কত দিনই তো কত মৃত্যুর ছবি ও খবর আনন্দবাজারে প্রথম পাতায় ঠাঁই পায়। মনকে ব্যথিতও করে। কিন্তু গত ১৪ এপ্রিল একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মৃতদেহের ছবি মনকে চূড়ান্ত ভারাক্রান্ত করে দিয়ে গেল। লালগড়ের সেই মহারাজ আজ মৃত। তার এই অকাল এবং অনভিপ্রেত মৃত্যুর জন্য কাকে দায়ী করব? অপদার্থ বনকর্মীদের, না কি এই নারকীয় খুনে উল্লসিত আদিবাসীদের?
প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করে দিয়েছে যে, বনকর্মীদের সঙ্গে আদিবাসীদের সঠিক সময়ে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। শিকার উৎসবের পুরো সময়টাতে বনকর্মীদের উচিত ছিল আদিবাসীদের সঙ্গে সঙ্গে থাকা। এটা পরিষ্কার ছিল, আদিবাসীরা সব সময়ই বাঘটিকে মারার সুযোগ খুঁজছিল। এত বছরের পর এত বড় সাফল্যের ভাগী হওয়া কি চাট্টিখানি কথা! বনবিভাগের উচ্চতর আধিকারিকরা কেন এটা বুঝতে ব্যর্থ হলেন, এর জবাবদিহি করতে হবে বইকি। বনবিভাগের নিশ্চয় জানা আছে, এই বিপন্ন প্রাণীটির সংখ্যা সারা দেশে মাত্র দু’হাজার। আর বাঘটি শুধুমাত্র আশ্রয় খুঁজছিল। মানুষখেকোও হয়ে যায়নি। প্রাণভয়ে কয়েক জনকে আক্রমণ করেছিল। তার এই নারকীয় ভাবে খুন হয়ে যাওয়া কিছুতেই যেন মেনে নিতে পারছি না।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭
ভুল হচ্ছে
2 আমি এক জন নিষ্ঠাবান ভারতীয় নাগরিক এবং পশুপ্রেমিক হিসাবে বাঘটিকে হত্যার বিচার-বিভাগীয় তদন্ত আশা করি। এক জন পশুপ্রেমী এবং অপেশাদার আলোকচিত্রী হওয়ার দরুন দেশের বিভিন্ন বনে জঙ্গলে গত ২৫ বৎসর যাবৎ বিশেষ ভাবে বাঘের ছবি তোলার অভিজ্ঞতার সঙ্গে তার স্বভাব চরিত্র এবং ক্ষমতা বিষয়ে একটা ভাল রকম ধারণা আমার আছে।
খবর অনুযায়ী, বাঘটির কানের পিছনে ঘাড়ে একটি মাত্র বল্লমের মারণ-আঘাতে মৃত্যু হয়েছে। এবং বল্লমটি নাকি ছুড়ে মারা হয়েছে। একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘের ওজন ১৫০–২০০ কেজি এবং সে শিকারের পর একটি বড় মোষকে অনায়াসে মুখে ঝুলিয়ে মাইলের পর মাইল যেতে পারে। তার ঘাড়ের পেশির ক্ষমতা অপরিসীম এবং গঠন অনবদ্য। এই রকম একটি প্রাণীকে দূর থেকে নিখুঁত নিশানায় বল্লম ছুড়ে ঘাড়ের পেশি ভেদ করে তার মৃত্যু ঘটানোর জন্য ভীমসেনের প্রয়োজন।
আরও বলি, বাঘ যে কোনও জঙ্গলে যে কোনও অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নেয়। সে জন্ম-যোদ্ধা ঠিক শিক্ষিত কমান্ডোদের মতো, অ্যামবুশ করা তার রক্তে। এমন একটি বীর প্রাণী বিনাযুদ্ধে প্রাণ দিল এটা বিশ্বাস করা যায় না। উপরন্তু আমি এও দাবি করি, যাঁরা বাঘের আঁচড়ে আহত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষত বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরীক্ষা করানো উচিত, কারণ একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘের আঁচড়ে ক্ষত আরও বেশি আশা করা হয়। তা ছাড়া বাঘ আঁচড় মারলে থাবার মার লাগবেই এবং একটি বড় বাঘের থাবার আঘাতে যেখানে বড় মোষের মাথার খুলি ভেঙে যায়, সেখানে সব আহতই তুলনায় মামুলি আঘাতই শুধু পেয়েছেন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস কোনও অন্য উদ্দেশ্য সাধনের অভিপ্রায়ে বাঘটিকে একটি বিশেষ অবস্থায় খুব কাছ থেকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে এবং এটা কোনও প্রচলিত শিকার উৎসবের ফল নয়।
সমুদ্র মিত্র, শান্তিনিকেতন, বোলপুর
আগুনপ্রেমী
পৃথিবীর সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দল-সহ সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ইস্যুতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ আন্দোলন, বিক্ষোভে অংশ নেয়। কখনও কালো ব্যাজ, প্রতিবাদের ভাষা সংবলিত প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন, প্রতিবাদী স্লোগান— গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এই সভ্য পন্থাই তারা অনুসরণ করে। এ দেশে, বিশেষত এই পশ্চিমবঙ্গে, এই ধরনের সভ্য ভদ্র গণতান্ত্রিক আন্দোলন ঠিক হালে পানি পায় না। কলকারখানাতেই এমন দৃষ্টান্ত আছে, কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে দু’এক জন মিলে কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে কর্তৃপক্ষ সেই সমস্যার সমাধান করা তো দূরের কথা, কোনও গুরুত্বই দেন না। একই দাবি যখন দলবল-সহ হুজ্জুতি করে পেশ করা হয়, বা কোনও কর্তাব্যক্তির টেবিল উল্টে ফেলে দিয়ে বা ঘুষি মেরে কাচ ভেঙে ফেলা হয়, সুড়সুড় করে কাজ হয়।
এই যেমন সম্প্রতি এই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে তুলকালাম চলেছে, গা-জোয়ারি ভীতি প্রদর্শন ও শারীরিক নিগ্ৰহ করে বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেওয়া হয়নি। বিরোধী দলের নেতারা বিচ্ছিন্ন ভাবে গিয়ে নির্বাচন কমিশনারের কাছে গুটিগুটি পায়ে বিনীত ও ভদ্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এ হল নিষ্ফলা প্রতিবাদ।
মনে করুন, এই সময়ে রাজ্যের বর্তমান শাসক দল বিধানসভায় নামমাত্র আসন নিয়ে বিরোধী হিসাবে স্বীকৃত। আর বর্তমান বিরোধীরা কেউ রাজ্যের শাসনক্ষমতায়। বিরোধী দলের প্রার্থীদের পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে সাম্প্রতিক চিত্রেরই পুনর্নির্মাণ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সেই বিরোধী দলের ‘কমান্ডার’ কী ভূমিকা নিতেন? সম্ভবত তাঁর ও তাঁর সেনাবাহিনীর ‘গণতান্ত্রিক’ প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশনারের অফিসঘরটিই আস্ত থাকত না। চেয়ার-টেবিলের কথা আর না বলাই ভাল। (সৌজন্যে ২০০৮ বিধানসভার ভিতরে প্রতিবাদ চিত্র)। নির্দিষ্ট এলাকার থানা, এসডিও অফিস ঘেরাও হয়ে যেত। মহিলাপ্রার্থীদের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ হত।
কিছু উদ্দেশ্য হয়তো সাধিতও হত। প্রতিবাদের এমন চিত্র গণতান্ত্রিক সুস্থতা ও সভ্যতার পরিপন্থী। রাজ্যের বর্তমান বিরোধী দল প্রতিবাদের এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক তা কখনওই কাম্য নয়। কিন্তু মুশকিল হল, এই রাজ্যের মানুষ প্রতিবাদের এমন ভাষা ও ভঙ্গি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়, আন্দোলিত হয়। শাসক হিসাবে তাকেই পছন্দ করে।
প্রণব রাহা, দুর্গাপুর-৪
তখন দলবাজি
‘ভোট আছে, হিংসাও, নেই সেই পঞ্চায়েত’ প্রসঙ্গে তপোময় ঘোষের চিঠিতে (‘সেই সব পঞ্চায়েত’, ১৪-৪) জ্যোতিবাবুর ঘোষণা বিষয়ে বলি। সেই জমানায় পঞ্চায়েতি রাজ শুরু হয়েছিল। দলবাজির চূড়ান্ত ছিল। দলের লোক না হলে কিছু পাওয়া যাবে না। এখন যদিও বিডিও তদারকিতে কাজ হয়, তবুও কোনও পাড়ার ভিতরে চটে যাওয়া বা গর্ত হয়ে যাওয়া রাস্তা, পানীয় জলের সমস্যা, এ সব বিষয়েই পঞ্চায়েত সদস্যদের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা হচ্ছে। সরকারি তত্ত্বাবধানে কাজে টাকার লুটপাটও অনেক কমছে। দ্বিতীয়ত, অডিট রিপোর্ট চালু হওয়ায় কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে টাকা লুটপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ সব বামফ্রন্ট আমলে ছিল না। আর গ্রামে স্কুল হোক বা সমবায় হোক, সব ভোটেই এক কালচার। ক্ষমতা দখল। হ্যাঁ, ১৯৬৫-৭০ সালে দেখেছি, গ্রামের সম্মাননীয় লোকেরা সালিশির মাধ্যমে গ্রামের সমস্যা বসে মিটিয়ে দিতেন। পরে দলবাজির চূড়ান্ত ফলস্বরূপ পঞ্চায়েতকে বিচারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর আজকের নির্বাচনের পরিণতি সিপিএমের বুনে যাওয়া ফসল। চাষিকে তারই চাষ করা ফসল তো খেতে হবেই। যতই তেতো হোক।
আশিস্ ভট্টাচার্য, আটঘরা, বারুইপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
ভ্রম সংশোধন
উত্তরবঙ্গের কিছু সংস্করণে কলকাতা থেকে বাগডোগরা যাওয়ার নতুন বিমান সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম হয়েছে ‘রাত সাড়ে দশটায় কলকাতার বিমান’ (১৮-৪, পৃ ১)। হবে সকাল সাড়ে দশটার বিমান। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।