গোটা দেশে যখন নিজের কৃতকর্মের দায় না নেওয়ার চেঁচানিই শোনা যাচ্ছে প্রবল ভাবে, যখন স্পষ্ট দোষ করেও লোকে বলছে ‘‘কিস্যু হয়নি, আমি কিস্যু করিনি, সব নিন্দুকদের অপপ্রচার’’, তখন ক্রিকেট খেলায় দলের লজ্জাজনক হারের দায় নিয়ে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলেন গৌতম গম্ভীর। এই সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারা গেল না। এর আগে রিকি পন্টিং এমন কাজ করেছিলেন বটে, কিন্তু এ দেশের লোকের মধ্যে এই মেরুদণ্ড ও দায়িত্ববোধ, সর্বোপরি বিবেকের স্বাক্ষর সত্যিই বিরল। এ-ও শোনা গেল, উনি বলেছেন, প্রাপ্য টাকা নেবেন না, কারণ যে কাজের জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছিল, তা তিনি পালন করতে পারেননি। টাকা শেষ অবধি তাঁকে দেওয়া হবে কি না জানি না, কিন্তু যে দেশে লোকে কাজ না করেই মাইনে পাওয়ার অধিকার নিয়ে গলাবাজি করে, সেখানে এই কথাটুকু বলার জন্যই তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ!
রমিত সেন
কলকাতা-৬৮
গোর্কি, উৎপল
বিভাস চক্রবর্তীর (‘ব্রেখট থেকে উৎপল দত্ত, সবার অনুপ্রেরণা’, রবিবাসরীয়, ২৫-৩) মতে, ‘‘উৎপল দত্ত নামক মানুষটি যেন ছিলেন বৈপরীত্যের প্রতিমূর্তি’’ এবং তিনি ‘‘গোর্কির মূল্যায়নে কিঞ্চিৎ দ্বিধাগ্রস্ত।’’ এই মত নিয়ে প্রশ্ন আছে।
গোর্কি প্রসঙ্গে উৎপল দত্তের যে মন্তব্য নিবন্ধকার উদ্ধৃত করেছেন, তা ১৯৭২ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপকদের দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারের অংশ (এপিক থিয়েটার, ১৯৯৯)। কিন্তু সাক্ষাৎকারের যে অংশ উদ্ধৃত হল না, সেখানে উৎপল বলেন, ‘‘গোর্কি সম্পর্কে আমরা সেই বিচারই প্রয়োগ করব যা আমরা রবীন্দ্রনাথ বা উইলিয়াম শেক্সপিয়র সম্পর্কেও করে থাকি— যে তাঁকে বাদ দেওয়া চলবে না— তাঁর প্রচণ্ড প্রয়োজন আছে, কিন্তু তিনি আমাদের প্রধান কার্যসূচি হতে পারেন না। সেখানে বেরটোল্ট্ ব্রেখটই সত্যিকারের শ্রমিক শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ করেছেন।’’
‘রবি ঠাকুরের মূর্তি’ প্রবন্ধে উৎপল, তাঁর অলটার ইগো জপেনদার জবানিতে বলেন, ‘‘এক একটা আস্ত যুগকে যাঁরা সাহিত্যে প্রতিফলিত করেন, তাঁরা নিজ যুগের সর্বপ্রকার ঝোঁকের প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। যে শেক্স্পিয়ার ডেসডেমোনা, জেসিকা, পোর্শিয়া, এমনকি হার্মিয়া চরিত্রে নারীমুক্তির বলিষ্ঠ প্রচারক তিনি ‘টেমিং অব দ্য শ্রু’ নাটকে প্রায় কলকাতার স্টার থিয়েটারি কায়দায় পতিদেবতার পদতলে লুণ্ঠিতা নারীকে সুখী করে দেখান। যে গোর্কি ‘মা’ উপন্যাসে বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণিকে তুলে ধরেন, তিনিই আবার ‘নীচের মহল’ নাটকে এবং অসংখ্য গল্পে অন্তরের সব মমতা ঢেলে দেন ভিখারি, চোর ও ভবঘুরেদের জন্য যারা সামাজিক বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে বিপজ্জনক লুম্পেন শ্রেণি মাত্র।’’
জপেনদা আরও বলেন, ‘‘‘নীচের মহলের’ ব্যর্থ অন্ধকারে আত্মহত্যা আর মাতাল কণ্ঠের গানে নাটক শেষ করলেও কারুর সাধ্য নেই গোর্কিকে বাদ দিয়ে বিপ্লবী সংস্কৃতির কথা বলে।’’ এর মধ্যে বৈপরীত্য বা দ্বিধা কোথায়? এ তো মার্ক্সবাদের আলোকে গোর্কি চর্চা। উৎপল তো গোর্কির নাটককে বাদ দিতে বলেননি।
উৎপল দত্তের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় (এপিক, ১৯৯৪) বিভাস চক্রবর্তী তাঁকে ‘আজকের গিরিশ ঘোষ’ অভিধায় ভূষিত করেন। এ-ও বলেন, ‘‘সারা ভারতে তাঁর সমকক্ষ আর কেউ আছে বলে আমি অন্তত জানি না।’’ তাঁকে আজকে হঠাৎ ‘বৈপরীত্যের প্রতিমূর্তি’ বলার মধ্যে কি এক ধরনের স্ববিরোধিতা নেই?
কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে গোর্কির সম্পর্ক অনেক উত্থান-পতনের উপলবন্ধুর পথ অতিক্রম করেছে। মস্কো মামলা সূত্রে জানা যায় য়াগোদার গুপ্তচরবাহিনীর হাতে গোর্কি নিহত হন। তাঁর শববাহকদের মধ্যে ছিলেন স্তালিন ও মলোটভ। লেনিন গোর্কির গুণমুগ্ধ ছিলেন কিন্তু তাঁকে পাতিবুর্জোয়া বিপ্লবী বলেই মনে করতেন। কাপ্রিতে থাকাকালীন (১৯০৮) ভাববাদী ওটজোভিস্টদের নেতা হিসাবে গোর্কি লেনিনকে দর্শন আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানালে, লেনিন স্বভাবসিদ্ধ লঘু মেজাজে বলেন, তিনি অবশ্যই আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন কিন্তু দার্শনিক আলোচনায় অংশ নেবেন না। আসলে লেনিন এই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন যে, দর্শন আলোচনার বিষয় নয়, তা সমাজ বদলের হাতিয়ার (লুই অলথুসারের ‘লেনিন অ্যান্ড ফিলসফি অ্যান্ড আদার এসেজ’)।
নভেম্বর বিপ্লবের পর ‘নতুন জীবন’ পত্রিকায় গোর্কি লেনিনের বিরুদ্ধে তীব্র ব্যক্তিগত এবং ভিত্তিহীন আক্রমণ শানান। তাঁকে পার্টি থেকে বিতাড়নের কথা ওঠে। সেন্ট্রাল কমিটির সভায় সবার শেষে লেনিন তাঁর সংক্ষিপ্ততম ভাষণে, সামান্য হেসে বলেন, ‘‘ক্যান দ্য রাশিয়ান প্রোলেটারিয়েট অ্যাফোর্ড টু লুজ ম্যাক্সিম গোর্কি? দ্য পার্টি মাস্ট গো টু ইট্স পোয়েট। ইট মাস্ট নট বি আদারওয়াইজ।’’ আমাদের দেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা যদি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে এই উদারতা দেখাতে পারতেন, তা হলে বাম আন্দোলনই গতি পেত।
শিবাজী ভাদুড়ী
সাঁতরাগাছি, হাওড়া
ভারতমাতা
‘দেবতার জন্ম’ (২১-৪) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে লিখি, ভারতমাতা হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কোনও দেবতা নন। তাঁকে সন্তোষী মা-র সঙ্গে মেলানো যুক্তিযুক্ত নয়। ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন, ‘‘দেশমাতা হলেন মা, দেশপ্রেম হল ধর্ম, দেশসেবা হল পূজা।’’ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতমাতা’ ছবি এঁকেছিলেন, সেখানে ভারতমাতা হলেন গেরুয়া বসন পরিহিতা এক যোগিনী মূর্তি। তিনি একাধারে দেবী ও মানবী। বিশ শতকে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সংগঠন ও প্রসারে এই ছবিটির প্রভাব অনস্বীকার্য। স্বদেশি যুগে বিভিন্ন সভাসমাবেশে এই ছবিটি সাজানো থাকত। ভগিনী নিবেদিতার মতে, চিত্রটি ছিল জাতীয়তাবাদের প্রসারের ক্ষেত্রে প্রথম একটি তাৎপর্যপূর্ণ ছবি।
শ্যামল বসু
বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
অভিধান দিবস
১৮১৭ সালে (মতান্তরে ১৮১৮) ব্রাহ্ম সমাজের প্রথম আচার্য প্রখ্যাত স্মার্ত পণ্ডিত রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় ‘বঙ্গভাষাভিধান’ নামে প্রথম বাংলা অভিধান সঙ্কলন করেন। তাঁর পথ অনুসরণ করে আজ পর্যন্ত ১১০টির বেশি বাংলা অভিধান সঙ্কলিত হয়েছে। ২০১৭ সালে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের সঙ্কলিত অভিধানটির দ্বিশতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। বিখ্যাত আমেরিকান অভিধানকার নোয়া ওয়েবস্টারকে শ্রদ্ধা জানাতে আমেরিকাবাসী ১৬ নভেম্বর তাঁর জন্মদিনকে উপলক্ষ করে বেশ ঘটা করে ‘অভিধান দিবস’ পালন করে। প্রস্তাব করি, রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের জন্মদিন ২৯ মাঘকে রাজ্য সরকার ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ ‘বাংলা অভিধান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করুক ও প্রতি বছর দিনটিকে পালন করা হোক। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এই দিনটি বাংলা অভিধান নিয়ে আলোচনা ও অন্তত একটি নূতন বাংলা শব্দ শিখে দিনটিকে স্মরণযোগ্য করে রাখুন।
অসিতাভ দাশ
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, নদিয়া
নিধিরাম?
কুণাল সরকার ‘নিধিরাম বানিয়ে রাখলে হবে?’ (২৬-৪) লেখায় হিসেবে দিয়েছেন, ৮ লক্ষ ডাক্তার; ১২০ কোটি মানুষ। এক জন ডাক্তার ১০০ করে রোগী দেখলে ৮ কোটি মানুষ চিকিৎসা পায়। ১২০ কোটি মানুষ একসঙ্গে অসুস্থ হতে পারেন না। শতকরা ১০ জন ধরলে রোগীর সংখ্যা ১২ কোটি হতে পারে। দ্বিতীয়ত আমাদের দেশে প্রচুর উপচিকিৎসক আছেন যাঁদের হাতে গ্রামীণ মানুষ মূলত চিকিৎসা পান। সমস্যা অন্যত্র। ভেবে দেখুন।
সনৎ কর
ই-মেল মারফত
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়