সমস্ত মানুষের জন্য বিনামূল্যে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে সরকারি হাসপাতাল থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ সরকারের কর্তব্য। এর আগে যখন ৬৪৪টি অত্যাবশ্যক ওষুধ সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করার সরকারি নির্দেশিকা ছিল, তখনও আমরা দেখেছি বেশির ভাগ সময়েই অনেক দরকারি ওষুধ পাওয়া যেত না। ওষুধ কেনা এবং সরবরাহের নীতিতে ভ্রান্তি ও দুর্নীতির ফলেই এমন হত।
আমরা উদ্বিগ্ন যে, গত তিন মাস ধরে ব্লক থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত স্তরের হাসপাতালে বেশির ভাগ অত্যাবশ্যক এবং জরুরি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। এই তালিকা আরও বাড়লে ভবিষ্যতে কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা জাগে। সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ছাঁটাই করা হলে কার্যত তা মানুষকে জরুরি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়। সব স্তরের হাসপাতাল থেকেই রেফার-করা রোগীর সংখ্যা বাড়বে। চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর ঝুঁকি বাড়বে। চিকিৎসার প্রয়োজনে বিভিন্ন মাত্রার ওষুধ লাগে। এই সত্যকে অস্বীকার করা মানে চিকিৎসা বিজ্ঞানকেই অস্বীকার করা। কারণ, জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ওষুধের ডোজ় নির্ধারণ করার দরকার হয়। একটিই মাত্রার ওষুধ থাকলে বহু ক্ষেত্রে তাতে হিতে বিপরীত হয়।
মাঝারি স্তরের হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ কমতে থাকলে আখেরে মেডিক্যাল কলেজের উপর চাপ আরও বাড়বে। উপরন্তু স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বীকার করেছেন, মধ্যম স্তরে বহু চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই, ফলে এই স্তরে সমস্ত ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। দীর্ঘ দিন স্বাস্থ্য পরিষেবাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে দেখানো হয়েছে। আজ স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায় সেই দাবিটা ধাক্কা খেল না কি? মহকুমা বা জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার-করা রোগী বাড়লে মেডিক্যাল কলেজের ভঙ্গুর পরিকাঠামো সে চাপ সহ্য করতে পারবে তো? জরুরি পরিষেবা পাওয়ার অধিকার সব মানুষের আছে। আশঙ্কা, ওষুধ ছাঁটাইয়ের ফলে মানুষ বহু ক্ষেত্রে সেই পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হবেন।
ডা. সজল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক, সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম
বিমার খরচ
স্বাস্থ্য বিমা প্রিমিয়াম প্রচুর বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মানুষ এই পলিসি নিতে পারছেন না। প্রায় ১৫০% প্রিমিয়াম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক জন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর ৫ লাখ টাকার বিমা করতে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া সম্ভব কি? আশঙ্কা হয়, অতিমারি আসার পরে স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে অনেক, আর সুযোগ বুঝে বিমা কোম্পানিগুলিও প্রিমিয়াম বাড়িয়ে চলেছে, বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে।
স্বাস্থ্যসাথী বিমা আবার সব হাসপাতাল গ্রহণ করে না। আর বিগত ৫০ বছরে এই রাজ্যে নতুন সরকারি হাসপাতাল তেমন হয়নি। দক্ষিণ কলকাতায় বাম আমলে সরকারি হাসপাতাল হয়েছে বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, কিন্তু এখানে বড় রোগের চিকিৎসা হয় না। ইএম বাইপাসে একের পর এক বেসরকারি হাসপাতাল হয়েছে। কিন্তু এত বছরে এই রাস্তাতেও একটা সরকারি হাসপাতাল হল না।
রাজ্যের প্রায় ১০ কোটি জনসাধারণের জন্য সরকারি হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, স্টেট জেনারেল হাসপাতাল অন্যান্য গ্রামীণ হাসপাতাল মিলিয়ে এক লক্ষের মতো বেড আছে। এ ছাড়া ১২ হাজারের মতো হেলথ সেন্টার আছে। সরকারের তরফ থেকে সরকারি হাসপাতাল বাড়ানো জরুরি, তবেই না জনসাধারণ বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে হেনস্থা হওয়ার হাত থেকে বাঁচবে। তবেই না আমরা স্বাস্থ্যসাথী বিমার সুবিধাগুলো ঠিক ঠিক পাব। সরকারি হাসপাতালে প্রচুর রোগীকে বিনা পয়সায় পরিষেবা দেয়, তার জন্য সরকারকে মোটা অঙ্কের খরচ বহন করতে হয়। সরকার যদি স্বাস্থ্যসাথী বিমার মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে চিকিৎসা দিতে পারে, তা হলে সরকারি হাসপাতালের যাবতীয় চিকিৎসা খরচ বিমাসংস্থার থেকে পেয়ে যাবে। এতে সরকারও জনকল্যাণের জন্য বরাদ্দ আরও বাড়াতে পারবে।
পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
স্কুল খোলা হোক
স্কুল বন্ধই, ছাড় পেল মেলা এবং বিয়ে বাড়ি’ (১৬-১) খবরের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। বস্তুত বর্তমানে স্কুল খোলার পক্ষে বিশেষজ্ঞরাও সায় দিয়েছেন। বিশেষ করে ১৫-১৮ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকাদানের কাজ এখন শেষ হওয়ার পথে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেরই বুস্টার ডোজ়ও চলছে। তৃতীয় ঢেউয়ে করোনা সংক্রমণের হার বেশি হলেও তার শরীরের ক্ষতি করার ক্ষমতা তুলনায় কম বলে মনে করা হচ্ছে। ছোটদের সংক্রমণ ঘটলেও খুবই সামান্য উপসর্গের পর সেরে যাচ্ছে। বিগত দু’বছর শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় না যাওয়ায় পড়াশোনার বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন। অতি অল্প শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষার সুযোগ পেলেও, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয় অনলাইনে। তাই শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়াটাই শ্রেয়।
ভারতে বেশির ভাগ মানুষ দিন-আনা-দিন-খাওয়া। বিগত লকডাউন থেকে সঙ্কট বাড়ার ফলে কমবয়সি ছাত্রছাত্রী স্কুলছুট হয়ে নানান কাজে ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছে। গ্রামের কমবয়সি মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা দেশে মানবসম্পদের বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এ অপূরণীয় ক্ষতি।
শম্ভু মান্না, বহিচাড়, পূর্ব মেদিনীপুর
রুচির বদল
‘বিনা পয়সার বিনোদন’ (১৫-১) প্রবন্ধটি সময়োচিত। লেখক পুনর্জিৎ রায়চৌধুরীর সঙ্গে আমি সহমত। “সমাজমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে খারাপ পণ্য গ্রহণ করতে শুরু করার ফলে সেই পণ্য আমাদের সামগ্রিক রুচি এবং পছন্দের উপর প্রভাব বিস্তার করতে লাগল”— প্রবন্ধে উল্লিখিত এই অংশটি আক্ষরিক অর্থেই সত্য। প্ল্যাটফর্মে বসে সুরে-বেসুরে গান গেয়ে দিনাতিপাত করা এক জন মানুষকে নিয়ে কিছু দিন আগে সমাজমাধ্যমের উন্মাদনা, এমনকি প্রবাদপ্রতিম শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তুলনায় শুধুই যে বিস্মিত হয়েছিলাম, তা-ই নয়, আমাদের সর্বজনবিদিত রুচি ও মননশীলতা বিষয়েও প্রশ্ন জেগেছিল। ইদানীং সমাজমাধ্যমে প্রচারিত এক বাদাম বিক্রেতার নিজ কথা ও সুরে গাওয়া কয়েক লাইনের বিজ্ঞাপনী গান তাঁকে সমাজমাধ্যমে বিচরণকারীদের আগ্রহ এবং কৌতূহলের শীর্ষবিন্দুতে নিয়ে গিয়েছে। সমাজমাধ্যমে এ ধরনের প্রচারসর্বস্ব বিষয়বস্তুর দর্শক ও গ্রাহক সংখ্যাও ঈর্ষণীয়। অপর দিকে, কিছু দিন আগে বাংলার এক প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পীকে, তাঁর নিজস্ব ডিজিটাল চ্যানেলে আপলোড করা গানের দর্শক ও শ্রোতার সংখ্যা বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করতে শোনা গিয়েছিল। আমাদের রুচি ও পছন্দের বিষয়ে সে কারণেই প্রশ্ন জাগে মনে। সমাজমাধ্যম থেকে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে, দর্শক ও গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে, নাচ-গান-রান্না প্রদর্শনের অছিলায় চলছে কুরুচিকর বিষয়বস্তুর রমরমা। কষ্টকল্পিত বিষয়বস্তু নিয়ে নির্মিত মেগা ধারাবাহিকের রসে ডুবছে মন, পাল্টে যাচ্ছে রুচি ও পছন্দ। প্রবন্ধের সত্যকথনের ছাঁকনিতে নিজের রুচি ও পছন্দগুলোকে এক বার অন্তত ছেঁকে নিতে পারলাম।
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
আলো কম
হাওড়া-তারকেশ্বর-গোঘাট ট্রেনলাইনে শেওড়াফুলির পরেই ব্যস্ত স্টেশনগুলির মধ্যে হরিপাল অন্যতম। কিন্তু এই স্টেশনে প্রয়োজনের তুলনায় আলো কম। ফলে সন্ধ্যার পর ট্রেন থেকে নামা যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে, বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিকরা সমস্যায় পড়ছেন।
তাপস দাস, সিঙ্গুর, হুগলি