Lok Sabha Election 2019

রাজনীতি এত সস্তা নয়, দয়া করে মাথায় রাখুন

দলবদল করলেন অর্জুন সিংহ। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি। অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছেন বা নজিরবিহীন কিছু করে ফেলেছেন অর্জুন, এমন নয়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০০:৩৪
Share:

অর্জুন সিংহ ও মুকুল রায়।

দলবদল করলেন অর্জুন সিংহ। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি। অত্যন্ত বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছেন বা নজিরবিহীন কিছু করে ফেলেছেন অর্জুন, এমন নয়। ভারতের রাজনীতিতে বা বাংলার রাজনীতিতে দলবদল কোনও বেনজির বা বিস্ময়কর ঘটনা নয়। কিন্তু দলবদলের পরে বা দলবদলের মরসুমে এমন কিছু মন্তব্য অর্জুন সিংহ করলেন, যা নিয়ে একটু বিশেষ কথার অবতারণা হতেই পারে।

Advertisement

অর্জুন সিংহ মূলত যাঁর হাত ধরে বিজেপিতে ঢুকলেন, সেই মুকুল রায়ও দীর্ঘদিন তৃণমূলেই ছিলেন। মুকুল আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে সামিল হয়েছেন। এ বার অর্জুন সিংহও সেই পথেই হাঁটলেন। তৃণমূলে থাকাকালীন মুকুলের সঙ্গে অর্জুনের সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’ ছিল, তা অনেকেরই জানা। মুকুলের দলত্যাগের পরে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে ‘গদ্দার’ বলেও মুকুলকে সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু এ বার সেই ‘গদ্দার’-এর হাত ধরেই দলবদল অর্জুনের, ‘গদ্দার’-কে এ বার ‘কৃষ্ণ’ বলে সম্বোধন। এই বিস্ময়কর দ্রুততায় বয়ান বদল দেখলে বোঝা যায়, কতটা সস্তা করে তোলা হয়েছে, রাজনীতিকে।

এই একটা মাত্র বয়ান নয়, আরও আছে। দলবদলের আগের দিনই মিডিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের সময় অর্জুন সিংহ সস্তা মন্তব্য করেছিলেন রাজনীতি সম্পর্কে সেখানে অর্জুন যা বলেছিলেন তার সার কথা হল— রাজনীতিতে ‘সম্মান’ বলে কিছু হয় না, রাজনীতি মানেই ‘সমঝোতা’। আমাদের রাজনীতিকদের এই সব বয়ানই আভাস দেয়, রাজনীতিকে কোন স্তরে নামানো হচ্ছে দিন দিন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে সাধারণ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এখন আর মোটেই খুব ইতিবাচক নয় এ দেশে।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন​

অর্জুন সিংহ প্রথম এরকম স্থূল ধাঁচের পরস্পরবিরোধী এবং সস্তা বয়ান দিলেন, এমন নয়। বাংলার এবং ভারতের রাজনীতিতে এমন নিদর্শন আরও ভূরি ভূরি মিলবে। মিলবে বলেই বোধহয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্য অনেক রাজনীতিক অনাকাঙ্খিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতে গিয়ে বলেন, এটা নিয়ে ‘রাজনীতি’ করবেন না। অর্থাৎ ‘রাজনীতি’ করা খুব একটা ভাল বিষয় নয়।

পৃথিবীতে আর এমন আর কোনও নিদর্শন কি রয়েছে, যেখানে কোনও ব্যক্তি নিজের কাজের ক্ষেত্রটা সম্পর্কে এমন নেতিবাচক ভঙ্গিমায় কথা বলেন?

আরও পড়ুন: পুলওয়ামা নিয়ে মমতার মন্তব্যের পরই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত, বিজেপিতে যোগ দিয়ে বললেন অর্জুন

কোনও সাংবাদিক কি কখনও কোনও অনভিপ্রেত ঘটনাকে রুখতে গিয়ে কাউকে বলেন— এটা নিয়ে সাংবাদিকতা করবেন না? কোনও শিক্ষক বা অধ্যাপক কি বলেন— এটা নিয়ে শিক্ষকতা বা অধ্যাপনা করবেন না? কোনও চিকিৎসক কি বলেন— এটা নিয়ে ডাক্তারি করবেন না? কোনও চাষি, কোনও আইনজীবী, কোনও শ্রমিক? বলেন না। কিন্তু রাজনীতিকরা এরকম বলেন, রাজনীতির জগৎটা সম্পর্কে ভারতীয় সমাজের ক্রমান্বয়ে তৈরি হতে থাকা নেতিবাচক মানসিকতাটার প্রমাণ মেলে এ সব মন্তব্যে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

যাঁরা রাজনীতিতে রয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশের মানসিকতা বা উদ্দেশ্য নিয়েই বিস্তর সংশয় ভারতীয় সমাজে। সেই সংশয় দূর করে ভাবমূর্তি ফেরানোর দায়টা রাজনীতিকদের নিজেদেরই। রাজনীতি শুধুমাত্র ক্ষমতার খেলা, রাজনীতি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা আদায়ের এবং ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার— এমন ধারনা দয়া করে আর দৃঢ়মূলে হতে দেবেন না সাধারণ মানুষের মনে। রাজনীতিতে, নীতি বা আদর্শের কোনও স্থান নেই, বৃহত্তর স্বার্থের কোনও বালাই নেই, সবই নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির খেলা— এইরকম ধারনা তৈরি হয়ে রয়েছে গোটা দেশেই। অকারণে যে তৈরি হয়নি, তার প্রমাণ অর্জুন সিংহদের এইসব মন্তব্যই। দয়া করে এতটা সস্তা স্তরে নামাবেন না রাজনীতিকে। ‘রাজনীতি’ শব্দটাকে গালিগালাজে পরিণত করবেন না। রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের অবস্থান বদল করেন শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে, নীতি বা আদর্শ বা বৃহত্তর স্বার্থের যে দু’একটা কথা তাঁরা বলেন, সেগুলো শুধুমাত্র কথার কথা— দেশের প্রত্যেকটা সাধারণ নাগরিক যখন এইরকম ভাবতে শুরু করেন রাজনীতিকদের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে, তখনই ‘রাজনীতি’ শব্দটা গালিগালাজের সমতুল হয়ে ওঠে। রাজনীতি কিন্তু আসলে এত সাধারণ বা এত সঙ্কীর্ণ বিষয় নয়। বৃহত্তর স্বার্থেও যে অনেক কিছুই আজও হয় রাজনীতিতে, এই বিশ্বাসটুকু সাধারণ জনতার মনে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন