নিয়মিত জল জমায় নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে শহর এবং শহরতলির অসংখ্য মানুষকে। জল জমার চিত্র সামনে এলে তা নিয়ে মন্ত্রী-আমলারা অনেক কথা বলে আশ্বাস দিয়ে থাকেন। শহরের ভৌগোলিক অবস্থা, পুরনো নিকাশিব্যবস্থা, পুরনো পাম্প, খালের নাব্যতা ইত্যাদির কথা বলে যান। শহরের জলনিকাশি ব্যবস্থার উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবর্তন করাও যে তাঁদের দায়িত্ব, এবং যথাযথ ভাবে সে সব কর্তব্য পালিত না হওয়া যে তাঁদের ব্যর্থতা, তা এই কর্তাব্যক্তিদের কথায় মনে হয় না। এই অবস্থার জন্য যেন নাগরিকরাই দায়ী, এমন ভাবে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
তবে যত্রতত্র প্লাস্টিকের বোতল, মোড়ক ফেলার জন্য নাগরিকরাই দায়ী। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কেন এই অবস্থা, তা নেতা-আধিকারিকদের গভীর ভাবে বিচার-বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্লাস্টিকের কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থার অভাবে এই সমস্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শুধুমাত্র প্লাস্টিকের জলের বোতল নয়, ওষুধের বোতল, ওষুধের প্যাকেটের সঙ্গে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছোট ছোট প্লাস্টিক প্যাকেটে বিক্রি এই সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে চলেছে। পুকুরের জলে হাজার হাজার শ্যাম্পু ও গুঁড়ো সাবানের প্যাকেট ভেসে থাকছে। প্রশাসনের মদতে প্লাস্টিক আজ বহুল ভাবে ব্যবহৃত। সহজলভ্যতার জন্য, এবং প্লাস্টিকের বিপদ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতার অভাবের জন্য এমন অবস্থা।
শুধুমাত্র নাগরিককে দোষারোপ করে সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না। সব ধরনের দ্রব্য প্লাস্টিকের প্যাকেটজাত করার ব্যবস্থা বন্ধ করতে প্রশাসন তার উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবে কি না, প্রশ্ন সেটাই। এ বিষয়ে তাদেরই বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্যামল ঘোষ
কলকাতা-১৩১
ডোম পদপ্রার্থী
রাজ্যে ডোম বা ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট-এর ছ’টি শূন্যপদে জমা পড়া আট হাজার আবেদনকারীর মধ্যে এক হাজার ইঞ্জিনিয়ার আছেন (“‘ডোম’ পদে প্রার্থী একশো ইঞ্জিনিয়ারও!”, ২৪-৭), এ সংবাদ ক্রোধ, হতাশা, বেদনা, কোনও অনুভূতি আর বহন করে না। টোটো-অটো চালিয়ে, সুইগি-জ়োম্যাটো-বিগ বাস্কেট-অ্যামাজ়ন-ফ্লিপকার্টের বোঝা বওয়ার চেয়ে সরকারি ডোমের স্থায়ী চাকরি অনেক নিরাপদ। সিভিক ভলান্টিয়ার আজও হোমগার্ড হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, আশাকর্মী সামান্য ভাতা বাড়ানো হলে বর্তে যান, টেট-এর জটে শিক্ষক নিয়োগ বার বার বাধাপ্রাপ্ত হয়। কোভিড পর্বে অসংগঠিত ক্ষেত্রে চাকরি হারানো মানুষের যন্ত্রণা কোনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে দেখা যায় না। কুলোর বাতাস দিয়ে ন্যানো কারখানার বিদায় না হলে ডোমের পদে দরখাস্তকারী একশো ইঞ্জিনিয়ারদের কেউ কেউ হয়তো নিজ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে পারতেন!
রাজশেখর দাশ
কলকাতা-১২২
কার উন্নয়ন?
শিল্প নেই, কলকারখানা বন্ধ, অসংগঠিত ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর কাজের সুযোগ থাকলেও সেখানে ঘোর অনিশ্চয়তা। ফলে ডোম তথা ল্যাবরেটরি অ্যাডেনডেন্ট-এর মতো সামান্য বেতনের যে কোনও সরকারি চাকরি পেলে তাকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরছে বিপুল বেকারবাহিনী। করোনার আগে থেকেই দেশ জুড়ে কর্মসংস্থানের এই বেহাল অবস্থা। অতিমারিতে বেকারত্ব আরও বেড়েছে। এই যুবকরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বলি দিয়ে লাশকাটা ঘরের কাজ জোগাড় করতে বিশাল লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। তবে যে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা কর্মসংস্থান, উন্নয়নের এত গল্প শোনাচ্ছেন! আর্থিক উদারীকরণের ৩০ বছর অতিক্রম করল ভারত, বিশ্বের পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী মহলে সংস্কার নীতির বাহবা কুড়োচ্ছেন শাসক বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। কংগ্রেসের অনুগামী বিজেপির এই সংস্কার নীতির ‘সুফল’ নাকি এতটাই ফলেছে যে, ‘ডিজিটাল অ্যান্ড সাসটেনেবল ট্রেড ফেসিলিটেশন’ সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারত বহু উন্নত দেশকে ছাড়িয়ে ব্যবসায়িক উন্নয়নে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পকেটে পুরে ফেলেছে। কিন্তু এই ব্যবসায়িক লাভ গিয়েছে কার ঘরে? এই সমীক্ষাই বলছে, উন্নয়ন হচ্ছে সমাজের মুষ্টিমেয় উপরতলার মানুষের— দেশের এক শতাংশ সুবিধাভোগী শ্রেণি, একচেটিয়া পুঁজিমালিকদের। নিরানব্বই ভাগ সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে, শোষণ করে, জাতীয় সম্পদ লুট করে তাদের এই রমরমা। তাই বেকারের সংখ্যা, কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে তরতরিয়ে।
সোমা নন্দী
শিয়ালদহ, কলকাতা
নমস্য চালক
‘জমা জলে অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলে রোগীকে বাঁচালেন চালক’ (৩১-৭) সচিত্র সংবাদটি আমাদের অনেক কিছু জানিয়ে দিয়ে গেল। প্রবল বৃষ্টির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে মানুষের পাশে থেকে নিরাপত্তা দেওয়ায় সচেষ্ট এই মানুষটির প্রকৃত পরিচয় আমরা পেলাম। হৃদ্রোগে আক্রান্ত বিপন্ন এক রোগীকে বাঁচানোর জন্য প্রায় দেড় ফুট জমা জলের মধ্যে আধ কিলোমিটার রাস্তায় গাড়ি ঠেলে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। দায়িত্ববোধ, কর্তব্যনিষ্ঠা আর একান্ত আন্তরিকতা না থাকলে কেউ এমন কাজ করতে পারে না। এই অ্যাম্বুল্যান্স চালক প্রকৃতপক্ষেই এক ব্যতিক্রমী মানুষ। শ্রদ্ধেয় এই মানুষটির কাজের মূল্যায়ন তো করাই যায় না, এ কাজের প্রশংসাও করতে নেই। শুধু মাথা নত করা যায়। এমন বিপন্ন সময়ে এই সংবাদ কিছুটা আশার সঞ্চার করে।
অমলকুমার মজুমদার
শিবপুর, হাওড়া
বিপন্ন গ্রন্থাগার
তৃষ্ণা বসাকের ‘গ্রন্থাগার, এক বিলুপ্তপ্রায় বস্তু’ শিরোনামের প্রবন্ধটি (৩১-৭) আসন্ন এক বিপদ সম্পর্কে সজাগ করে দিয়েছে। আমাদের রাজ্যের সাম্প্রতিক গ্রন্থাগারব্যবস্থাটি যে প্রায় ভেঙে পড়েছে, সে কথা ভাবলে কষ্ট হয়। অতিমারির আবহে, দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত থেকে লাইব্রেরির বইয়ের ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেল! তবে এ ভাঙনের শুরু অতিমারির অনেক আগে থেকেই। সরকারি, বেসরকারি অনেক গ্রন্থাগারেই কর্মী নিয়োগ নেই বহু দিন। বহু পদ শূন্য। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উপযুক্ত গ্রন্থাগারিক না থাকলে গ্রন্থাগার তো বইয়ের গুদামমাত্র। আমি ৪২ বছর ধরে রাজ্যের তিন ধরনের লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিকতা করেছি। স্বীকার করতে বাধা নেই যে, দু’তিন দশক আগের তুলনায় বর্তমানে গ্রামে-শহরে সাধারণ পাঠাগারের বহিরঙ্গের জৌলুস বেড়েছে। ভাল বিল্ডিং, ভাল আসবাবপত্র হয়েছে, কম্পিউটার বসেছে। কিন্তু সামগ্রিক পরিষেবার ক্রমাবনতি হয়েছে। অবিলম্বে শূন্যপদ পূরণের ব্যবস্থা না হলে, এবং লাইব্রেরিগুলি সম্পূর্ণ সচল না হলে, সত্যিই জ্ঞানচর্চার পরিসরে অন্ধকার নেমে আসবে।
রামকৃষ্ণ দে
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
বইয়ের জগৎ
‘বই, ভাল বই’ শীর্ষক সম্পাদকীয় (১-৮) সময়োপযোগী। মানুষের বই পড়ার অভ্যাস কমে গিয়েছে। কিন্তু অতিমারিতে গৃহবন্দি থাকার ফলে বই পড়ে অনেক মানুষ সময় কাটিয়েছেন। বইয়ের বিকল্প কিছু হতে পারে না। বইয়ের বিকল্প শুধু বই-ই। সে নিজের মধ্যে একান্ত জগৎ তৈরি করে দিতে পারে। মানুষ যত ভাল বই পড়বে, তত কমবে হতাশা, উদ্বেগ, পার্থিব শোকতাপ, না-পাওয়ার কষ্ট। আঘাত, মান-অপমান সহজে গায়ে লাগবে না যদি কেউ ভাল বই পাঠ করেন। বিশুদ্ধ আনন্দ পেতে আর দুঃখ-কষ্টকে দূরে রাখতে ভাল বইকে আপন করে নিতেই হবে। অতিমারি আমাদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করে দিয়েছে। বই পড়া থেকে যেন বিমুখ না হই।
শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
বহড়ু, দক্ষিণ ২৪ পরগনা