জঙ্গলমহলের জনজাতি সংগঠনের রেল অবরোধে (‘অবরোধে বিধ্বস্ত রেলযাত্রা’, ২৫-৯) হাজার হাজার মানুষ দুর্দশায় পড়লেন, অশেষ যন্ত্রণার শিকার হলেন। অবরোধে অসংখ্য ট্রেন বাতিল হয়, ৪০টি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায়। শিক্ষা সংক্রান্ত এক দাবিকে কেন্দ্র করে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি। ট্রেনগুলিতে কেউ রোগী, কেউ পরীক্ষার্থী, কেউ কোনও জরুরি কাজে চলেছেন, আছেন অনেক বয়স্ক মানুষ। দুর্দশা সকলের।
এখন কথা হল, দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ, আন্দোলন, অবরোধ হতেই পারে, বিশেষ করে ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। কিন্তু যাঁরা অবরোধ করলেন তাঁরা সাধারণ মানুষের কথা একটু ভাববেন না! তাদের কী দোষ?
অবরোধকারীদের মধ্যে অনেক মুক্তচিন্তার মানুষও আছেন। তাঁরা যদি তাঁদের সহকর্মীদের বোঝান, আন্দোলনটাকে একটু অন্য ভাবে পরিচালিত করতে, যেখানে সাধারণ মানুষের এতটা দুর্ভোগ হবে না, আবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিও আকর্ষণ করা যাবে, তা হলে হয়তো একটা পথ বেরিয়ে এলেও আসতে পারে। শুধুমাত্র এই সংগঠন নয়, অন্যান্য আন্দোলনকারী দলও বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে।
রাণাজী বসু
নিউ ব্যারাকপুর
বিভ্রান্তি
প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় সম্পর্কিত অমিত মণ্ডলের চিঠি ‘তাঁর দৃষ্টিশক্তি’ (২৩-৯) প্রসঙ্গে এই চিঠির অবতারণা। বিনোদবিহারীর চক্ষুচিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের এক দুর্লভ মানিক গ্রন্থ থেকে যে ঘটনাটির উল্লেখ করেছেন, সেখানে বিনোদবিহারীর চক্ষুচিকিৎসক হিসাবে ‘দিল্লির বিখ্যাত আই স্পেশালিস্ট’ ডা. বলাই মিত্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রথিতযশা চক্ষুচিকিৎসক ডা. বলাই মিত্র কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ভিজ়িটিং প্রফেসর ছিলেন, তিনি কোনও দিনই দিল্লিতে চিকিৎসা করেননি, দিল্লিতেও ওই নামধারী কোনও চক্ষু চিকিৎসকের কথা আমাদের জানা নেই। বিনোদবিহারীও তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ চিত্রকর: দি আর্টিস্ট-এ কোথাও ডা. বলাই মিত্রের নামও উল্লেখ করেননি, ‘‘অ্যান এমিনেন্ট ডক্টর অব দিল্লি’’— এই ভাবেই তিনি যে চিকিৎসকের কাছে অপারেশন করিয়েছিলেন, তাঁর পরিচয় দিয়েছেন। সুতরাং, স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া এই প্রসঙ্গে প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসক ডা. বলাই মিত্রের নামোল্লেখ এবং অমিত্রসূদনের গ্রন্থে সেই সংক্রান্ত পরিবেশিত তথ্যকে পরিবেশন করা বিভ্রান্তিকর।
অভিজিৎ ঘোষ
কলকাতা-৫৪
সেল্ফ হেল্প গ্রুপ
এখন প্রতিটি গ্রামেই সেল্ফ হেল্প গ্রুপ রয়েছে। তাঁরা যথেষ্ট দক্ষ। মিড ডে মিল চালানোর ভার যদি তাঁদের হাতে দেওয়া হত, তা হলে শিক্ষকরা যেমন শিক্ষাবহির্ভূত কাজ থেকে কিছুটা রেহাই পেতেন, তেমনি তাঁদের হাতেও দু’পয়সা আসত। ওঁদের এক একটা গ্রুপকে রান্নার জন্য যা টাকা দেওয়া হয়, তাতে এক এক জনের ভাগে মাত্র মাসে দু’টি কী তিনটি কর্মদিবসের মজুরি জোটে। অথচ মিড ডে মিল ছাড়াও যদি একশো দিনের কর্মসূচিতে ওঁদেরকে স্কুল প্রাঙ্গণে গাছ লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণ, সব্জি চাষ, স্কুলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো বিভিন্ন কাজে জুড়ে দেওয়া যেত, যেমন স্কুলের সৌন্দর্যায়ন হত তেমনি ওঁদেরও রোজগারের উপায় বৃদ্ধি পেত। আমার কাছে সে দিন আরও একটি দশ জনের গ্রুপ এসে রান্না করতে চাইল। আমি ওঁদের বললাম, এখানে তিনটে গ্রুপ কাজ করছে, আপনারা বরং অন্য কিছু করুন। ওঁদের পরামর্শ দিলাম, টেলরিংয়ের কাজ শেখার জন্য। প্রতি বছর ছেলেমেয়েদের যে ড্রেসের টাকা আসে তা দিয়ে ওঁরা ড্রেস তৈরি করলে কিছুটা রোজগারের মুখ দেখবেন। কৃষি দফতর থেকে ওঁদের মাশরুম চাষের কথা বলা হয়েছে। ওঁদের ধারণা নেই, মাশরুম চাষ কী রকম লাভজনক। ওঁদের আমি উৎসাহিত করলাম। সেল্ফ হেল্প গ্রুপ মহিলাদের আর্থিক স্বাবলম্বিতার একটি যথার্থ উপায়, যদি এটিকে ‘ইন্টিগ্রেটেড’ ভাবে কাজে লাগানো যায়। কৃষি দফতর, পঞ্চায়েত, ব্লক, ব্যাঙ্ক, সকলে মিলে যদি ওঁদের পিছনে দাঁড়ায়, বাংলায় কর্মসংস্থানের নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন হবে ও মহিলাদের ক্ষমতা, আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পাবে।
কৌশিক সরকার
রঘুনাথপুর, পুরুলিয়া
ইউজিসি
‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ (২১-৯) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে এই প্রতিক্রিয়া। ইউজিসি কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ২৯ সেপ্টেম্বর সার্জিকাল স্ট্রাইক দিবস পালন করার নির্দেশ দেবে? সার্জিকাল স্ট্রাইক আদৌ হয়েছিল কি না, সে প্রশ্ন এখানে অবান্তর। যদি হয়েও থাকে তার সঙ্গে ইউজিসি-র সম্পর্ক কোথায়? এমন নির্দেশিকা জারি করা কি ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাটির অধিকার বা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে? ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কেন? সকলের জানা আছে, ১৯৫৬ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের হাত ধরে একটি স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে ওই সংস্থাটির জন্ম হয়েছিল কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অনুমোদন ও তাদের সরকারি আর্থিক অনুদান দেওয়ার উদ্দেশ্যে। স্বঘোষিত বয়ান অনুযায়ী ইউজিসির উদ্দেশ্য হল— ‘সকলের জন্য উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করা’। এর সঙ্গে কেন্দ্রের শাসক দলটির নির্বাচনী অ্যাজেন্ডা প্রচার করা বা তাকে কার্যকর করার সম্পর্ক কোথায়?
ইউজিসি উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করতে পারে ও তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু যত দিন গিয়েছে ইউজিসি একটি স্বশাসিত সংস্থার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন দফতর তথা শাসক দলের নীতি কার্যকর করার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। যে দলই কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় বসে, সেই দল ইউজিসির মাধ্যমে নিজের শিক্ষা সংক্রান্ত ধারণাগুলিকে কার্যকর করতে চায় কেবল নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা এই কাজ করেছে, এখন সেটা বিজেপি করছে। তাই ইউজিসি ৬২ বছর অতিক্রম করেও কখনও দেশের শিক্ষা মহলের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। বাস্তবে ইউজিসি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামনে স্বাধিকার প্রশ্নে সর্বাপেক্ষা বেশি বিপদ।
ক্ষমতাসীন এই দলগুলো কখনও মনে করে না যে শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অভ্যন্তরে কিছু বিধিসম্মত সংস্থা আছে— বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরাই যার সদস্য। তাই বিজেপি ইউজিসির মাধ্যমে নানা সময়ে পুরোহিততন্ত্র, বাস্তুতন্ত্র, ভারতীয়ত্ব পাঠ ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপিয়েছে, আধুনিক শিক্ষার পরিবর্তে সংস্কৃত শিক্ষা ও প্রাচীন ভারতীয় দর্শন পাঠের উপর জোর দিয়েছে। এ সবই ওই দলটির গৈরিকীকরণ নামক রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার অংশ। ইউজিসি ২০১৫ সালে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বাধ্যতামূলক ভাবে সিবিসিএস চালু করেছে এবং তা করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মত নেওয়ার কোনও প্রয়োজন বোধ করেনি। কিছু দিন আগে ইউজিসি ‘গ্রেডেড অটোনমি’ নামে একটি স্কিম ৬২টি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপিয়েছে। এই স্কিমটির নামের মধ্যে ‘অটোনমি’ বা স্বাধিকার কথাটি থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তার মাধ্যমে ইউজিসি স্বাধিকারের একটি নিকৃষ্ট ধারণার জন্ম দিয়েছে। ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ নামক ফতোয়ার ঠিক আগে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার নিয়ম-নীতি নিয়েও নাক গলাতে চেয়েছে, যা একান্তই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়। এমন অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায়, যা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ইউজিসি-র মাধ্যমে করে এসেছে।
তরুণকান্তি নস্কর
কলকাতা-৩২
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।