ক্রিকেটে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বৈরথ নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘মহারণের মহাকাব্য’ (১৯-৯) পড়ে কয়েকটি তথ্যভ্রান্তি চোখে পড়ল।
সুমিত ঘোষ ‘লড়কে লেঙ্গে’ প্রচ্ছদকাহিনিতে লিখেছেন, ‘‘২০ জানুয়ারি, ১৯৮০। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সিরিজ় জেতে ভারত।’’ এই প্রসঙ্গে জানাই, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত প্রথম টেস্ট সিরিজ় জেতে ১৯৫২-৫৩ মরসুমে, দেশের মাটিতে।
সেটি ছিল স্বাধীন পাকিস্তানের অভিষেক টেস্ট সিরিজ়। লালা অমরনাথের ভারত দিল্লি ও মুম্বইয়ে সিরিজ়ের যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় টেস্টে জয়লাভ করলেও লখনউয়ের দ্বিতীয় টেস্টে আব্দুল হাফিজ় কারদাবের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের কাছে হেরে যায়। চেন্নাই ও কলকাতার বাকি দু’টি টেস্ট ড্র হয়েছিল। ফলে পাঁচ টেস্টের সিরিজ় ভারত জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। বস্তুত সেটাই ছিল ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ় জয়।
দুই, দু’দলের অহিনকুল সম্পর্কের শেষ ঘটনাটিতে (‘পাথরের বদলা সৌরভের ব্যাট’) লেখা হয়েছে, ‘‘১৯৯৭-৯৮ মরসুমের ঘটনা। ভারতের অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।’’ প্রকৃতপক্ষে সেই সফরে ভারতের অধিনায়ক ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর।
তিন, কামার আহমেদ ‘মিয়াঁর শেষ বলের ছক্কা সেরা রূপকথা’ নিবন্ধে লিখেছেন, ‘‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চালকের আসনে থেকেছে ভারত।’’ তাই কি? এ পর্যন্ত দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ১৩১টি ম্যাচে ভারত যেখানে ৫৪টি ম্যাচ জিতেছে, পাকিস্তান জয়লাভ করেছে ৭৩টিতে। অবশ্য আইসিসি-র প্রতিযোগিতায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভারত জিতেছে।
সজলকান্তি ঘোষ
শ্রীনিকেতন, বারুইপুর
অন্য ক্লাস
সাম্প্রতিক কালে দাড়িভিট গ্রামে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনে ছাত্রমৃত্যু প্রসঙ্গে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যে বক্তব্য পেশ করলেন— যে কোনও শিক্ষক বিদ্যালয়ে যে কোনও বিষয় পড়াতে পারেন, সেই প্রসঙ্গে এই চিঠি। আমার দীর্ঘ ৩৪ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, বাস্তব চিত্রটা সম্পূর্ণ বিপরীত। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকের শূন্য পদ হেতু বা বিষয়-শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে (ব্যক্তিগত কারণে বা শিক্ষিকাদের সি সি এল-এর দরুন) প্রভিশনাল রুটিন হয়। তখন নিজস্ব বিষয় ছাড়া অন্য বিষয়ের ক্লাসে বাধ্য হয়ে যেতে হলেও অধিকাংশ শিক্ষকই তাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। উচ্চশ্রেণিতে তো বটেই, এমনকি পঞ্চম শ্রেণিতেও বিজ্ঞানের শিক্ষককে ইতিহাস ক্লাস নিতে হলে বা সাহিত্যের শিক্ষককে অঙ্ক ক্লাস নিতে হলে শিক্ষক তাঁর নিজের বিষয়জ্ঞান যথার্থ ভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পান না, ক্লাসের বরাদ্দ সময়টুকু কোনও রকমে কাটিয়ে দেওয়া গেলেও শিক্ষাদান প্রক্রিয়াটা কার্যত প্রহসনে পর্যবসিত হয়। অনেক বিদ্যালয়ের অনেক শ্রেণিতেই এটা এক-দু’দিনের ঘটনা নয়, বছরের অধিকাংশ সময়টাই এ ভাবে নষ্ট হয়। পরিণামে মূল ক্ষতিটা ছাত্রছাত্রীদেরই বহন করতে হয়, তারা প্রকৃত বিষয়জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু তাদের এই সমস্যার বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কর্ণগোচর হয় না, কারণ সেটা আন্দোলন পর্যন্ত গড়ায় না।
কৃষ্ণা পাত্র
বুড়োশিবতলা রোড, নদিয়া
নিষ্কর্মা ব্রিজ
প্রসঙ্গ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বারুইপুর রেল স্টেশনে ওভারব্রিজে চাঙড় খসে এক মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যু এবং মারাত্মক জখম আরও এক জন। মর্মান্তিক সংবাদটি পরিবেশনের সময় বলা হয়েছে, যাত্রীরা রেললাইনের ওপর দিয়ে পারাপার করছিলেন, সে সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। যেটা বলা হয়নি, সেটা হল, যাত্রীরা ইচ্ছে করে ঝুঁকি নিয়ে এই রেললাইন পারাপার করেন, তা নয়। রেল প্রশাসন তাঁদের বাধ্য করেন এ রকম পারাপারে।
বারুইপুর স্টেশনে চারটি প্লাটফর্ম আছে। চতুর্থ প্লাটফর্মটি হওয়ার আগে পর্যন্ত, লাইনের ওপর দিয়ে না পেরিয়ে, ব্রিজ দিয়ে গিয়েই প্রত্যেক প্লাটফর্মে সরাসরি নামা যেত। নামার সিঁড়ি ছিল। চতুর্থ প্লাটফর্ম হওয়ার পরে, হঠাৎই ব্রিজটি নতুন করে তৈরি করা হয়। অদ্ভুত ব্যাপার, ব্রিজ দিয়ে এক নম্বর প্লাটফর্মে উঠলে, দুই এবং তিন নম্বর প্লাটফর্মে নামার সিঁড়ি একদমই তুলে দেওয়া হয়। এখন এক নম্বরে ব্রিজে উঠলে সোজা গিয়ে চার নম্বর প্লাটফর্মেরও বাইরে নামতে হয়। যে সিঁড়িটা দুই আর তিন নম্বর প্লাটফর্মে নামার জন্যে থাকার কথা, সেটা প্লাটফর্মে না নেমে উল্টো দিক দিয়ে অনেক দূরে রেললাইনের ওপর কিছু লোকের প্রস্রাব করার জায়গায় নেমেছে। এর কারণ পরিকল্পনাকারীরা বলতে পারবেন। কিন্তু এর ফলে ব্রিজ শুধু মাত্র শো-পিস হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। এক নম্বর থেকে কিংবা চার নম্বর থেকে দুই আর তিন নম্বরে যেতে গেলে যে রকম, সে রকম দুই তিন থেকে এক কিংবা চারে যেতে গেলে সবাইকেই সরাসরি ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পেরিয়ে যেতেই হবে। বাধ্যতামূলক। বহু বছর হল এটাই চলছে।
এ দিকে রেল প্রচার করছে, পায়ে হেঁটে রেল লাইন পারাপার করবেন না। ওরাই বাধ্য করছে এখানে হেঁটে রেললাইন পেরোতে। আর যে হেতু রেলব্রিজটি কোনও কাজে লাগে না, হেলাফেলায় রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই ওটা পড়ে থাকে। দীর্ঘ বারুইপুর স্টেশন প্লাটফর্মে দূর দু’প্রান্তে দু’খানা মাত্র ওভারব্রিজ। মাঝখানে যারা নামেন, তাঁদের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ব্রিজে পৌঁছতে হয়। তার এক দিক ব্যস্ততম। সে দিকের ব্রিজ এ রকম চারটের মধ্যে তিনটে প্লাটফর্মের সঙ্গেই যোগাযোগহীন অদ্ভুত নিষ্কর্মা।
শিখর রায়
কলকাতা-১৪৪
সেই ট্র্যাডিশন
‘ইতিবাচক’ শীর্ষক সম্পাদকীয় (১-১০) পড়ে এই চিঠি। মধ্যপ্রদেশে লোকসভা স্পিকার সুমিত্রা মহাজন একই কথা বলেছেন। মাননীয়া স্পিকার শিক্ষা ও চাকুরিতে সংরক্ষণে দেশের উন্নতি কতটা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। রাজনীতিতে সংরক্ষণের মাধ্যমে লোকসভা এবং বিধানসভায় তফসিলি জাতি ও জনজাতিদের নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন না। কেন বলবেন? তাঁদের জন্য শিক্ষা এবং চাকরিতে সংরক্ষণ দেশের এক শ্রেণির দৈনন্দিন ফুটবল। সেখানে প্রার্থী নির্বাচন 'degree of elastic docility' নির্ভর। যাঁরা কাদা-মাটির তুল্য, তাঁদের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শিক্ষিত এসসি/এসটি অফিসারদের অতটা দোমড়ানো মোচড়ানো যায় না। তাই তাঁরা বেশি উপরে পৌঁছতে পারেন না। আজকেও ভারত সরকারে কোনও সেক্রেটারি নেই যিনি এসসি/এসটি।
১৯৮০ দশকের প্রারম্ভে আইসিএস অফিসার সুকুমার মল্লিককে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্য সচিব নিযুক্ত করার পরে রাইটার্সে এক শ্রেণির কর্মচারীর পেন ডাউন স্ট্রাইক, মুর্দাবাদ জিগির ওঠে। ফলত তাঁকে হটিয়ে সরকার সমস্যা সমাধান করেছিল। আইসিএস হলে কী হবে, সুকুমার মল্লিক জাতগোত্রে উচ্চকুলোদ্ভব ছিলেন না। নমঃশূদ্র বলে তিনি টিকতে পারেননি।
দুই বিখ্যাত (নাকি জাতপাতে মত্ত) সাংবাদিক কোমর বেঁধে সুকুমার মল্লিক বিরোধী আন্দোলনে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন।
অতুলকৃষ্ণ বিশ্বাস
ইমেল মারফতচিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘আবহমান’ (৮-১০) শীর্ষক ক্রোড়পত্রের কয়েকটি সংস্করণে ‘কাকামণি তখন আরতি’ প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছে ‘‘সলিল-সুরেই সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কোনও এক গাঁয়ের বঁধুর কথা’’। ঠিক বাক্যটি হওয়ার কথা, ‘‘সলিলের কথা-সুরে কোনও এক গাঁয়ের বধূর কথা’’। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।