সম্পাদক সমীপেষু: মনের কথা ও ব্যথা

ওই দিন রাত্রি ৮টা থেকে ৮.৫৫ আকাশবাণীর ঐতিহ্যপূর্ণ এবং জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সবিনয় নিবেদন’-এর সময়। অগণিত শ্রোতা তা থেকে বঞ্চিত হন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০০:২১
Share:

‘মন কি বাত’-এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেতার সম্পর্কে তাঁর স্মৃতিচারণায় ভোর সাড়ে পাঁচটায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। অথচ কোনও রেডিয়ো চ্যানেলেই ভোর সাড়ে পাঁচটায় নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান হত না। এত বড় মানুষের বক্তব্যে শ্রোতৃবৃন্দ একটু তথ্যনিষ্ঠতা দাবি করেন বইকি। কেননা তাঁর ওই একটি অনুষ্ঠানের জন্য শ্রোতাদের কিছু প্রিয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে আপস করতে হয়। ‘মন কি বাত’ বাজানো হয় মাসের কোনও এক রবিবার (সাধারণত শেষ রবিবার) বেলা ১১টা থেকে। মূল হিন্দি ভাষার অনুষ্ঠানটির অব্যবহিত পরেই, আঞ্চলিক ভাষায় অনুবাদ শোনানো হয়। এবং সেই দিনই রাত ৮টায় আঞ্চলিক ভাষার অনুবাদ আবার বাজানো হয় এবং তার পর আবার বাধ্যতামূলক ভাবে সাঁওতালি ভাষায় তা শুনতে হয়। ওই দিন রাত্রি ৮টা থেকে ৮.৫৫ আকাশবাণীর ঐতিহ্যপূর্ণ এবং জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘সবিনয় নিবেদন’-এর সময়। অগণিত শ্রোতা তা থেকে বঞ্চিত হন।

Advertisement

শঙ্খ অধিকারী সাবড়াকোন, বাঁকুড়া

Advertisement

সঞ্চয়িতা

সদ্য-প্রয়াত অশোক মিত্র সংক্রান্ত কয়েকটি চিঠি (১৩-৫) প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম চিঠিতে পত্রলেখক বলেছেন, ‘‘১৯৭৫ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাসবিহারী কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন সুনীল দাস।’’ ১৯৭৫ সালে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন হয়নি। হয়েছিল ১৯৭২ সালে, রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত বসু, কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে।

এ ছাড়া অশোকবাবু সম্পর্কে প্রকাশিত অন্য লেখাগুলিতেও ‘সঞ্চয়িতা’র কথা উল্লেখ করেননি কেউ। সর্বনাশা ‘সঞ্চয়িতা’ খুব জনপ্রিয় একটি চিটফান্ড ছিল। সেখানে এককালীন মোটা টাকা গচ্ছিত রেখে হাজার হাজার মানুষ প্রতি মাসে লোভনীয় সুদ পেতেন। অশোক মিত্র অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরেই ‘সঞ্চয়িতা’ তাঁর নজরে পড়ে যায়। ‘সঞ্চয়িতা’ বন্ধ হওয়ার পর বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শ্রীচন্দ্রচূড়ের বিশেষ উদ্যোগে গঠিত কমিশন কিছু মানুষের জন্য অল্প অল্প করে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৮২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে অশোক মিত্র হেরে গিয়েছিলেন রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের হৈমী বসুর কাছে, অপ্রত্যাশিত ভাবেই। সে সময়ে রব উঠেছিল, অশোক মিত্রের পরাজয়ের কারণ নাকি ‘সঞ্চয়িতা’।

বাবলু নন্দী কলকাতা-৭৯

পদত্যাগ

অশোক মিত্র রাজ্যের দ্বিতীয় বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে ঠিক কী কারণে পদত্যাগ করেছিলেন, সেই বিষয়ে সম্প্রতি দু’জন পাঠকের চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকা সত্ত্বেও কেন এমন সব সম্ভাবনার চর্চা হচ্ছে, বোঝা মুশকিল।

প্রাক-বামফ্রন্ট জমানায় রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা যে শিকেয় উঠেছিল, অনেকেই স্মরণ করতে পারবেন। বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে বেশির ভাগ বেসরকারি কলেজের পুরনো পরিচালন কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করে। তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সেই ভাবে মাথা ঘামানো হয়নি, কিন্তু সমস্যা হল, কালক্রমে সেই প্রশাসকদের অনেকে অধ্যক্ষের পদে বসেন। এই সময়েই সরকারের পক্ষে বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের সঙ্গে সরকারি কলেজের অধ্যাপকদের বেতন বৈষম্যের বিষয়ে একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বামফ্রন্টের নেতৃত্ব চাইছিলেন, সরকারি কলেজের সঙ্গে বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বেতনের সমতা।

অশোক মিত্রের সঙ্গে তাঁদের মতের মূল পার্থক্যটা ছিল এইখানে। শ্রীমিত্রের মত ছিল, সরকারি কলেজে যে সব গুণী ও জ্ঞানী অধ্যাপক ছিলেন, তাঁরা প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে অধ্যক্ষের পদ নিতেন না কিন্তু তাঁদের মেধা ও গুণগত উৎকর্ষ সমালোচনার ঊর্ধ্বে, তাই তাঁদের বেতনের যাতে কোনও বৈষম্য না হয়, সেটা দেখা সরকারের অগ্রাধিকার। তিনি মনে করতেন, ‘‘...বরিষ্ঠ অধ্যাপকদের মাইনে ভাতা বিষয়ে প্রথমে সিদ্ধান্ত নেব, তারপর ওই অধ্যক্ষদের ব্যাপারটি দেখবো; যেখানে তারকনাথ সেন গোপীনাথ ভট্টাচার্য সুবোধচন্দ্র সেন গুপ্ত সুশোভন সরকার ভবতোষ দত্তের মতো অধ্যাপকরা বেতনের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষদের সমপর্যায়ভুক্ত হননি, সেখানে শিক্ষা, মেধা ও বিদ্যার নিরিখে বহুগুণ নিকৃষ্টদের প্রতি দায়বদ্ধতা পূর্বাহ্ণে পূরণ করতে হবে এমন প্রস্তাবের শরিক হতে অসম্মত থাকব, তা যত চাপই আসুক না কেন।’’ (আপিলা চাপিলা, ৩৩ অধ্যায়)। এই প্রসঙ্গে তাঁর সুনির্দিষ্ট অবস্থান ছিল, ‘‘অপেক্ষাকৃত অযোগ্য মানুষদের অধ্যক্ষ করে দেওয়া হয়েছে, তাতে আমার হাত ছিল না, কিন্তু আমার বিবেচনায় উন্নততর বেতনক্রম পেতে তাঁদের সামান্য অপেক্ষা করতে হবে।’’ (আপিলা চাপিলা, ৩৩ অধ্যায়)।

এই বিরোধই ক্রমে বাড়তে থাকে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবু ও তাঁর মধ্যে। কিন্তু বামফ্রন্ট বরাবরই দক্ষতার থেকে আনুগত্যকে বেশি স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষপাতী (উত্তরকালের পান্থজনেরাও সেই ডকট্রিন-এর অনুবর্তী), ফলে রাজনৈতিক চাপের মুখে শ্রীমিত্রের অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে পড়াই ছিল স্বাভাবিক। তাঁর মতকে অগ্রাহ্য করে ‘পেটোয়া’ ও ‘কম যোগ্যতার’ অধ্যক্ষদের সঙ্গে একাকার করে দেওয়া হয় যোগ্য গুণী অধ্যাপকদের বেতনক্রম এবং নিজের মেরুদণ্ডকে খাড়া রেখে অশোক মিত্র পদত্যাগ করেন। সমস্যাটার কলঙ্কটা যে ঠিক কোথায় তা-ও তিনি লিখে গিয়েছেন আত্মজীবনী আপিলা চাপিলা-তে— “আমরা তো বামপন্থী, দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার দৃষ্টান্ত দেখাব সারা দেশকে, সেরকমই তো আমাদের অঙ্গীকার। দক্ষতার বদলে বশ্যতাকে বাড়তি প্রসাদ বিতরণ করলে সেই দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়।” (পৃ. ২৯১)

প্রবুদ্ধ বাগচী কলকাতা-৫২

সাম্য এলে

অশোক মিত্র যখন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী, আমি কলকাতার একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং প. ব. প্রধান শিক্ষক সমিতির এক নেতা। শিক্ষক সমিতিগুলোর আন্দোলনের ফলে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা ডিএ পেতে আরম্ভ করেছেন। বিদ্যালয়ের পিয়ন থেকে আরম্ভ করে প্রধান শিক্ষক পর্যন্ত সকলেই একই ডিএ পেতেন। শিক্ষক সমিতিগুলো এতে খুবই খুশি ছিল। কারণ, সকলে সম-হারে ডিএ পাওয়াটা এক ধরনের ঐক্যের পরাকাষ্ঠা বলে ভাবা হত। বিদ্যালয়ের পিয়নের যদি দু’টাকা ডিএ বৃদ্ধি হয়, তবে প্রধান শিক্ষক মহাশয়েরও ডিএ বৃদ্ধি হবে দু’টাকা। অশোক মিত্র সে নিয়মে জল ঢাললেন। তিনি চালু করলেন, প্রত্যেকে তাঁর বেসিক মাইনের উপর ডিএ পাবেন। ফলে এক জন পিয়নের প্রাপ্য ডিএ থেকে প্রধান শিক্ষকের ডিএ অনেক বেড়ে গেল। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক সমিতি অসন্তুষ্ট। ডিএ-র বিভেদে শিক্ষক ঐক্য বুঝি ভেঙে যায়। যাঁরা অশোক মিত্রের কাছে ডিএ-র বিভেদ রদ করার দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের কপালে জুটল ধমক। অশোক মিত্র তাঁদের বিদ্রুপ করে বললেন, ‘‘সমাজে সাম্য না থাকলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ডিএ-তে সাম্য থাকতে পারে না। আপনারা ফিরে যান। সমাজে সাম্য এনে আমার কাছে আসবেন।’’

সূর্যাংশু ভট্টাচার্য কলকাতা-২৯

ভ্রম সংশোধন

• ‘আদালত ও ভারতীয় গণতন্ত্র’ শীর্ষক উত্তর-সম্পাদকীয় নিবন্ধে (৩১-৫, পৃ. ৪) ‘ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্টস কমিশন’ নামটি ভুল প্রকাশিত হয়েছে।

• ‘সম্পাদক সমীপেষু’ বিভাগে ‘দুর্ব্যবহার’ (২১-৫) শিরোনামে প্রকাশিত চিঠির লেখক তরুণ কুমার অধিকারীর প্রকৃত ঠিকানাটি হবে: তারকেশ্বর, পদ্মপুকুর, হুগলি।

অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন