Varvara Roa

সম্পাদক সমীপেষু: মুক্ত কণ্ঠকে এত ভয়!

আজ পর্যন্ত রাষ্ট্র তাঁর কণ্ঠে শৃঙ্খল পরাতে পারেনি। অশীতিপর কবি আক্রান্ত কোভিড-১৯’এ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ০০:৫৪
Share:

তেলুগু ভাষার অন্যতম কবি ভারাভারা রাও। বার্ধক্যের ঠিকানায় পৌঁছেও রাষ্ট্রের শাসন থেকে তাঁর মুক্তি নেই। ১৯৭৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার তাঁকে ‘মিসা’য় আটক করে, দেড় মাস পরে মুক্তি। তাঁর লেখা আন্দোলনে ইন্ধন জোগায়— এই কারণে আবার কারাবাস। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থাকালে আবার বন্দি হন তিনি। জরুরি অবস্থা উঠে গিয়ে সবাই মুক্তি পেলেও তিনি ফের বন্দি হন। ১৯৭৭ সালে জনতা সরকারের আমলে মুক্তি লাভ। কিন্তু বার বার কারাবাস করে কারাগারই যেন তাঁর বাড়ি উঠেছিল। যে জমানাই আসুক, বন্দিত্বই কি তাঁর নিয়তি? অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ১৫টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ লিখে তিনি ভারতীয় সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। স্বাধীন তেলঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে ছিলেন সামনের সারিতে। নিম্নবর্গের দলিত, নিপীড়িত, আদিবাসী সম্প্রদায়ের হয়ে তিনি কণ্ঠ তুলেছেন। তাই শেষ বয়সেও আশ্রয় কারাগার। কিন্তু আজ পর্যন্ত রাষ্ট্র তাঁর কণ্ঠে শৃঙ্খল পরাতে পারেনি। অশীতিপর কবি আক্রান্ত কোভিড-১৯’এ। হাসপাতালে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছেন, জ্বরের ঘোরে ভুল বকছেন। রাষ্ট্রের তবু তাঁকে এত ভয়! রাষ্ট্র হিংসাকে ভয় পায় না, অস্ত্রকে ভয় পায় না, প্রতিবাদকেও দমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু যে কবির হাতে গণকণ্ঠের কলম ধরা, তাঁকে রাষ্ট্র তো ভয় পাবেই। তিনি আট থেকে আশি যে বয়সেরই হোন না কেন।

Advertisement

জয়শ্রী কুণ্ডু পাল

কলকাতা-৭৫

Advertisement

সেই উপন্যাস

‘‘সংসার থেকে পালাতে গিয়ে অবধূত যেন বিশ্বসংসারের বাসিন্দা হয়ে গেলেন’’ নিবন্ধে সন্ন্যাসী-লেখক শ্রদ্ধেয় কালিকানন্দ অবধূতের জীবনের অনেক অজানা কথা প্রকাশ পেয়েছে (পত্রিকা, ১৮-৭)। বর্তমান প্রজন্মের কাছে সাহিত্যিক অবধূত বলা যেতে পারে কিছুটা অপরিচিত। তিনি সাধারণের কাছে পরিচিত তাঁর মরুতীর্থ হিংলাজ-এর কাহিনি নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের জন্য। কিন্তু চলচ্চিত্রায়িত এই উপন্যাসটি রচনার আগে লেখা এক অসাধারণ সাহিত্যসৃষ্টি উদ্ধারণপুরের ঘাট কিছুটা আড়ালেই থেকে গিয়েছে।

বর্ধমান জেলার কাটোয়ার কিছুটা উত্তরে শ্রীচৈতন্যদেবের পার্ষদ শ্রী উদ্ধারণ দত্ত ঠাকুরের স্মৃতি-বিজড়িত স্থান উদ্ধারণপুর। সেই উদ্ধারণপুরের গঙ্গার ধারের শ্মশানঘাটে অবধূত কাটিয়ে এসেছেন তাঁর জীবনের বেশ অনেকটা সময়। সেই শ্মশানের চিত্রই হল এই উপন্যাসের উদ্ধারণপুরের ঘাট। শবদাহ, দাহক্ষেত্রের রাত্রিকালীন ভয়ঙ্কর পরিবেশ, সেখানকার মানুষজন, তাঁদের বিচিত্র জীবনকে মানুষটি দেখেছেন দিনের পর দিন ধরে খুব কাছ থেকে। দেখেছেন নিতাই বোষ্টমী, চরণদাস বাবাজীকে। দেখেছেন পঙ্কেশ্বর, রামহরির বৌ, বিষ্ণুটিকুরির জয়দেব ঘোষালকে। বিচিত্র মানুষ, বিচিত্র তাঁদের মানসিকতা। এই সব নিয়ে শ্মশানের রুক্ষ, কঠিন, ভয়াল পরিবেশকে বর্ণনার নৈপুণ্যে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন লেখক। গ্রন্থটি উপন্যাসের তকমা পেলেও, এটি আসলে একটি কাব্য। প্রতি অধ্যায়ের শুরুতেই সেই কাব্যিক সূচনা।

এই বই নিয়ে সজনীকান্ত দাস বলেছিলেন ‘‘বাংলা কথাসাহিত্যে অবধূতের আবির্ভাব এক বিস্ময়। নির্লিপ্ত বর্ণনাভঙ্গিতে এবং বিষয়ের নতুনত্বে তিনি গতানুগতিকতার পল্বল-সলিলে আলোড়ন তুলিয়াছেন। ...উদ্ধারণপুরের ঘাট-এ… যে আলেখ্য তিনি আঁকিয়াছেন তাহা বাংলাসাহিত্যে সর্বৈব নূতন।’’ আর অতুলচন্দ্র গুপ্তের কথায় ‘‘আপনার উদ্ধারণপুরের ঘাট পড়ে চমৎকৃত হয়েছি। …কেবল বিষয়বস্তু অসাধারণ ব’লে নয়, তাকে যে সাহিত্যিক রূপ দিয়েছেন, তা অনন্যসাধারণ। সেই রূপের বৈচিত্রে বাংলাসাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে।’’ এই একটা উপন্যাসের জন্যই সাধকলেখক অবধূত বাংলাসাহিত্যে চিরস্মরণীয়

হয়ে থাকবেন।

অমলকুমার মজুমদার

শিবপুর, হাওড়া

ঘড়ি কাহিনি

শৈবাল চট্টোপাধ্যায়ের ‘বাবার ঘড়ি’ ( রবিবাসরীয়, ২৬-৭) ছোটগল্পটি পড়ে শৈশবে বাবার যত্নে রাখা বাড়ির অ্যানসুনিয়া ঘড়িটির কথা মনে পড়ল। বেশ বড়, পালিশ করা কাঠের ফ্রেম দু’টি ভাগে বিভক্ত। উপরে গোলাকৃতি কাচের মধ্যে সময়ের নির্দেশিকা আর নীচেরটিতে ছিল বড় চকচকে পেন্ডুলাম। ঘণ্টার আওয়াজ সুমধুর। বাবা ছাড়া অন্য কেউ ঘড়িটিতে হাত দিত না।

একটিই ঘড়ি বাড়িতে ছিল। যার যখন সময় দেখার প্রয়োজন হত, বারান্দায় এসে দেখে যেত। নির্দিষ্ট তারিখে দম দেওয়া, মোছা, দেখভাল করা— এ সব ছিল বাবার দায়িত্ব। খারাপ হতে বারকয়েক দেখেছি। মেকানিক তখন বাড়িতে বসেই তা ঠিক করত। প্রতি দিন বাড়ির সবাই নির্দিষ্ট কাজে যাওয়ার আগে বারান্দায় আসত সময় দেখতে, আর মুখে মুখে তা জেনে যেত অন্যরাও।

চিরকাল কোনও জিনিস এক ভাবে চলে না। সব কিছুরই মেয়াদ শেষ হয় এক দিন। হারুদা, মেকানিক, নিদান দিলেন— ‘‘আপনাদের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী অ্যানসুনিয়ার আয়ু শেষ। সারাবার চেষ্টা করলেও কিছু লাভ হবে না।’’ অগত্যা ওর জায়গায় স্থান পেল সাইন্টিফিকো। আর অ্যানসুনিয়ার স্থান হল একটি পরিত্যক্ত জায়গায়।

উৎপল মুখোপাধ্যায়

চন্দননগর, হুগলি

ইমোজি

হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বা টেলিগ্ৰামের মতো ‘চ্যাট’-এর মাধ্যমের একটা গুরুত্বপূর্ণ ফিচার ‘ইমোটিকন’ বা ‘ইমোজি’। আজকাল টাইপ করে কিছু লেখার পরিবর্তে নানা রকম ইমোজি ব্যবহার করারই চল বেশি।

এর কারণ কী? আমাদের আবেগ, অনুভূতির স্বাভাবিক প্রকাশ কি আর ভাষার মাধ্যমে ঘটাতে পারছি না? না কি আলস্যবশত অনেক কিছু লেখার পরিবর্তে আমরা স্রেফ একটা বা দুটো মোক্ষম ইমোজি ব্যবহার করেই বক্তব্য বোঝাতে চাইছি? মুখোমুখি কথা বললে শরীরী ভাষা বা বডি ল্যাঙ্গোয়েজের সাহায্যে অনেক কিছু বোঝানো যায়। ফোনে কথা বলার সময়েও কথার স্বর শুনে আমরা বক্তার মনোভাব যথাযথ বুঝে নিতে পারি। কিন্তু চ্যাট করার সময় অনেক কথার সুর ঠিক ধরা যায় না। সেই জন্যই কি মনের ভাব স্পষ্ট করে বোঝাতে ইমোজি-নির্ভরতা বাড়ছে?

‘পিকে’ সিনেমায় আমির খান অভিনীত পিকে চরিত্রটি ভোজপুরী ভাষা নতুন শিখে একটা অদ্ভুত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। পিকে বুঝেছিল, বাচনভঙ্গির তারতম্যের উপর নির্ভর করে একটা শব্দেরই একাধিক অর্থ হতে পারে। সে দেখিয়েছিল ‘আচ্ছা’ শব্দটাকেই স্বরক্ষেপণের সাহায্যে নানা ভাবে উচ্চারণ করে রাগ, বিরক্তি, সমর্থন, প্রশ্ন, অস্বীকার, ভয়, বিস্ময় এবং আরও একাধিক মনের ভাব আমরা বোঝাতে পারি। সেটা লিখে কোনও মতেই সম্ভব নয়। ‘আচ্ছা’ শব্দটিকে যতিচিহ্নের সাহায্যে (এ ক্ষেত্রে দাঁড়ি, বিস্ময়বোধক চিহ্ন আর প্রশ্নবোধক চিহ্ন) বড়জোর তিন ভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে। অথচ তার বাইরে অনেক ভাবই অপ্রকাশ্য থাকে। ফলে আমাদের ইমোজির দ্বারস্থ হতেই হয়। সেখানে যত রকমের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ সম্ভব, সব রকম চিহ্নই সাজানো থাকে।

দার্শনিক প্লেটোর সময় থেকেই উচ্চারিত কথাকে লিখিত কথার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হত। উচ্চারিত শব্দকেই তখন প্রধান ধরা হত এবং লিখিত শব্দ তার প্রতিধ্বনি হিসেবে গণ্য হত। জাক দেরিদা তা অস্বীকার করে জানান, লেখা একটি পৃথক প্রণালী, তা মুখের ভাষার হুবহু প্রতিলিপি না। ভাষাতাত্ত্বিক ফার্দিনান্দ দ্য সোসুরের মতে, শব্দের সঙ্গে তার অর্থের নির্দিষ্ট কোনও সম্পর্ক নেই— তা মানুষের চাপানো। এ সবের গভীরে না ঢুকেও প্রায়ই দেখা যায়, আমরা চ্যাট করার সময় এমন অনেক কথা লিখি, যার অর্থ পাঠক সম্পূর্ণ আলাদা বোঝে। যথাযথ ইমোজি ব্যবহার করে সেই সমস্যাও অনেকাংশে কমিয়ে আনা যেতে পারে। আবার উল্টোটাও হয়। কেউ ব্যঙ্গ করে কিছু বলতে চাইলে, লিখিত শব্দের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা মনোভাবের ইমোজি ব্যবহার করে।

নীলাদ্রি নিয়োগী

কলকাতা–৪৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন