, রাজ্যের ফুটবল কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকার এই বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। সেই সঙ্গে ফুটবল কর্তৃপক্ষ রাজ্যের তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করে, তাকে বাস্তবায়িত করুক। পৌলমীর কাহিনি রাজ্য ফুটবলের যে দৈন্যদশা দেখাল, তা যেন পরবর্তী কালে আর দেখতে না হয় সে দিকেও নজর দিতে হবে।

গৌতম পতি, কুলবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর

কবে বোধোদয়

ভারতীয় ফুটবলকে ঝাঁকুনি দেওয়ার জন্য ক্রিকেটে আইপিএল-এর ধাঁচে ২০১৪ সালে শুরু হয় বিভিন্ন শহরের নামে কর্পোরেট দল গড়ে এক ফুটবল প্রতিযোগিতা— ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)। বিশ্ব ফুটবলের নামীদামি অবসরপ্রাপ্ত বা অবসর-আসন্ন খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়া এই প্রতিযোগিতা বাজি, আলোকমালা, গানবাজনার সঙ্গে এক মন মাতানো বিনোদন নিয়ে দেশ মাতাতে আসে। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) সমর্থিত এই প্রতিযোগিতার অন্যতম পরিচালক ভারতের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি সংস্থা। এদের পরিচালনা গুণে বা এআইএফএফ কর্তাদের ব্যর্থতার জেরে কয়েক বছরের মধ্যে কর্পোরেট পরিচালিত আইএসএল ভারতীয় ফুটবলের প্রধান টুর্নামেন্টে পরিণত হল আর ফেডারেশনের নিজের টুর্নামেন্ট আই লিগ হয়ে গেল দ্বিতীয় সারির প্রতিযোগিতা। এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন পর্যন্ত আইএসএল-এর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিল। ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত থাকা প্রধান দলগুলো বুঝতে পারল আইএসএল না খেলতে পারলে ফুটবল ক্লাব হিসাবে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে না।

অথচ, আইএসএল প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে গেলে পনেরো কোটি টাকার এন্ট্রি ফি এবং চল্লিশ-পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ করে প্রতি বছর দল তৈরি করার ক্ষমতা এই অপেশাদার কর্মকর্তাদের নেই। ২০১৯-২০ সালে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এই সারসত্য বুঝে মোহনবাগান অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতার সঙ্গে জুড়ে জার্সি আর লোগোটি বজায় রেখে কুড়ি শতাংশ লগ্নির শর্তে রাজি হয়ে এটিকে মোহনবাগান নাম নিয়ে আইএসএল গ্রহে প্রবেশ করে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান খেলবে অথচ তারা খেলবে না, এই খবরে ইস্টবেঙ্গল সমর্থক, কর্তারা মুষড়ে পড়েন। ভাঙা হাটে পড়ে থাকা খেলোয়াড় কুড়িয়ে বাড়িয়ে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিনিয়োগকারী এবং টুর্নামেন্টে খেলার অনুমতি জোগাড় করে খেলতে নামে আইএসএল-এ। শেষ মুহূর্তের পড়াশোনায় যেমন পরীক্ষায় পাশ করা যায় না, একই ভাবে শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতিহীন অবস্থায় খেলতে এসে এই মেগা টুর্নামেন্টে ঘোরতর বেইজ্জত হতে হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে। সঙ্গে বেধে যায় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে গোলমাল। তাঁরা বিদায় নেন। এই ভাবে প্রতি বছর ঝামেলা, মুখ্যমন্ত্রীর সহায়তায় শেষ মুহূর্তে নতুন বিনিয়োগকারী প্রাপ্তি, কুড়িয়ে পাওয়া তৃতীয় শ্রেণির খেলোয়াড় নিয়ে প্রতিযোগিতায় যোগদান; তার পর গোহারা হার ও বিনিয়োগকারীদের বিদায়। চলছে ইস্টবেঙ্গলের ধারাবাহিক ব্যর্থতা।

এ বার ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সহ্যের বাঁধ ভেঙেছে, দাবি ওঠা শুরু করেছে— হারতে হারতে আর আইএসএল খেলার দরকার নেই। ফিরে চলো আই লিগে; সেখানে অন্তত বেশ কিছু ম্যাচ জেতা যাবে। দুঃস্বপ্নের মতো টানা মোহনবাগানের কাছে নাকানিচোবানি খাওয়া তাঁদের বুকে লাগছে। ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তারা শুনতে পাচ্ছেন কি?

পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন