প্রতীকী ছবি।
‘কর্মসংস্থান বাড়াই মূল কথা’ (৭-১০) প্রবন্ধে নতুন শ্রম আইন সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি চোখে পড়ল। বেশ কিছু দিন কর্পোরেট দুনিয়ায় কাটানোর ফলে আমার ধারণা, যে কোনও প্রতিষ্ঠান ভাল কর্মচারীর কদর করে। সমস্ত সফল প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ কর্মচারী সন্তুষ্ট এবং সুখী। অসুখী কর্মচারীদের কাছ থেকে পূর্ণ দক্ষতার কাজ পাওয়া যায় না। নতুন শ্রম আইনে যে পরিবর্তনগুলির কথা ভাবা হচ্ছে, তা বাস্তবায়িত করলে কর্মসংস্থান বাড়বে। বিভিন্ন জটিল নিয়ম থাকার জন্য মালিকরা শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে চাপে থাকতেন। এখন তাঁরা চাপমুক্ত হয়ে শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবেন।
বাজার চাহিদা ও জোগানের উপর নির্ভরশীল। শ্রমের বাজারও তার ব্যতিক্রম নয়। বরং বলা যায়, নতুন শ্রম বিলে অনেক সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা আগে ছিল না। অদক্ষ, অবাধ্য শ্রমিকদের বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও তাঁরা নিজেকে সংশোধন না করলে, তাঁদের বাধ্য হয়ে রেখে দেওয়া ব্যবসায় উন্নতির পরিপন্থী। অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা শ্রমিককে অনেক সুযোগ-সুবিধে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে (স্থায়ী শ্রমিকদের মতোই)। সব মিলিয়ে নতুন শ্রম আইন, অনেক কর্মসংস্থান করবে। যে কোনও আইনে কিছু অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকেই, কিন্তু বেশির ভাগটাই ভাল হলে তাকে সাদরে গ্রহণ করা উচিত।
মৌলিনাথ ঘোষ
কলকাতা-১০৮
এই কি সংস্কার?
পার্থপ্রতিম মিত্রের বক্তব্য ‘‘শ্রম আইন যাতে সরল হয়, সময়ের দাবি মেনে পাল্টায়, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত সংস্কারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।’’ কিন্তু এই সংস্কারের জন্য দীর্ঘ দিনের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এড়িয়ে গিয়ে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকারের কর্মসূচি অনুমোদন করিয়ে নেওয়া ভারতীয় গণতন্ত্রের রীতি ও নীতির বিরোধী। গত পাঁচ বছর দেশের শিল্প সংক্রান্ত আলোচনার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান ‘ভারতীয় শ্রম সম্মেলন’-এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। শ্রমিক কর্মচারীদের সমস্যা আলোচনার প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিগুলি, বিশেষ ভাবে ত্রিপাক্ষিক সভায় আলোচনার পদ্ধতিগুলি কার্যকারিতা হারাচ্ছে। পার্থপ্রতিমবাবুর কাছে যা গুরুত্ব পায়নি। দেশে কোনও জাতীয় বেতন নীতি নেই। ন্যূনতম বেতন দৈনিক ১৭৮ টাকা। এই বিষয়টি যথাযথ সম্বোধনও করা হয়নি। তা ছাড়া অতিমারির কারণে জীবন ও জীবিকা যখন বিপন্ন, তখন কি শ্রম আইন পরিবর্তনের উপযুক্ত সময়?
আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত যে, শ্রমিক হচ্ছে শিল্পের ‘সমান অংশীদার’। তা যদি হয়, তা হলে খোলাখুলি সরকার বলতেই পারত যে, কোন কোন আইন বদল করলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হবে। কোনও আইনের পরিবর্তন করলে যদি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়, তা হলে শ্রম সংস্কার সানন্দে মেনে নিত সকলে। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। অর্থনীতি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের হুঁশিয়ারি, ২০২১ সালে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, বিশ্ব অর্থনীতির সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করবে বেকারত্ব, আয়ে অসাম্য, চাহিদায় ধাক্কা, সরবরাহ সঙ্কট, ও সংস্থাগুলির দেউলিয়া হয়ে পড়া। সব দেশ মিলিয়ে মুছবে ৬ লক্ষ কোটি ডলার। বিশ্ব অর্থনীতি সঙ্কুচিত হবে। এই পরিস্থিতি বিনিয়োগের পক্ষে অনুকূল নয়। তাই কেবল শ্রম আইন বদলে কর্মসংস্থান হবে, এ কথা কি বিশ্বাসযোগ্য?
পরিকাঠামোর উন্নয়ন না হলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ সম্ভব নয়। কোনও শ্রমিক সংগঠন বিনিয়োগে আপত্তি করেনি। বরং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক্-বাজেট সভায় শ্রমিক সংগঠনগুলি বার বার পরিকাঠামোয় বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে বলেছে। আসলে সরকারের লক্ষ্য হল, কর্পোরেট ক্ষেত্রকে অবাধ সুযোগ করে দেওয়া। অবাধ ছাঁটাইয়ের রাস্তা চওড়া হচ্ছে, অথচ শ্রম বিধিতে উল্লেখ নেই বেকার ভাতার কিংবা বিমার। সামাজিক সুরক্ষার বিধিতে উল্লিখিত ‘নেটওয়ার্ক’ সকলের জন্য নয়। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য বাস্তবে কোনও সুরক্ষার বিধি নেই। ঠিকাদারদের বাড়তি সুযোগ দেওয়ায় দুর্ভোগ বাড়বে পরিযায়ী শ্রমিকদের। পাকা চাকরির কফিনে শেষ পেরেক। বাড়তে পারে দৈনিক কাজের সময়ও।
চারটি শ্রম বিধি পড়তে ভাল। কিন্তু আইনি ফাঁক অজস্র। সরকার ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক।
অশোক ঘোষ
সাধারণ সম্পাদক, ইউটিইউসি, কেন্দ্রীয় কমিটি
নমনীয়
শ্রমিকরা ‘নমনীয়’ হলে মালিক পক্ষের সুবিধা হবে, তা সবাই জানেন। কিন্তু নতুন শ্রম বিধিতে মালিক পক্ষ কেমন ‘নমনীয়’ হবেন, তা তো জানতে পারলাম না। পার্থপ্রতিম মিত্র উল্লেখ করেছেন— ৪০ কোটি কর্মীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা তহবিল হবে, অস্থায়ী শ্রমিকরা স্থায়ী শ্রমিকদের সমান সুবিধা পাবেন, দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক জরিমানার ৫০ শতাংশ পাবেন, গিগ-শ্রমিক, প্ল্যাটফর্ম-শ্রমিক, পরিযায়ী-শ্রমিকদের এই আইনের মধ্যে আনা হবে, এঁদের সরকারি কাজে কর্মসংস্থান হবে। ঘটনা হল, প্রাপ্য নির্ধারণ করেও লাভ নেই, যদি তা পাওয়ার প্রক্রিয়া নিশ্চিত না করা যায়। ভারতে বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিকরা মালিকদের কাছে আবেদন-নিবেদন করে বকেয়া বেতন, পিএফ, গ্র্যাচুইটি আদায় করতে না পেরে আদালতের দ্বারস্থ হন। বহু ক্ষেত্রে নিম্ন আদালত, লেবার কমিশনার শ্রমিকদের পাওনাগন্ডা মিটিয়ে দিতে বলেছে। তা সত্ত্বেও মালিকরা নীরব। সবিনয়ে প্রশ্ন, শ্রমিকদের পাওনাগন্ডা মেটানোর ব্যবস্থা আছে কি?
শুভ্রাংশু কুমার রায়
চন্দননগর, হুগলি
ভীরু সরকার
‘এখন কেন’ (সম্পাদকীয়, ৬-১০) মোদীর মধ্যে ‘রাজনৈতিক সাহস’ খুঁজে পেয়েছে। এটা বস্তুত রাজনৈতিক ভীরুতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ৪৪টি শ্রম আইনকে চারটি বিধিতে সীমাবদ্ধ করার এমন একটা সময় বেছে নেওয়া হল, যখন অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। যাঁরা খোঁজই রাখেন না, লকডাউনে কত পরিযায়ী শ্রমিক প্রাণ দিলেন, তাঁদের আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য শ্রমিক কল্যাণ, এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে?
দেশের পুঁজি যখন অলস, উদ্যোগপতিরা নতুন বাজার খোঁজায় উদ্যোগী, তখন এই গণ্ডিতে থাকার যে কোনও মানে হয় না, তা বিলক্ষণ বোঝেন শাসক। তাই জমি আর শ্রমের দিকে দৃষ্টি পড়েছে। ফলে ধনকুবেরদের প্রয়োজনে ছোটখাটো জমির মালিক জমি হারিয়ে ভিখারিতে পরিণত হবেন, শ্রমজীবী মানুষের শ্রম অতি অল্প দামে বিক্রি হবে, যথেচ্ছ ছাঁটাইয়ের ফলে শ্রমিকরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন।
শঙ্কর সাহা
সভাপতি, এআইইউটিইউসি
পরীক্ষার মান
জেলা স্বাস্থ্য দফতর পরিকাঠামো না দেখেই গ্রামের প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিগুলোকে অনুমোদন দেয় (‘‘ল্যাব-রিপোর্টে ‘ভুল’ সংশোধনে...’’, ৮-১০)। সেখানে কয়েক জন টেকনিশিয়ান সব রকমের পরীক্ষা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক জন প্যাথলজিস্টকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করে, তাঁকে দিয়ে ফাঁকা রিপোর্ট পেপারে আগেই সই করিয়ে রাখা হয়। টেকনিশিয়ান টাইপ করে রিপোর্টে তথ্য বসিয়ে দেন। আমার পরিবারের এক জনের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকের সন্দেহ হওয়ায় অন্য জায়গা থেকে আর একটি রিপোর্ট করতে বলেন। দেখা যায়, দুটোর মধ্যে প্রচুর পার্থক্য। রাসমোহন দত্ত
মছলন্দপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।