Narendra Modi

সম্পাদক সমীপেষু: রাষ্ট্রের ফন্দি

‘গণতন্ত্রের মা’ এই ভারতে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সন্ত্রাসবিরোধী ইউএপিএ ধারায় গ্রেফতার করে দীর্ঘ দিন ধরে বন্দি রাখা হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪৮
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

রাষ্ট্রশক্তির দ্বারা দেশের গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরার ফন্দিগুলো কী, তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ‘তৃতীয় সূত্র’ (২০-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে। একটা দেশের গণতন্ত্র সঠিক ভাবে রক্ষা হচ্ছে, না কি স্বৈরতন্ত্রের দিকে চুপিসারে এগোচ্ছে, সেই মূল্যায়ন দেশের মানুষই করবেন। রাষ্ট্রপ্রধান নিজের পক্ষে ঢাক পেটালেই হবে না। অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে সেই দেশের বিরোধী দলগুলোর মতামত, মর্যাদা দিতে হবে সংবাদমাধ্যমগুলোর যুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মন্ত্রণা ও অভিমতকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর অভ্যস্ত ভঙ্গিতে সম্প্রতি জি২০ সামিট প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায় দাবি করেছেন, ভারত শুধু বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ নয়, ভারত হল গণতন্ত্রের মা। ঠিক তখনই নরেন্দ্র মোদীর ভারত সম্বন্ধে অন্যরা কী বলছে? ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ সংস্থা প্রকাশিত বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে ২০১৬ সালে ভারতের অবস্থান ছিল ১৩৩, ২০২১ সালে আরও নিম্নগামী হয়ে ১৪২, ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৫০তম স্থানে। ২০২১ সালে আমেরিকার সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউস’ ভারতকে ‘মুক্ত গণতন্ত্র’-এর তকমা থেকে ছেঁটে ‘আংশিক মুক্ত গণতন্ত্র’-এর সারণিতে এনেছে। সুইডেনের ভি-ডেম ইনস্টিটিউট-এর পর্যবেক্ষণ হল, ভারত এখন নির্বাচন-ভিত্তিক স্বৈরতান্ত্রিক দেশ।

Advertisement

‘গণতন্ত্রের মা’ এই ভারতে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সন্ত্রাসবিরোধী ইউএপিএ ধারায় গ্রেফতার করে দীর্ঘ দিন ধরে বন্দি রাখা হয়েছে। শ্রীনগরের সাংবাদিক ফাহাদ শাহ বা কেরলের সিদ্দিক কাপ্পান এই ধারাতেই অভিযুক্ত। গণতন্ত্রের উপর এই আঘাত নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই দেখা গিয়েছিল। ২০০২ সালে গুজরাতের গণহত্যার কথা সকলের স্মরণ আছে। সেই ভয়াবহ দিনগুলোর জন্য মোদীকে প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী করেছে বিবিসি-র তথ্যচিত্র। দেশবাসী জানেন, সে দিনের দাঙ্গার পরিকল্পনাকে বাস্তব করেছিল সেখানকার গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীরা। আমাদের দেশে এরা নতুন নয়, ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সুস্থ চিন্তার বিরুদ্ধে এদের আস্ফালন বারে বারে দেখা গিয়েছে।

প্রবীর চক্রবর্তী, গোচারণ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

Advertisement

জনগণনা চাই

অতনু বিশ্বাস তাঁর প্রবন্ধে (প্রতি মুহূর্তের তথ্য, ২৪-২) লিখেছেন, “সময়মতো জনগণনা না হওয়ার প্রধান কারণ অবশ্যই অতিমারি।” পাশাপাশি কিছু রাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে, লিখেছেন তিনি। প্রথমত, ২০২১ সালের রীতিমাফিক জনগণনা না হওয়ার প্রধান কারণ অতিমারি কি না, তা বিচার করে দেখা দরকার। ২০১১ সালেও ভারতের জনগণনা কমিশনারের কার্যালয়ের নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল যে— যুদ্ধ, মহামারি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জনগণনার নিরবচ্ছিন্ন ধারার এই নজিরবিহীন ঐতিহ্যকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। প্রবন্ধকারও তো বলেছেন যে— দু’-দুটো বিশ্বযুদ্ধ, স্প্যানিশ ফ্লু-র মতো অতিমারি, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতার অমৃতমন্থনের মতো সমস্ত ওঠাপড়া সত্ত্বেও ভারতের জনগণনা প্রতি দশ বছর অন্তর নিয়ম করেই হয়ে আসছিল। করোনা অতিমারি কি তার চেয়েও বেশি কিছু? অথচ, অতিমারির সবচেয়ে খারাপ সময়েও আমেরিকা, ব্রিটেন ও চিনের মতো দেশে জনগণনা সম্পন্ন হয়েছে।

ভারতের মহাপঞ্জিকার ও জনগণনা কমিশনারের কার্যালয়ের নির্দেশিকার দিকে তাকালে দেখা যায়, সরকার স্থির করেছিল ২০২১ সালের জনগণনার গৃহতালিকা প্রস্তুতিকরণ ও গৃহগণনা পর্যায়ে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ২০২০ হবে, এবং একই সঙ্গে জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধনের (ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার বা এনপিআর) তথ্যভান্ডার আপডেট করা হবে। অতিমারির কারণে জনগণনা ২০২১-এর সঙ্গে এনপিআর-এর এই কর্মসূচিও স্থগিত হয়। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের জনগণনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রথম এনপিআর-এর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ২০১৫ সালে তার আপডেট করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ঘোষণা করে, ১১৯ কোটি ভারতবাসীর এনপিআর সম্পন্ন হয়েছে। ভেবে দেখা দরকার, এই এনপিআর প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণনা-২০২১ স্থগিত করে রাখার কোনও সম্পর্ক আছে কি না। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় জনগণনা স্থগিত রাখার নির্ভরযোগ্য যুক্তি হতে পারে কি?

দ্বিতীয়ত, সন্দেহ অন্য দিকেও। যেমন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-২০১৯ প্রণয়ন করার পর আজ পর্যন্ত সেই আইনের নিয়মাবলি প্রস্তুত হতে পারেনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানুয়ারি মাসে সপ্তম বার নিয়মাবলি তৈরির জন্য লোকসভা ও রাজ্যসভায় ছ’মাসের জন্য সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। এটা কি অস্বাভাবিক নয়? প্রথমে সরকার অতিমারির কারণ দেখিয়েছিল। আজও কি সেই কারণ গ্রাহ্য হতে পারে?

তৃতীয়ত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২০১৮-১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) হল জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি)-এর প্রথম ধাপ। ২০১০ সাল থেকে এপিআর-এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ২০২১-২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে এনপিআর-এর সঙ্গে আধার তথ্যভান্ডার যুক্ত করা হয়েছে। এই কর্মকাণ্ড কিন্তু নাগরিক সমাজের অবগতি ও সম্মতি ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। প্রশ্ন জাগে, ফের ২০২০ সালের এনপিআর-এর আপডেট করা, অর্থাৎ তথ্যসংগ্রহ কর্মসূচি সরকার প্রকাশ্যে এখনই করতে চাইছে না বলেই কি তার সঙ্গে ২০২১-এর জনগণনাও আটকে রইল? কারণ, এনপিআর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এগিয়ে আসবে এনআরসি-র বিষয়টি। জনমনে তা নিয়ে ক্ষোভ ও আশঙ্কা রয়েছে। অসমের এনআরসি নিয়েও ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাহিসাব নিরীক্ষক (ক্যাগ)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে যথেষ্ট সমালোচনা রয়েছে। জনগণনা পিছিয়ে দেওয়ার অতিমারিজনিত কারণের আড়ালে যে সব অন্য কারণ ‘হাওয়ায় ভাসছে’, সেগুলো কি নেহাতই অপ্রধান?

চতুর্থত, প্রবন্ধকার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে, আমাদের তবুও আধারের মতো একটা তথ্যভান্ডার রয়েছে। কিন্তু, সেই তথ্যভান্ডারও তো নানা অসম্পূর্ণতা আর ভ্রান্তির জালে জর্জরিত। ক্যাগ-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে নয় বছরে গড়ে প্রতি দিন কমপক্ষে ১৪৫টি ডুপ্লিকেট আধার তৈরি হয়েছে। যদিও আধার কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তার কিছুটা বাতিলও করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রামাণিক তথ্যভান্ডার হিসেবে আধারের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।

আমাদের প্রতিনিয়ত সাম্প্রতিক তথ্য দরকার। জনগণনা তার মধ্যে অন্যতম। কিন্তু তথ্যের নির্ভরযোগ্যতাও সমান জরুরি।

জিতেন নন্দী, কলকাতা-১৮

পাঠ্যক্রমে বদল

বিগত আট-দশ বছর ধরে রাজ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ধারাবাহিক ভাবে একই সিলেবাসে পড়াশোনা হয়ে আসছে। শেষ বার ২০১৫ সালে নবম শ্রেণি, ও ২০১৬ সালে দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। তারও আগে ২০১৩ সালে একাদশ শ্রেণি ও ২০১৪ সালে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আসে। নতুন সিলেবাসে প্রথম বার মাধ্যমিক পরীক্ষা হয় ২০১৭ সালে, ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালে। তাই আসন্ন ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সিলেবাসে রদবদল ঘটালেও সেটি পরিপূর্ণতা পাবে ২০২৬ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়।তাই অবিলম্বে সিলেবাস পরিবর্তন করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা জরুরি। সর্বভারতীয় বোর্ডগুলির সঙ্গে অনেকাংশেই সিলেবাসের সাদৃশ্য না থাকায় রাজ্যের বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে। তাই এই দিকটি বিশেষ ভাবে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাস্তবসম্মত ও যুগোপযোগী সিলেবাস তৈরির জন্য স্কুল শিক্ষা দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

দেবাশিস সাঁতরা, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন